Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Chou Dancers

মমির দেশে ছৌ, স্বপ্ন ছুঁলেন শিল্পীরা

এতবড় সাফল্য যে মিলবে, তা একপ্রকার ভাবনাতীতই ছিল ছৌ শিল্পী শম্ভুনাথ কর্মকারের। এই বসন্তে মমির দেশের মন জয় করেছেন জঙ্গলমহলের বান্দোয়ানের তরুণ প্রজন্মের ছৌশিল্পীরা।

An image of Chow dancer

মিশরে বান্দোয়ানের ছৌ দল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৭
Share: Save:

লালমাটি ছুঁয়ে পিরামিডের দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন একবুক আশা নিয়ে। তবে এতবড় সাফল্য যে মিলবে, তা একপ্রকার ভাবনাতীতই ছিল ছৌ শিল্পী শম্ভুনাথ কর্মকারের। এই বসন্তে মমির দেশের মন জয় করেছেন জঙ্গলমহলের বান্দোয়ানের তরুণ প্রজন্মের ছৌশিল্পীরা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের আওতাধীন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনশিপ (আইসিসিআর) সংস্থাটির আমন্ত্রণে নীল নদের দেশে গিয়ে পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য প্রদর্শন করে এসেছেন শিল্পী শম্ভুনাথ ও তাঁর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিল্পীরা।

এর আগেও আটবার বিদেশে নৃত্য প্রদর্শনের অভিজ্ঞতার সুবাদে মিশরীয়দের জন্য মহিষাসুরমর্দিনী পালাটিই বেছে নেন তরুণ শিল্পী। শম্ভুনাথের কথায়, “পুরাণ সম্পর্কে সেখানকার দর্শকদের মধ্যে আংশিক ধারণা থাকলেও তাঁরা দুর্গাপুজো নিয়ে আগ্রহী। বিদেশের দর্শকেরা ওটাই দেখতে চান। এবারের সফরেও একই ভাবে আমরা ছৌ নৃত্যশৈলীর প্রতি দর্শকদের টান উপলব্ধি করেছি।”

রাঁচী থেকে দিল্লির উড়ান। সেখান থেকে কুয়েত হয়ে কায়রো। শম্ভুনাথ বলেন, “কায়রো থেকে সড়ক পথে আমরা পৌঁছেছিলাম আসওয়ান শহরে। সেখানে পালা প্রদর্শনের পর সে দেশের আরও তিনটি শহরে পালা করেছি। প্রতিটি পালায় প্রশংসা পেয়েছি।” নিজেদের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে দলের শিল্পী রবীন্দ্রনাথ মাহাতো, বিভীষণ মাঝিরা বলেন, “নীল নদের একটি শাখা নদীর উপর লঞ্চে নৃত্য প্রদর্শনের অভিজ্ঞতা ভোলার নয়।”

ছাত্রাবস্থাতেই ছৌয়ের প্রেমে পড়ে নাচের দলে নাম লিখিয়েছিলেন শম্ভু। তখন তিনি চতুর্থ শ্রেণির। বাবা অখিল কর্মকার নিজে ছৌশিল্পী ছিলেন। তবে দাদু শত্রুঘ্ন কর্মকার ছিলেন ধুমড়ি নাচের শিল্পী। শম্ভুনাথের কথায়, ‘‘ ধুমড়ি নাম এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বলরামপুরের মালডি গ্রামে একটি ছৌনাচের আসর থেকে আমার নাচ দেখে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত ছৌ শিল্পী নেপাল মাহাতো আমাকে তাঁর দলে নিয়ে আসেন।’’ তারপর থেকে ছৌয়ের সঙ্গেই ঘর বেঁধেছেন শম্ভুনাথ। তরুণ প্রতিভাদের খুঁজে এনে এখন বান্দোয়ানেই একটি ছৌ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও চালাচ্ছেন।

দিনমজুরি করে সংসার চলে বান্দোয়ানের আশপাড়ার রবীন্দ্রনাথ মাহাতো, মাংলা গ্রামের বিভীষণ মাঝি, কুইয়াপাড়া গ্রামের গৌরাঙ্গ সিং সর্দার ও মৌরাং গ্রামের হিমাংশু মাঝির। কিন্তু ছৌ তাঁদের রক্তে। গুরু শম্ভু ঠিক চিনেছিলেন শিষ্যদের প্রতিভা।

শিষ্যরা বলছেন, “ভাবিনি কোনওদিন বিদেশে যেতে পারব। দেশের জাতীয় পতাকার পাশে নৃত্য প্রদর্শন করতে পারব।”

এই সফর শম্ভুর কাছে ছিল দেশের সম্মান রক্ষার লড়াই-ও। তা তিনি করতে পেরেছেন বলেই মনে করছেন। সাফল্যের কথা বলতে বলতে শিল্পীর মুখ আলো হয়ে ওঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chou dance purulia Egypt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE