Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
PParamita Samaddar

সচেতনতা তৈরিতেও নজর ওসি পারমিতার

এক জন মহিলা এসেছেন ভেবে ‘ফালিবাজেরা’ কি ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে— কেউ কেউ যখন এমন কথা ভাবছেন, সেই সময়ে ‘ফালিবাজদের’ দমন করা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ফেলেন পারমিতা।

পুঞ্চা থানার ওসি। নিজস্ব চিত্র

পুঞ্চা থানার ওসি। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল ও সমীর দত্ত 
পুরুলিয়া ও পুঞ্চা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩৩
Share: Save:

চোখে সানগ্লাস, পরনে খাকি উর্দি, কোমরের বেল্টে ঝুলছে রিভলভার। ধুলো উড়িয়ে মোটরবাইক ছুটছে পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার বাগদা, লৌলাড়া, বড়গ্রাম মোড়, শালডিহার রাস্তায়। কেউ তাঁকে আড়ালে ডাকেন— ‘লেডি সিঙ্ঘম’, কেউ বা ‘দিদি’ বলেন। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এ ভাবেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন পুঞ্চা থানার ওসি পারমিতা সমাদ্দার। পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, ‘‘পুলিশের কাজে মহিলা বা পুরুষ ভাগ করা হয় না। পারমিতা ভাল কাজ করছেন।’’

পুরুলিয়া জেলায় এই প্রথম কোনও থানার ওসি পদে বসেছেন এক জন মহিলা। তাই মহিলাদের আত্মনির্ভর করার, তাঁদের সমস্যা মেটানোয় বাড়তি নজর দেন তিনি। তবে গত জুন মাসে পুঞ্চা থানার ওসির দায়িত্ব পাওয়ার পরেই প্রথম তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল ‘ফালিবাজেরা’।

পুরুলিয়া জেলার এই এলাকায় রাতের অন্ধকারে নিকষ কালো পিচে ধারাল ‘ফালি’ (ধারাল লোহার ফলা) পুঁতে গাড়ির চাকা ফাঁসিয়ে লুটপাট নতুন কিছু নয়। তবে বেশ কয়েকবছর সে উৎপাত বন্ধ ছিল। মাসখানেক আগে হঠাৎ পুঞ্চা থানা এলাকায় ‘ফালিবাজেরা’ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এক রাতে পায়রাচালি সেতুর অদূরে রাস্তায় ‘ফালি’ ফেলে গাড়ি আটকে লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। ওসির চেয়ারে এক জন মহিলা এসেছেন ভেবে ‘ফালিবাজেরা’ কি ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে— কেউ কেউ যখন এমন কথা ভাবছেন, সেই সময়ে ‘ফালিবাজদের’ দমন করা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ফেলেন পারমিতা। দুষ্কৃতীদের খবর পেতে সোর্সদের সক্রিয় করে, তদন্তে উঠে আসা নানা সূত্র এক জায়গায় মিলিয়ে গ্রেফতার করে ফেলেন কয়েকজন অভিযুক্তকে। তারপর থেকে ওই এলাকায় রাস্তায় ফালি ফেলার আর ঘটনা শোনা যায়নি।

মেয়েদের নিরাপত্তার দিকেও তাঁর বিশেষ নজর। তিনি জানান, সচেতনতা শিবিরে কিংবা কোথাও টহল দিতে গিয়ে মহিলাদের সামনে পেলে দাঁড়িয়ে তাঁদের সঙ্গে গল্পের ছলে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না জানতে চান। ঘরে বা বাইরে নির্যাতিত হলে তা রুখতে আইনের যে অস্ত্র রয়েছে, সে সম্পর্কেও মহিলাদের সচেতন করে যাচ্ছেন পারমিতা। নিজের মোবাইল ও থানার কন্ট্রোলরুমের ফোন নম্বর বিলি করে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে বলছেন।বছর আটাশের পারমিতার কথায়, ‘‘এই এলাকায় এখনও ডাইনি নিয়ে কুসংস্কারজনিত অন্ধবিশ্বাস রয়েছে। বাল্য বিবাহও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আইন প্রয়োগের বদলে যদি বুঝিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়, তা হলে কাজটা অনেক সহজ হয়। সে জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চকে সঙ্গে নিয়ে সচেতনতার কাজ করছি।’’

সেনা আধিকারিক বাবা প্রবীরকুমার সমাদ্দারের সঙ্গে রাজস্থান, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কাটানোর সুবাদে পারমিতা অনেক রকমের মানুষ দেখেছেন। কাছ থেকে দেখেছেন সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা। বাবার কাছে শুনেছেন দেশের জওয়ানদের কথা। তাতেই তাঁর মধ্যে তৈরি হয়েছিল দেশসেবার ইচ্ছা। কাছ থেকে মানুষের সেবা করার জন্য তিনি বেছে নেন পুলিশের চাকরি। হিন্দি ও ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক করে পরে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন। তারপরে চাকরি। প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৫ সালে সাব-ইনস্পেক্টর হিসেবে তাঁর প্রথম নিয়োগ পুরুলিয়া সদর থানার মহিলা তদন্ত কেন্দ্রে। পরে পুরুলিয়া মফস্সল থানা। সেখান থেকে রঘুনাথপুর মহিলা থানার ওসি, পরে পুরুলিয়া মহিলা থানার ওসি। তার পরেই পুঞ্চা থানার ওসি। পারমিতার কথায়, ‘‘সবাই সচেতন হলেই অনেক অপরাধ গোড়াতেই আটকানো যায়। দুষ্টের দমনের সঙ্গে তাই সচেতনতা তৈরিও আমার লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Awareness paramita Samaddar Puncha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE