E-Paper

নিকটাত্মীয়ের বাড়ি থেকেই পাকড়াও নয়ন

পুলিশের দাবি, ওই নার্সিং কলেজে থাকার সময়েই ম্যানেজারপাড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মী মার্ডির সঙ্গে আলাপ হয় নয়নের। লক্ষ্মীর বাড়িতে যাতায়াত করতেন নয়ন।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৮
মহম্মদবাজারে মা ও দুই নাবালক সন্তানকে খুনের ঘটনায় দুই অভিযুক্ত নয়ন বিত্তার ও সুনীল মির্ধা প্রিজ়ন ভ্যানে।

মহম্মদবাজারে মা ও দুই নাবালক সন্তানকে খুনের ঘটনায় দুই অভিযুক্ত নয়ন বিত্তার ও সুনীল মির্ধা প্রিজ়ন ভ্যানে। সিউড়ি আদালতে তোলার আগে। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, তাতেও রক্ষা নেই। পুলিশ ঠিক সেখানে পৌঁছে গিয়ে গ্রেফতার করল মহম্মদবাজার থানার ম্যানেজারপাড়া গ্রামে আদিবাসী মহিলা ও তাঁর দুই নাবালক ছেলেমেয়েকে খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বিত্তারকে। পুলিশ সেখান থেকেই গ্রেফতার করে। এ বার নয়নের চরম সাজা চান তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নয়নের বাবা-মাও চান, ছেলে এমন অপরাধ করে থাকলে তাঁর উপযুক্ত শাস্তি হোক।

মল্লারপুর থানার মাঠমহুলা গ্রামে বাড়ি নয়নের। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নয়নের স্ত্রী তাঁর ‘অত্যাচার’ সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েক বছর আগে চোদ্দো ও বারো বছর বয়সি দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি মহম্মদবাজার থানার বাতাসপুরে চলে গিয়েছিলেন। গ্রামের বাড়িতেও নয়ন বাবা-মাকে দেখভাল করতেন না। গ্রামে থাকলেও বাবা-মা এবং দুই ভাই ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে নয়নের বাক্যালাপ ছিল না।

পরিবার সূত্রের খবর, বছর দুয়েক আগে মল্লারপুরের একটি চালকলে গাড়ি বোঝাই করার সময় চালের বস্তা চাপা পড়ে গুরুতর জখম হন নয়ন। পায়ে অস্ত্রোপচার করার পরে চলাফেরার অসুবিধা নিয়ে ম্যানেজারপাড়া সংলগ্ন একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে সাফাই কর্মীর কাজ নেন। নার্সিং কলেজের একটি ঘরে নয়ন থাকতেন। দু কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ি মাঠমহুলায় মাঝে মধ্যে আসা যাওয়া করতেন।

পুলিশের দাবি, ওই নার্সিং কলেজে থাকার সময়েই ম্যানেজারপাড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মী মার্ডির সঙ্গে আলাপ হয় নয়নের। লক্ষ্মীর বাড়িতে যাতায়াত করতেন নয়ন। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীর বাড়িতে মাঠমহুলার বাসিন্দা এক মাছ বিক্রেতারও যাতায়াত ছিল। সেই মাছ বিক্রেতা আবার নয়নের ছেলেবেলার বন্ধু। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, খুনের ঘটনায় পুলিশ প্রথমে আদিবাসী মহিলার বাড়িতে কাদের কাদের যাতায়াত ছিল, তা জানার চেষ্টা করে। গ্রামের লোকজন ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসা করে পুলিশ মাছ বিক্রেতার নাম পায়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নয়ন বিত্তার ও সুনীল মির্ধা-সহ আরও কয়েক জনের নাম পায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ দিয়াড়া গ্রামে ওই নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে নয়ন পৌঁছে যান সাইকেলে চেপে। সেখানেই
দুপুরে খাওয়াদাওয়া সারেন। বিকেল ৫টা নাগাদ পুলিশ গ্রামে গিয়ে নয়নকে গ্রেফতার করে। তাঁর কাছ থেকে নিহত আদিবাসী মহিলার মোবাইল উদ্ধার হয়। ওই পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘নয়নকে দেখে আমরা বুঝতেই পারিনি, ও এত বড় একটা অপরাধ করে এখানে এসেছে! এতটাই স্বাভাবিক ছিল ও।’’ নয়নের সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছেন সুনীল মির্ধা নামে এক যুবক সুনীলের বাড়ি মল্লারপুরের ডোমপাড়ায়। নার্সিং কলেজে কাজ করার সূত্রেই সুনীলের সঙ্গে আলাপ হয় নয়নের।

নয়নকে পুলিশ গ্রেফতার করায় খুশি তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নয়নের শ্বশুর ও শাশুড়ি হারাধন বিশ্বাস ও লতিকা বিশ্বাস বলেন, ‘‘এর আগে আমার মেয়ের উপরে খুব অত্যাচার করেছে ও। এখন শুনছি, মা ও দুই ছেলেমেয়েকে খুনের ঘটনায় ধরা পড়েছে। নয়নের চরম শাস্তি চাই আমরা।’’ নয়নের বাবা চন্দন বিত্তার ও মা শোভা বিত্তারও ছেলের পক্ষ নিচ্ছেন না। আইন অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন দু’জনেই। মাঠমহুলা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য অজয় মণ্ডল বলেন, ‘‘নয়ন আগে স্ত্রীর উপরে অত্যাচার করত। অনেকবার পঞ্চায়েতে মীমাংসা করেছি। আমরাও চাই আইন অনুযায়ী নয়নের উপযুক্ত শাস্তি হোক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

mallarpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy