Advertisement
E-Paper

‘বাচ্চাটা গেল, আমার বউও’

হাসপাতালের সুপার অবশ্য দাবি করেছেন, সেখানে কোনও আয়া নেই। পেটে চাপ দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। তবে, বুলার মৃত্যু হয়েছে গর্ভথলির জল রক্তে মিশে গিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:২৭
ক্ষোভ: প্রসূতি ওয়ার্ডের বাইরের করিডোরে। (ইনসেটে) মৃত সদ্যোজাতের বাবা সুশান্ত বারিক। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভ: প্রসূতি ওয়ার্ডের বাইরের করিডোরে। (ইনসেটে) মৃত সদ্যোজাতের বাবা সুশান্ত বারিক। নিজস্ব চিত্র

প্রান্তিক চাষি। অনেক কষ্টে ‘প্রাইভেট চেম্বারে’ চিকিৎসককে দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু বেসরকারি কোথাও প্রসব করানোর সঙ্গতি তাঁদের ছিল না। পাত্রসায়রের জামকুড়ি অঞ্চলের বলরামপুর গ্রামের সুশান্ত বারিক অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বুলাকে রবিবার সকালে ভর্তি করিয়েছিলেন বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সোমবার বুলা এবং তাঁদের সদ্যোজাত শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। টেবিলের উপরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সুশান্ত। তাঁর মাথায় হাত রেখেছেন হাসপাতালের সুপার সুব্রত রায়। তবে সেই সমস্ত দৃশ্য ছাপিয়ে উঠে এসেছে অন্য প্রসূতিদের পরিজনদের অভিযোগ।

সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের ‘লগবুক’ থেকে জানা যাচ্ছে, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোমবার ১১টা ৩ মিনিট পর্যন্ত ২২টি শিশুর জন্ম হয়েছে সেখানে। কিছু স্বাভাবিক প্রসব। কিছু অস্ত্রোপচার করে। তার মধ্যে ১১টা ৩ মিনিটে মৃত্যু হয় বুলা ও সুশান্তর সদ্যোজাত কন্যাসন্তানের। তার গলায় নাড়ি পেঁচিয়ে গিয়েছিল। বুলার ননদ শ্যামলী দাসের অভিযোগ, বাচ্চা যখন বেরিয়ে আসছে, তখন কোনও চিকিৎসক ওয়ার্ডে ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘‘পেটের মধ্যে হাঁটু দিয়ে চাপ দিচ্ছিল আয়া আর নার্সেরা।’’

হাঁটু দিয়ে পেটে চাপ দেওয়ার অভিযোগ অন্য কয়েক জন প্রসূতির পরিজনেরাও এ দিন করেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের আঙারিয়ার ময়না মণ্ডলের পরিজন ওই ওয়ার্ডে ভর্তি। তিনি বলছিলেন, ‘‘আয়া আর নার্সেরা হাঁটু দিয়ে পেটে চাপ দিচ্ছে। যন্ত্রণায় কাতরে উঠলেই চড়-থাপ্পড় মারছে।’’ নিজের চোখে তিনি হাঁটু দিয়ে প্রসূতিদের পেটে চাপ দিতে দেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই জায়গায় উপস্থিত বিষ্ণুপুরের মধুমিতা বাউড়ি। পশ্চিম মেদিনীপুরের ছোট আঙারিয়ার মর্জিনা বিবি বলছেন, ‘‘সময় মতো ডাক্তার এলে তো এই অত্যাচারগুলো হয় না। এ রকম হলে তো বাড়িতে প্রসব করানোই ভাল।’’

হাসপাতালের সুপার অবশ্য দাবি করেছেন, সেখানে কোনও আয়া নেই। পেটে চাপ দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। তবে, বুলার মৃত্যু হয়েছে গর্ভথলির জল রক্তে মিশে গিয়ে। বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক জানান, এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল তা তিনি জানেন না। তবে প্রসবের সময়ে পেটে জোরে চাপ দিলে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানিয়েছেন রমেন্দ্রনাথবাবু। হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, এই অভিযোগের তদন্ত করে দেখা হবে। আর তাঁর দাবি, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে কোনও আয়া নেই।

বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটিতে চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ প্রায়শই ওঠে। কিছু দিন আগেই বিডিও (বিষ্ণুপুর) বুকে যন্ত্রণা নিয়ে জরুরি বিভাগে গিয়ে বিনা চিকিৎসায় পড়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথবাবু জানান, ওই ঘটনায় শো-কজ়ের উত্তর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। কিন্তু তাতে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট নয়। শো-কজ়ের উত্তর পুরো ঘটনার পর্যালোচনা-সহ পাঠানো হচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে।

প্রশাসনের আধিকারিক থেকে সাধারণ মানুষ— অভিযোগ আসছে সমস্ত স্তর থেকেই। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষ বলছেন, ‘‘বিষ্ণুপুরে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে।’’ তবে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কোতুলপুরের বিধায়ক শ্যামল সাঁতরার দাবি, রাজ্য সরকারের দিক থেকে কোনও খামতি নেই। গাফিলতি চিকিৎসকদেরই বলে অভিযোগ করছেন তিনি। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘সুপারকে বলেছি ডিউটির রোস্টার দিতে। আমি এ বার থেকে যখন খুশি গিয়ে পরিদর্শন করে আসব।’’

Death Medical negligence Newborn Child
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy