Advertisement
১৮ মে ২০২৪
দাবি স্কুল শিক্ষকের

বিজেপি করি, তাই তৎপরতা

স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে তিনি বিজেপির হয়ে ভোটে প্রার্থী হওয়ার পরে। তড়িঘড়ি সেই অভিযোগের তদন্তও করানো হয়েছে। এর পরে দেখা যায়, ওই স্কুলশিক্ষককে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর তার পরেই বিজেপি প্রার্থী ওই স্কুলশিক্ষককে তলব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের!

ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের আগে বুথ তৈরিতে ব্যস্ত বিজেপি কর্মীরা। সাঁইথিয়ায়। ছবি: অনির্বাণ সেন।

ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের আগে বুথ তৈরিতে ব্যস্ত বিজেপি কর্মীরা। সাঁইথিয়ায়। ছবি: অনির্বাণ সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৬
Share: Save:

স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে তিনি বিজেপির হয়ে ভোটে প্রার্থী হওয়ার পরে। তড়িঘড়ি সেই অভিযোগের তদন্তও করানো হয়েছে। এর পরে দেখা যায়, ওই স্কুলশিক্ষককে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর তার পরেই বিজেপি প্রার্থী ওই স্কুলশিক্ষককে তলব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের!

ঘটনাক্রমের এই আশ্চর্য সমাপাতনের মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধই পাচ্ছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের দাবি, পুরভোটের এই সময়পর্বে সাঁইথিয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে সংসদের এই হঠাৎ ‘সক্রিয়তা’র নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার গল্পই জোর পাচ্ছে। সাঁইথিয়ায় পুরভোটে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘৮ নম্বর ওয়ার্ডে সুশান্ত বেগ দেবে বুঝতে পেরে প্রথম দিন থেকেই যত রকম উপায়ে পেরেছে, তৃণমূল বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সংসদের অনুমতির প্রয়োজন না থাকলেও মনোনয়নপত্র স্ক্রুটনির সময় ওই যুক্তি দেখিয়ে তৃণমূল সুশান্ত রায়ের প্রার্থীপদ বাতিলের চেষ্টা করেছিল। এ সব থেকেই প্রমাণ হয়, সুশান্তর বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, এবং যে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সবই হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই।’’

বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও বিজেপি-র ওই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন অনুব্রতর ভাগ্নে তথা জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, সাঁইথিয়া ১১ নম্বর ওয়ার্ডে স্থিত রুবি রানি সিংহ প্রাথমিক স্কুলের ওই শিক্ষককে গত দিন সঙ্গত কারণেই সিউড়িতে তলব করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়ে বলছি, সুশান্তবাবুর ভোটে দাঁড়ানোর সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও রকম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সংসদ বরদাস্ত করে না। সুশান্তবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঢাকতে নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সুশান্তবাবু ঠিকমতো স্কুল না করলে তাঁকে বদলি করে দেওয়ার কথা অনুব্রত মণ্ডল ১২ এপ্রিল বলেছিলেন। কিন্তু, সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তারও অনেক আগের। স্কুলের হাজিরা খাতায় সুশান্তবাবুর ছুটির তালিকা বেশ দীর্ঘ। বহু ক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার সময়ের উল্লেখ পর্যন্ত নেই।’’ সংসদ সভাপতি এ দিন জানান, সুশান্তবাবুকে আত্মপক্ষ সমর্থনের আরও একটি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ মে তাঁকে সংসদ সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে হবে।

সংসদ সূত্রের খবর, গত ২৫ মার্চ (মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন) সংসদের কাছে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ নিয়মিত স্কুল না করার লিখিত অভিযোগ করেন। ডিআই অলোক মহাপাত্র সংশ্লিষ্ট এসআই-কে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। অলোকবাবুর দাবি, ‘‘৮ এপ্রিল এসআই-এর দেওয়া তদন্ত রিপোর্টে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।’’ ঘটনা হল, ওই ২৫ মার্চই পুরভোটে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে সুশান্তবাবু সংসদের কাছে নিজের গচ্ছিত ছুটি থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি চেয়ে একটি আবেদন করেন। অলোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সুশান্তবাবুকে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও সরকারি কাজে নেওয়া হয়নি। ত্রুটিপূর্ণ আবেদনের জন্যই সুশান্তবাবুকে ওই ছুটি দেওয়া যায়নি। তাই গত ২ এপ্রিল তাঁকে স্কুলের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।’’ সুশান্তবাবু গত ৪ এপ্রিল স্কুলে যোগ দেন। ওই দিনই সংসদে তিনটি আবেদনপত্রও জমা দেন।

সংসদ সূত্রের খবর, প্রথম আবেদনপত্রে সুশান্তবাবু জানান, দুর্ঘটনাজনিত কারণে গত ২৭ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি স্কুল যেতে পারেননি। দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি কাজে যোগ দেওয়ার আবেদন জানান। তৃতীয় চিঠিতে বাবা-মার চিকিৎসার জন্য ৬ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি চান। সংসদ সভাপতির দাবি, ‘‘প্রায় একই সময়পর্বের জন্য এক এক বার এক এক রকম কারণ দেখিয়ে ছুটির আবেদন করার জন্যই ওই স্কুলশিক্ষকের ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। ঠিক কী কারণে তিনি এমন আবেদন করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে ক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যই সুশান্তবাবুকে বৃহস্পতিবার সংসদে তলব করা হয়েছিল।’’ সুশান্তবাবু বাবার চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে না গেলেও ডিআই-এর নির্দেশ মতো ওই দিন সভাপতির সামনে হাজির হয়েছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নীহারিকা সাহা এবং এসআই সৌগত ভট্টাচার্য। রাজাবাবুর দাবি, প্রধান শিক্ষিকাও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে নানা অভিযোগ করেছেন। কিন্তু, আগে কেন ওই প্রধান শিক্ষিকা সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেননি? সংসদ সভাপতির দাবি, তার জন্য নীহারিকাদেবীর বিরুদ্ধেও সংসদ ব্যবস্থা নেবে।

এ দিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এবং তৃণমূল নেতাদেরও দাবি, সুশান্তবাবু নিয়মিত স্কুলে যান না। উল্টে, নিজের ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা নিয়েই পড়ে থাকেন। তার জন্য ওই স্কুলের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। ওই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সুশান্তবাবু দাবি করেছেন, ‘‘আসলে বিজেপি করি তো, তাই আমার বিরুদ্ধে ওরা উঠেপড়ে লেগেছেন। আমি নিয়ম মেনে আমার প্রাপ্য ছুটি নিয়েছি। ব্যস্ততার কারণে হয়তো অনেক দিন খাতায় সময় লিখে সই করা হয় না। এমনটা অনেকেই করে থাকেন। আগামী ৫ মে ডিআই এবং সংসদ সভাপতির কাছে সব কিছুর জবাব দিয়ে আসব।’’ নীহারিকাদেবী গোটা ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, অনুব্রত বলেন, ‘‘সে দিন যা বলেছিলাম, সংবাদমাধ্যম তার ভুল ব্যাখ্যা করেছে। এক জন শিক্ষক কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। সেই কথাই বলেছি মাত্র। আর প্রশাসন নিজের কাজ করছে। এ নিয়ে আমি কী বলব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE