Advertisement
০১ ডিসেম্বর ২০২৩

কত ধানে কত ছাঁট, গোলমাল

ধানের মধ্যে ধুলো আর আগড়া (যে ধানের খোলের ভিতরে চাল থাকে না) মিশে থাকে। ধান ভেঙে চাল করার সময়ে সেগুলো বাদ যায়। তাই ধান কিনতে গিয়ে চালকল গড়ে কিছুটা করে ওজনে কম ধরে।

ওজন: চিরুডি পঞ্চায়েতে চলছে ধান কেনা। নিজস্ব চিত্র

ওজন: চিরুডি পঞ্চায়েতে চলছে ধান কেনা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৮
Share: Save:

ধানের মধ্যে কতটা ধুলো রয়েছে, তা নিয়ে তর্জায় সরগরম পুরুলিয়া। এই নিয়ে বিতর্কে গত সপ্তাহে এক দিন ধান কেনার কাজ মাথায় উঠেছিল বান্দোয়ানের চিরুডিতে। ভসমকাটা গ্রামের চাষি সুভাষ মাহাতো, তালপাত গ্রামের রতন মাহাতো, সুমিত মাহাতোরা বলেন, ‘‘ধানের নমুনা হাতে নিয়েই চালকলের লোকজন বলে দিলেন, কুইন্টাল পিছু আট কেজি করে বাদ দিতে হবে। ওইটুকু ধান দেখে কী করে বোঝা যাবে কতটা ছাঁট আছে?’’ চাষিরা জানিয়ে দেন, এমনটা চললে তাঁরা ধান বিক্রি করবেন না। শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় বিডিও-কে। রফা হয়, প্রতি কুইন্টালে ছাঁট হিসাবে ছ’কেজি করে বাদ দেওয়া হবে।

ধানের মধ্যে ধুলো আর আগড়া (যে ধানের খোলের ভিতরে চাল থাকে না) মিশে থাকে। ধান ভেঙে চাল করার সময়ে সেগুলো বাদ যায়। তাই ধান কিনতে গিয়ে চালকল গড়ে কিছুটা করে ওজনে কম ধরে। ঝালদা ১ ব্লকের দাঁতিয়া গ্রামের অশ্বিনী মাহাতোর দাবি, প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ব্লক সদরের কিসান মান্ডিতে ধান নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বলা হয়, ওজনে কুইন্টাল পিছু সাড়ে ৭ কেজি করে কম ধরা ধরা হবে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মেপে না দেখেই এটা কী ভাবে ঠিক করা হচ্ছে? টাকার দরকার বলে নেহাত বাধ্য হয়ে বিক্রি করেছি।’’ মাঠারি গ্রামের গণপতি মাহাতো বলেন, ‘‘দূরে মান্ডি। গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয়। তার উপরে বলছে ৮ কেজি করে বাদ দেবে। আমাদের চলবে কী করে?’’

খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাবাজার, পুরুলিয়া ১, বলরামপুর, পুরুলিয়া ২, বান্দোয়ান-সহ বিভিন্ন ব্লক থেকে ধানের ছাঁট বাদ দেওয়া নিয়ে ঝামেলার খবর এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরে আলোচনায় বিষয়টি মিটে গিয়েছে। তবে বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো দাবি করেছেন, এই বিষয়ে কোনও একটা স্পষ্ট নিয়ম বেঁধে দেওয়া হোক। অল্প দামে ফড়েদের কাছে ধান বেচা রুখতে যেমন কড়া হয়েছে প্রশাসন, তেমনই কড়া হোক চালের থেকে ইচ্ছামতো ছাঁট বাদ দেওয়ার ব্যাপারেও।

জেলা খাদ্য নিয়ামক বাপ্পাদিত্য চন্দ্র বলেন, ‘‘বাদ নিয়ে জেলার নজরদারি কমিটির একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে।’’ তিনি জানান, নিয়ম হচ্ছে—চাষির আনা ধান থেকে কুড়ি কেজি নমুনা নেওয়া হবে। দশ কেজি চাষি নিজের হাতে তুলে দেবেন। বাকি দশ কেজি চালকলের প্রতিনিধি তুলে নেবেন। দু’টি মিশিয়ে বেছে দেখা হবে কতটা ধুলো, মাটি বা আগড়া রয়েছে। সেই অনুপাতে মোট ধান থেকে ছাঁট বাবদ বাদ ধরা হবে। বাপ্পাদিত্যবাবু বলেন, ‘‘চালকলগুলিকে এই কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’’

জেলার চালকল মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক মনোজ ফোগলা বলেন, ‘‘আমরা কয়েক দিন আগে পুরুলিয়া ১ ব্লকের একটি পঞ্চায়েতে সকালে শুরু করে অনেক রাত পর্যন্ত ধান কিনেছি। এত জন বিক্রি করতে আসছেন, সবার ধান আলাদা আলাদা করে নিয়ে মেপে ছাঁট বাছা সম্ভব নয়। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনায় একটা হিসেব ঠিক করা যেতে পারে। কোনও চাষি আপত্তি করলে তখন মাপা যাবে।’’ মনোজবাবুর দাবি, এই সমস্ত নিয়ে কোনও জায়গায় ঝামেলা হয়েছে বলে তাঁদের কাছে খবর নেই। তিনি বলেন, ‘‘নিয়মকানুনের ব্যাপারে আমরা চালকলগুলিকে
জানিয়ে দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE