Advertisement
E-Paper

ফলন বিপুল, দর না-মেলায় হতাশ আলুচাষিরা

খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এখন আলুর প্যাকেট (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০টাকায়। এই দামে ৫০ হাজার টাকাও উঠবে না বলে তাঁর দাবি। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৮:০২
আলু তোলার কাজ চলছে। দর নেই বলে বাড়িতেই মজুত করা হচ্ছে আলু।  চাপলা গ্রামে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

আলু তোলার কাজ চলছে। দর নেই বলে বাড়িতেই মজুত করা হচ্ছে আলু। চাপলা গ্রামে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

মাঠ থেকে আলু তোলা শুরু হয়েছে জোর কদমে। কিন্তু, উৎপাদিত আলুর বাজারদর এ বার এতটাই কম, তাতে চাষের খরচটুকু ওঠা নিয়েও সংশয়ে জেলার আলুচাষিরা।

বৃহস্পতিবার সকালে তার আঁচ পাওয়া গেল খয়রাশোলের পারুলবোনা, চাপলা, মুক্তিনগরের মতো গ্রামের আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে। বাজার কমে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের আক্ষেপ রয়েছে উৎপাদন কম হওয়া নিয়েও। এ দিন পারুলবোনায় নিজের খেত থেকে আলু তুলছিলেন সস্ত্রীক স্বপন ব্যাপারী। ওঁদের সাহায্য করছিলেন তিন জন মহিলা শ্রমিক। যন্ত্রের সাহায্যে (পটেটো ডিগার) আলু তুলতে তুলতে ওই চাষি জানালেন, তিন বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন। খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এখন আলুর প্যাকেট (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০টাকায়। এই দামে ৫০ হাজার টাকাও উঠবে না বলে তাঁর দাবি।

একই সংশয়ে পাশের গ্রাম চাপলার চাষি বাপি প্রামাণিক। তিনি এ বার ৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। বললেন, ‘‘পঞ্জাব থেকে আলুর বীজ, অনুখাদ্য, মহার্ঘ সার আর শ্রম ধরে চাষ করতে খরচ হয়েছে এক লক্ষেরও বেশি। কিন্তু, আলুর যা দর, তাতে সেই খচরটুকুই উঠবে না। লাভ তো দূরের কথা!’’ ওই গ্রামেরই আলুচাষি বিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘বাজারদর নেই বলে বাড়ির খামারে আলু ঢেলে রেখেছি। কিন্তু, কত দিন আলু ও-ভাবে ফেলে রাখতে পারব জানা নেই।’’

আলু চাষের জন্য সাঁইথিয়া বা মহম্মদবাজারের মতো বিখ্যাত নয় খয়রাশোল বা দুবরাজপুর। তবে, অজয় ও হিংলো নদের মধ্যবর্তী খয়রাশোলের বিস্তীর্ণ অংশ যেমন মুক্তিনগর, পারুলবোনা, চাপলা, রতনপুর এবং দুবরাজপুরের দেবীপুর চর, পালাশডাঙায় যথেষ্ট পরিমাণ আলু চাষ হয়ে থাকে। এক এক জন চাষি আট, দশ বিঘা বা তার থেকেও বেশি জমিতে আলু চাষ করেন।খয়রাশোল ব্লক কৃষি দফতরের তথ্য বলছে, ব্লকে ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। মূলত জ্যোতি এবং পোখরাজ। কিন্তু, গড়ে চার টাকা কিলো দর-ই ভাবাচ্ছে চাষিদের। উৎসাহ হারিয়ে কেউ কেউ এখনও আলু তোলার কাজে হাত দেননি।

চাষিদের দাবি, গতবার আলুর প্যাকেট পিছু দর ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ফলে, এখন চাষের খরচ তোলাই তাঁদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা। সরকার কুইন্টাল প্রতি ৬৫০ দর দিয়েছে। সেটা অন্তত ৮০০ টাকা না হলে (বস্তা পিছু ৪০০ টাকা) ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। চাষিরা আরও জানান, খয়রাশোল এলাকায় হিমঘর না-থাকাটও বড় সমস্যার। এখান ৫০ কিলোমিটার দূরের সাঁইথিয়া বা মহম্মদবাজার হিমঘরে নিয়ে যাওয়ার বিস্তর খরচ।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলায় মোট ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। এ বার শীতকালে যেহেতু বৃষ্টি হয়নি, রোগ বা পোকার আক্রমণ ছিল না। শংসিত বীজ যাঁরা ব্যবহার করেছেন, তাঁরা ভাল ফলন পেয়েছেন। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে গড়ে ১০০ বস্তা (৫০ কেজি করে)। কিন্তু লাভজনক দর না-থাকায় চাষিরা সমস্যায়।

চাপলা গ্রামের সুশান্ত মণ্ডল, মুক্তিনগরের দিগেন মণ্ডল, দুবরাজপুরের দেবীপুর চরের আলুচাষি সঞ্জয় মণ্ডল, পলাশডাঙার ব্রজ বিশ্বাসরা জানাচ্ছেন, এই অঞ্চলে ধান চাষ খুব একটা বেশি হয় না। কিন্তু, আনাজ চাষ বিখ্যাত। তবে বেশি লাভের আশায় অক্টোবরের শেষ থেকে চাষিদের বড় অংশ আলু চাষ করেন। গত বার বৃষ্টিপাত সেভাবে হয়নি বলে চাষ আরও বেশি হয়েছে। ‘‘কিন্তু সেখানেই মনে হচ্ছে বড় ভুল হয়ে গেল।’’—আক্ষেপ আলুচাষিদের।

khayrasole potato farmers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy