Advertisement
E-Paper

পুজোর দিনে ভিক্ষায় বেরোবেন না লক্ষ্মীরা

উদ্যোগটা শুরু মাসখানেক আগে। আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের ছাত্র, পেশায় প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক তিন ভাই সৈকত শোভন, অর্ঘ্যকমল আর বিলাস মুখোপাধ্যায়রা ফরেস্ট গার্ড নিয়োগের পরীক্ষায় নজরদারির কাজ করে ৭৫০ টাকা পান।

বৃদ্ধাকে সাহায্য। নিজস্ব চিত্র

বৃদ্ধাকে সাহায্য। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩৩
Share
Save

‘তোমার দুর্গা পঞ্চব্যাঞ্জন পাতে/ আমার দুর্গা ফুটপাতে থালা পাতে’— ফুটপাতে থালা হাতে বসা ‘দুর্গা’দের আরাধনা শুরু হল আমোদপুরে। সারাবছর তো বটেই, পুজোর ক’টা দিনও ভিক্ষা না করলে বেণুবালা বিশ্বাস, লক্ষ্মী সোরনদের ভাতের হাঁড়ি চড়ে না। এ বার থেকে পুজোর ক’টা দিন তো বটেই, লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত তাঁদের আর ভিক্ষায় বেরোতে হবে না। বাড়ি বসেই যাতে তাঁরা পাঁচটি পরিবারের মতো পুজোর ক’টা দিন একটু ভাল খাওয়াদাওয়া করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করলেন আমোদপুর জয় দুর্গা হাইস্কুলের কিছু প্রাক্তন ছাত্র।

উদ্যোগটা শুরু মাসখানেক আগে। আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের ছাত্র, পেশায় প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক তিন ভাই সৈকত শোভন, অর্ঘ্যকমল আর বিলাস মুখোপাধ্যায়রা ফরেস্ট গার্ড নিয়োগের পরীক্ষায় নজরদারির কাজ করে ৭৫০ টাকা পান। তাঁরা ঠিক করেন উদ্বৃত্ত আয়ের ওই টাকাটা কোনও দুঃস্থকে দিয়ে দেবেন। সেই মতো এক রাতে বছর সত্তরের বেণুবালাকে কোপাই স্টেশনে ভিক্ষা করতে দেখে তাঁর হাতে ৫০০ টাকা তুলে দেন। কথায় কথায় তাঁরা জানতে পারেন, পুজোর ক’টা দিন ভাল ভিক্ষা মেলে না। তাই পুজোর আগে থেকেই রাতেও ভিক্ষা করতে হয়। বেণুবালার কাছে থেকেই তাঁরা আরও এক ভিক্ষাজীবী লক্ষ্মী সোরেনের নাম জানতে পারেন।

ঘটনার কথা এসে তাঁরা বলেন বন্ধুদের। সবাই মিলে ঠিক করেন পুজোর ক’টা দিন ওই দু’জন ভিক্ষাজীবীর দায় তাঁরা নিজেদের নেবেন। এগিয়ে আসেন আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মাধব দত্ত, ধনঞ্জয় দাস, সর্গজিৎ দত্ত, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়রা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন শিক্ষকরাও। নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে তাঁরা ওই দুই ভিক্ষাজীবীর বাড়িতে রবিবার পৌঁচ্ছে দেন শতরঞ্জ, চাদর, বালিশ, ছাতা, টর্চ, মাদুর, মশারি, দুটো করে শাড়ি, সায়া-ব্লাউজ, গামছা, দু’রকম সাবান, শ্যাম্পু, পেস্ট, এক বস্তা করে চাল, দু’রকম ডাল, নুন, তেল, পেস্ট, সবজি-সহ নগদ ৫০০ টাকা।

ঝুড়ি ভর্তি ওই সব সামগ্রী দেখে আবেগে আপ্লুত দুই ভিক্ষাজীবী। আমোদপুরের পলাশডাঙায় বেনুবালার বাড়ি। একাত্তরের যুদ্ধে স্বামী হরিপদ বিশ্বাস মারা যাওয়ার পর একাই থাকেন। মেয়ের বিয়ের পর আর কোনও যোগাযোগ নেই। মাসিক যৎসামান্য কিছু টাকা বার্ধক্য ভাতা পান। তার বেশির ভাগই চলে যায় ওষুধ কিনতে। একই অবস্থা স্থানীয় উদয়নগরের বাসিন্দা লক্ষ্মী সোরনেরও। বছর পনের আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। বড় ছেলের মৃত্যু হয়েছে ছয় বছর আগে। ছোট ছেলে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। লক্ষ্মী, বেণুবালারা বলছেন, ‘‘পুজোর আগে অবস্থাপন্নদের বাড়িতে এ ভাবে তত্ত্ব যায় দেখেছি। আমাদের কথা এই প্রথম কেউ ভাবল।’’

উদ্যোক্তাদের পক্ষে প্রভাস পাল জানান, মাটির মায়ের আরাধনায় আমরা কত লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করি। কিন্তু, মানবী মায়ের কথা ভাবি না। এ বার থেকে প্রতিবছরই আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী পুজোয় ওই সব মায়েদের আরাধনা করব।

Durga puja Puja committee charity beggar Amodpur আমোদপুর

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}