Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লাভপুরে তৃণমূল কর্মী খুনে আটক ১ 

এ দিন নিহতের বাড়ি যান জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন।

ব্যথিত: নিহত সাগর শেখের বাড়িতে অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার লাভপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যথিত: নিহত সাগর শেখের বাড়িতে অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার লাভপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৪
Share: Save:

তৃণমূল কর্মী খুনে দলেরই এক কর্মীকে আটক করল পুলিশ। ওই ঘটনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বই মাথাচাড়া দিয়েছে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, গোটাটাই সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের কাজ। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও অবশ্য পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। এ দিন নিহতের বাড়ি যান জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মেয়ে রোজিকে নিয়ে কীর্ণাহার থেকে ইদের বাজার সেরে মোটরবাইকে লাভপুরের কাজিপাড়া গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন তৃণমূলের ঠিবা অঞ্চল কমিটির সদস্য সাগর শেখ। লাভপুরের কাঁদরকুলো গ্রাম লাগোয়া কুঁয়ে নদী বাঁধের উপরে দুষ্কৃতীরা তাঁর মোটরবাইক আটকায়। মেয়েকে ঝোপে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সাগরকে লক্ষ্য করে গুলি-বোমা ছুড়ে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। রোজি ছুটি গিয়ে স্থানীয় একটি মুদিখানায় খবর দেয়। এলাকার লোকজন ছুটে গিয়ে দেখেন সাগরের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। মঙ্গলবার নিহতের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, কথা বলার মতো অবস্থায় নেই সাগরের স্ত্রী রেখা বিবি এবং পরিবারের লোকেরা। সাগরের দুই ছেলে, তিন মেয়ে। বগতোড় গ্রামে সাগরের কাঠচেরাই মিল রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রোজির চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ ছিল এ দিনও। রোজির কথায়, ‘‘অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। মোটরবাইক থামানো দেখেই ভয় পেয়ে বাবাকে বাঁচাতে ছুটে খবর দিতে গিয়েছিলাম।’’ সোমবার রাতেই স্থানীয় বলরামপুর গ্রাম থেকে এক জনকে আটক করে পুলিশ। এলাকায় তিনি তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত।

এমন ঘটনার পরে দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব মাথা চাড়া দিয়েছে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের শেষের দিক থেকে কয়েক জনকে নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াত সাগর। সিপিএমের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর নেওয়ার মুখ হয়ে উঠেছিল। দল ক্ষমতায় আসার পরে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা সংক্রান্ত ব্যাপারে এলাকারই কিছু লোকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তার জেরে বেশ কয়েক জন গ্রাম ছাড়া হয়ে রয়েছেন বলেও ওই সূত্রটির দাবি। এর আগেও মাস ছয়েক আগে সাগরকে লক্ষ করে গুলি ছোড়া হয়েছিল। সে যাত্রায় গুলি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় বেঁচে যায়। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, লাভপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিধায়ক মনিরুল ইসলামের অনুগামীদের সঙ্গে তাঁরই রাজনৈতিক গুরু আব্দুল মান্নানের অনুগামীদের বিবাদ রয়েছে। মান্নান শিবিরের অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাগর। সেই সুবাদে মনিরুলের মদতে মাস দেড়েক আগে পুলিশ সাগরের বাড়িতে তল্লাশির নামে ভাঙচুর চালায় বলে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে। পুলিশ এবং দলীয় নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ মানেনি। নেতৃত্বের মধ্যে বিরোধের কথাও উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা নেতারা।

তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমাদের কোনও গোষ্ঠী নেই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ তাই ভিত্তিহীন। সাগর আমাদের ভাল সংগঠক ছিল। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সেই আক্রোশেই ওকে খুন করেছে।’’ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পল্টু কোঁড়ার জবাব, ‘‘তৃণমূল নেতারাই তো বলেন, আমাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। খুনের বেলায় কী করে আমাদের খুঁজে পাচ্ছেন? নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দায় আমাদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে।’’

এ দিন এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীদের সঙ্গে গ্রামে যান দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তিনি পরিবারে সঙ্গে কথা বলেন। স্ত্রী এবং মেয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘যে বা যারা খুন করেছে, তাদের এক জনকেও ছাড়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Murder Labpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE