Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Suicide

ঋণের বোঝা, মেয়েকে মেরে আত্মঘাতী রেলকর্মী

পুলিশ তদন্তে আরও জেনেছে, খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্ত্রী জবাকেও মারার চেষ্টা করেছিলেন অমর। বরাত জোরে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। আদ্রার রেলের বিভাগীয় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর।

চিকিৎসা চলছে জবা মোদকের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা চলছে জবা মোদকের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৬
Share: Save:

অনলাইনে গেম খেলে কয়েক বার লক্ষাধিক টাকা জিতেছিলেন। ক্রমে খেলার আসক্তি পেয়ে বসে। পরে, ওই গেমের চক্করে বাজারে প্রায় ১৫ লক্ষের বেশি ঋণ চেপেছিল আদ্রার রেলকর্মী বছর পঁয়ত্রিশের অমরচন্দ্র মোদকের। ঋণ শোধের উপায় না পেয়ে শেষমেষ আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। তার আগে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন সাড়ে পাঁচ বছরের মেয়ে অঙ্কিতাকেও, প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ। রবিবার দুপুরে আদ্রা শহরের রেল কলোনির ওই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে।

পুলিশ তদন্তে আরও জেনেছে, খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্ত্রী জবাকেও মারার চেষ্টা করেছিলেন অমর। বরাত জোরে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। আদ্রার রেলের বিভাগীয় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর। পুলিশের দাবি, এ দিন দুপুরে খাওয়ার সময়ে স্ত্রীর খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। স্ত্রী আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ভেবে নিয়ে মেয়েকে খুন করে আত্মঘাতী হন অমরচন্দ্র। জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেহ দু’টি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। মৃতের স্ত্রীর জবানবন্দি নেওয়া হবে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”

পুলিশ জেনেছে, এ দিন ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে বাড়িতেই ছিলেন ওই় রেলকর্মী। মাঝে এক বার বৃদ্ধা মাকে কাশীপুরের সিমলা গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর জন্য বাস ধরিয়ে দিতে বেরিয়েছিলেন। হাসপাতালে জবা জানান, এ দিন দুপুরে রান্না করে সকলে মিলে খাওয়া সেরেছিলেন। দুপুরে ঘুমের অভ্যাস না থাকলেও এ দিন খাওয়ার পর থেকেই খুব ঘুম পাওয়ায় শুয়ে পড়েছিলেন। সে সময়ে অন্য ঘরে ছিলেন স্বামী। মেয়ে অঙ্কিতা টিভি দেখছিল।

জবা বলেন, “হঠাৎ প্রচণ্ড বমি ভাব শুরু হওয়ায় ঘুম ভেঙে যায়। কোনও মতে উঠে দেখি, মেঝেয় পড়ে আছে মেয়ে। তার মুখে রক্ত লেগে। পাশের ঘরে ঝুলছে স্বামী। কোনও মতে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়শিদের ঘটনার কথা জানাই। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন।” পুলিশের দাবি, জবা জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে বাড়ির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।

জবার কাছে পুলিশ আরও জেনেছে, কয়েক মাস ধরে মোবাইলে অনলাইনে গেম খেলার নেশা পেয়ে বসেছিল অমরের। প্রথম দিকে কয়েক লক্ষ টাকা জিতেছিলেন। তাতে আসক্তি আরও বাড়ে। কিন্তু পরে খেলায় হারতে শুরু করলেও হাল ছাড়েননি। উল্টে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিতে শুরু করেছিলেন। জবার কথায়, “আমরা বারবার বারণ করেছিলাম। কথা শোনেনি। আমার বাবা, ওঁর বোন ধার শোধ করতে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। তার পরেও হুঁশ ফেরেনি। সম্প্রতি বলত, প্রচুর টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছে। তাগাদা দিচ্ছে লোকজন। সবাই মরে যাওয়াই ভাল।”

ঘটনায় হতবাক রেলের বিদ্যুৎ বিভাগের অমরের সহকর্মীরা। তাঁদেরই এক জন উত্তম দত্ত বলেন, “খুব ভাল মানুষ ছিল। অন্য ডিভিশন থেকে বদলি হয়ে এসেছিল আদ্রায়। কাজেও দক্ষ ছিল। সে যে এমন কাজ করতে পারে, আমরা কেউই ভাবতে পারছি না।” পড়শিদের একাংশও জানান, সুখী দম্পতি হিসেবেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন অমর ও জবা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Railway Employee Adra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE