Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Drainage System

নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল, ক্ষোভ শহরে

ঘরে ঘরে পৌঁছেছে পানীয় জল। কিন্তু মেটেনি নিকাশি সমস্যা।

আটকে: রাসমঞ্চের সামনে নালার হাল এমনটাই। নিজস্ব চিত্র

আটকে: রাসমঞ্চের সামনে নালার হাল এমনটাই। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ অধিকারী
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২৭
Share: Save:

শহরের অবস্থা পাল্টেছে অনেকটা। কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে অলিগলিতে। ঘরে ঘরে পৌঁছেছে পানীয় জল। কিন্তু মেটেনি নিকাশি সমস্যা। নালার আনাচে কানাচে উঁচু হয়েছে জঞ্জালের স্তূপ। নিকাশি কার্যত বেহাল।

শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাদাকুলির বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্গন্ধের কারণে দরজা জানালা এখনও বন্ধ রাখতে হয়। নামেই নিকাশি নালা রয়েছে এখানে। বাড়ির জল নালায় যায় না। উল্টে নালার জল বাড়িতে ঢুকে যায়। বার বার কাউন্সিলরকে বলেও লাভ হয়নি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আবার পুরভোট চলে এল। কবে মিটবে সমস্যা!’’

পুরসভার ১৯টি ওয়ার্ডের প্রায় প্রত্যেকটিতেই নিকাশি সমস্যা রয়েছে। শহরবাসীর একাংশের দাবি, বাড়ি নির্মাণ পুরআইন মেনে না হওয়ায় এই সমস্যা। প্রয়োজনমতো জমি ছেড়ে বাড়ি না করায় নিকাশি সমস্যা ক্রমেই তীব্র আকার নিচ্ছে। এই সমস্যার জন্য পুরসভার নির্মাণ বিভাগের দিকেই আঙুল তুলেছেন তাঁরা। সমস্যা সমাধানে পুরসভা উদাসীন বলেও অভিযোগ। শহরবাসীর একাংশের দাবি, ‘‘কর্মীরা প্রতিদিন সাফাই না করায় নালা বুজে নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’’

পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখনও কাঁচা নালা দিয়েই জল বেরয়। কোথাও আবার সেটাও নেই। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বৈলাপাড়া এলাকায় নিকাশি নালা নেই বলেই অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডল বলেন, “এলাকায় নিকাশি নালা নেই। তাই বাড়িতেই কয়েকটি সোকপিট বানিয়েছি। বর্ষাকালে রাস্তা পারাপার মুশকিল হয়ে পড়ে। অনেক সময় নালা উপছে নোংরা জলে রাস্তা ভেসে যায়। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।”

বাস্তব বলছে, বিষ্ণুপুর শহরের হাইড্রেনগুলির অবস্থাও খারাপ। রসিকগঞ্জ, গোপেশ্বরপল্লি, চিঁড়াকল, আদালত চত্বরের মতো এলাকার জল বেরোয় ঝাপড় মাঠের হাইড্রেন দিয়ে। সেই নিকাশি নালা এখনও কাঁচা থেকে গিয়েছে। নালাটিও সরু। বর্ষাকালে জল উপচে বাড়িতে ঢুকে যায় বলে অভিযোগ অনেকের।

১ নম্বর ওয়ার্ডের কাটানধার, বাসন্তীতলা, মনসাতলা, ২ নম্বরের গড়দরজা, সংকটতলা, ৪ নম্বরের মদনমোহন রোড, শাঁখারিবাজার, ৫ নম্বরের হাজরাপাড়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাদাকুলি বাউরিপাড়া, ষড়ভুজ মন্দির এলাকা, মল্লেশ্বর, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বোলতলা থেকে পাটরাপাড়া, বড়কালীতলা, জেলেপাড়া, ভুঁইয়া বাড়ি, সাক্ষীগোপাল পাড়া, ধূলাপাড়া দুর্গামন্দির থেকে কুরবানতলা— নিকাশি-সমস্যা আছে অনেক জায়গাতেই।

মীরা দে, পূর্ণিমা মণ্ডলের মতো শহরের অনেকেই নিকাশি সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বোলতলা থেকে সোনামুখী মোড়ের নিকাশি নালায় নোংরা জল জমে।

গাবডোবা, গোপালপুর, হিকিমডাঙা এলাকায় নিকাশি নালাই নেই বলে জানাচ্ছেন খোদ স্থানীয় কাউন্সিলর মমতা কুণ্ডু। তিনি বলেন, “গাতাঁত বাঁধ এবং কালিন্দি বাঁধের জল বেরনোর উপযুক্ত নালা নেই। ওয়ার্ডের অধিকাংশ নিকাশি নালা এখনও পাকা করা যায়নি। স্থানীয় মানুষের কাছে আমরা অপ্রিয় হয়ে পড়ছি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত বড় ওয়ার্ডে প্রতিদিন এক জন সাফাইকর্মী দিয়ে কী ভাবে ভাল পরিষেবা দেওয়া সম্ভব!”

১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তুঁতবাড়ি, বাউরিপাড়া, বোষ্টমপাড়ার নিকাশি নালায় জঞ্জাল জমে রয়েছে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্র স্ট্যাচু থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার রাস্তার পাশের নিকাশি নালায় জল জমে থাকে। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, নিয়ম মেনে ড্রেন তৈরি হলে এ রকম হত না।

বিষ্ণুপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে পুর প্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তব্য বলেছেন। সমস্যা বুঝতে পারছি। ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকায় আবর্জনা ফেলার অসুবিধে হচ্ছে। সব ওয়ার্ডের নালা সংস্কারের কাজ সমান ভাবে করা যাচ্ছে না। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সব স্বাভাবিক হবে বলে আমার ধারণা।”

পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর দেবপ্রিয় বিশ্বাসের মন্তব্য, “নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে লজ্জা লাগে। নিয়মিত সাফাই কর্মী না পেলে কাউন্সিলর কী করবেন? এ ভাবে চলতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drainage System Bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE