Advertisement
E-Paper

জট কেটে জল এল বিদ্যুৎকেন্দ্রে

১২ কিলোমিটার পথ পেরোতো সময় লাগল তিন বছর! জট কেটে ১২ কিলোমিটারের পাইপলাইন দিয়ে অবশেষে দামোদরের জল এসে পৌঁছল রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিজার্ভারে। শনিবার দুপুরে জল নিয়ে আসার পরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেকটাই তাঁরা এগিয়ে গেলেন বলে দাবি করেছেন ডিভিসি-র এই প্রকল্পের কর্তারা।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:১১
দীর্ঘ টালবাহানার পরে দামোদর নদ থেকে রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিজার্ভারে শনিবার ঢুকল জল।—নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘ টালবাহানার পরে দামোদর নদ থেকে রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিজার্ভারে শনিবার ঢুকল জল।—নিজস্ব চিত্র

১২ কিলোমিটার পথ পেরোতো সময় লাগল তিন বছর!

জট কেটে ১২ কিলোমিটারের পাইপলাইন দিয়ে অবশেষে দামোদরের জল এসে পৌঁছল রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিজার্ভারে। শনিবার দুপুরে জল নিয়ে আসার পরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেকটাই তাঁরা এগিয়ে গেলেন বলে দাবি করেছেন ডিভিসি-র এই প্রকল্পের কর্তারা।

এই প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (প্রোজেক্ট হেড) সব্যসাচী মৈত্র বলেন, ‘‘ওয়াটার করিডর তৈরি করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টানাপড়েন চলছিল। সব সমস্যা কাটিয়ে শনিবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ রিজার্ভারে জল আসতে শুরু করেছে। ঘটনাটি আমাদের কাছে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।”

আগেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সফল পরীক্ষামূলক উৎপাদন হয়ে গিয়েছে। সড়কপথে ঝাড়খণ্ডের খনি থেকে কয়লাও আসছে। শুধু জলের জোগানেরই সমস্যা ছিল। এ বার তাও কেটে গেল। ডিভিসি-র আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট থেকে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই তাঁরা বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারবেন। সব্যসাচীবাবু জানান, ওয়াটার করিডরের জটিলতা কাটাতে জেলা প্রশাসন যথেষ্ঠ ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল।

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ডিভিসি-র সঙ্গে আগেই আলোচনায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ডিসেম্বরের মধ্যে ওয়াটার করিডরের কাজ শেষ করা হবে। মার্চ মাসের মধ্যে রেললাইনের জন্য জমি ডিভিসিকে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ীই কাজ চলছে।’’

রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাস হয়েছিল ২০০৮ সালে। শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীলকুমার সিন্ধে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মূল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ কার্যত নির্বিঘ্নে হলেও জট বেধেছিল ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াটার করিডরের জমি অধিগ্রহণের সময়। ডিভিসি সূত্রের খবর, প্রথমে প্রকল্পের শিলান্যাসের তিন বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। পরবর্তী সময়ে বার বার তা পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে প্রকল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ।

সমস্যাটা মূলত তৈরি হয়েছিল ওয়াটার করিডরের জমি অধিগ্রহণে জমি মালিকদের একাংশের তীব্র বিরোধিতায়। জমি রক্ষা কমিটি গড়ে জমি মালিকদের একাংশ বার বারই বাধা দেন। সেই সময় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন, জমি অধিগ্রহণের সমস্যা মেটাতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিক রাজ্য সরকার। বিভিন্ন সময়ে বার বার জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁরা জমিজট কাটাতে বৈঠক করেন। এমনকী ওয়াটার করিডরের জমিজট কাটাতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা ‘সদর্থক’ নয় দেখে রঘুনাথপুরের এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় ঝাড়খণ্ডে স্থানান্তরিত করা যায় কি না সেই নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয় ডিভিসি-র অন্দরে। প্রকল্পের শীর্ষ আধিকারিকরা এ নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশও করেছিলেন। যদিও জেলাশাসকের দাবি, বরাবরই প্রশাসন ডিভিসিকে সাহায্য করেছে।

তবে লোকসভা নির্বাচনের পরে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ওয়াটার করিডরের সমস্যা মেটাতে রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তরের দ্বারস্থ হয় ডিভিসি। এ দিকে শাসকদলের স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোরা বার বার এলাকায় এসে অনিচ্ছুক জমি মালিকদের একাংশকে বুঝিয়ে তাঁদের জমি দিতে রাজি করানোর চেষ্টা শুরু করেন।

পাশাপাশি জমিজট কাটাতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায় জেলা প্রশাসনকেও। তাতে বরফ কিছুটা গলেছিল। অনিচ্ছুক জমি মালিকদের একাংশ ক্ষতিপূরণের চেক নিতে রাজি হন। পরপর কয়েকটা চেকবিলির শিবির হয় রায়বাঁধ ও গুনিয়াড়া পঞ্চায়েতে। ডিভিসি-র এক পদস্থ আধিকারিক জানান, শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছুক জমি মালিকদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ক্ষতিপূরণের চেক নিয়েছিলেন। তবে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজে বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থায়ী চাকরি না পেলে জমি দেবেন না বলে অনড় থেকে যান রায়বাঁধ পঞ্চায়েতের মনগ্রাম মৌজার জমি মালিকরা। শেষে বাধ্য হয়ে মনগ্রাম মৌজাকে বাদ দিয়ে পাইপলাইন রায়বাঁধ ও সিদপুর দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভিসি।

অন্যদিকে পাইপলাইন পাতার কাজ দ্রুত শেষ করতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ডিভিসি। সংস্থা সূত্রের খবর, আগে ওই কাজের বরাত পেয়েছিল রাজ্য সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও ওই সংস্থা কাজ শেষ করতে না পারায় চলতি বছরের মাঝামাঝি অন্য সংস্থাকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিভিসির এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, জুলাই থেকে অন্য সংস্থাটি কাজ শুরু করে ছ’মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করেছে। তবে ঘটনা হল গত বছর থেকেই ডিভিসির ওয়াটার করিডরের সমস্যা মেটাতে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে জেলাপ্রশাসন।

এ দিকে অক্টোবর মাসের মধ্যে জলের পাইপলাইন পাতার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরেই জল আনতে অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছিল ডিভিসি। জাতীয় পাওয়ার গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ টেনে ৭৯টি বিদ্যুতের টাওয়ার তৈরি করে শালচুড়ার ইনটেকের ৩৩ কেভি স্যুইচ ইয়ার্ড শুরু করা হয়েছে। তবে গোড়ায় সুইডেন থেকে আনা দু’টি আধুনিক প্রযুক্তির পাম্প চালাতে কিছুটা সমস্যায় পড়েছিল ডিভিসি। ২৩ ডিসেম্বর এক ঘণ্টা চলার পরে পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। দ্রুততার সঙ্গে পাম্প মেরামতি করে ২৫ ডিসেম্বর থেকে ফের পাম্প চালানো শুরু হয়। আর শনিবার বিকেলে জল এসে পৌঁছয় প্রকল্পের রিজার্ভারে।

তবে রঘুনাথপুরের প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় অর্থিক সঙ্কটে চলা ডিভিসি রঘুনাথপুরের প্রকল্প অন্য সংস্থাকে হস্তান্তর করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। যার বিরোধিতায় নেমেছেন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মী-আধিকারিকদের একাংশ। শেষ পর্যন্ত রঘুনাথপুরে জলের সমস্যা মেটার পরে প্রকল্প থেকে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এই প্রকল্প নিয়ে সংশয় এ বার কাটবে বলে আশাবাদী ডিভিসির ওই কর্মী-আধিকারিকরা।

state news therman project damodam river
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy