Advertisement
E-Paper

ধৃতকে ছাড়াতে থানায় চড়াও

যাঁকে ছাড়াতে থানায় চড়াও হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা, তিনি জামিন পেয়ে গেলেন। আর হামলাকারীদের মধ্যে ২১ জনের হল জেল হাজত। রামপুরহাটের আয়াশ গ্রামের ঘটনা। গ্রামের হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় দু’দলের দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে শনিবার ধুন্ধুমার বেধেছিল ওই গ্রামে। ওই ঝামেলা মেটাতে সালিশি সভা বসিয়ে আর্থিক জরিমানা করে গ্রামের ক্লাব।

সব্যসাচী ইসলাম

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০২:২৯
এই ট্রাক্টরগুলিতে চড়েই আসে হামলাকারীরা। বুধবার রামপুরহাট থানায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

এই ট্রাক্টরগুলিতে চড়েই আসে হামলাকারীরা। বুধবার রামপুরহাট থানায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

যাঁকে ছাড়াতে থানায় চড়াও হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা, তিনি জামিন পেয়ে গেলেন। আর হামলাকারীদের মধ্যে ২১ জনের হল জেল হাজত।
রামপুরহাটের আয়াশ গ্রামের ঘটনা। গ্রামের হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় দু’দলের দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে শনিবার ধুন্ধুমার বেধেছিল ওই গ্রামে। ওই ঝামেলা মেটাতে সালিশি সভা বসিয়ে আর্থিক জরিমানা করে গ্রামের ক্লাব। জরিমানার টাকা না দেওয়ায় মঙ্গলবার রাতে এক খেলোয়াড়ের বাড়িতে হামলার অভিযোগে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় আয়াশ গ্রামের ওই ক্লাবের সভাপতি কাসাফোদ্দোজাকে (হাবল শেখ)। এর পরেই গ্রামের শ’তিনেক লোক ট্রাক্টর, মোটরবাইকে হাবলকে ছাড়াতে থানায় চড়াও হয়। শেষ অবধি অবশ্য অভিযুক্তকে নিয়ে যেতে পারেননি গ্রামবাসী।
থানায় হামলার অভিযোগ পুলিশ ২১ জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান, বেআইনি ভাবে সালিসি সভা করা-সহ বিভিন্ন ধারায় মমলা করা হয়েছে। বুধবার রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তবে, যাঁকে ঘিরে এত কাণ্ড, সেই কাসাফোদ্দাজা ওরফে হাবলকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও এ দিন তিনি জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
ঠিক কী হয়েছিল শনিবার?
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার ইদ উপলক্ষে গ্রামের এক দল যুবক হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। খেলার সময় টিঙ্কু শেখ ও সাহাবুদ্দিন শেখের মধ্যে ঝামেলা হয়। মারামারিতে সাহাবুদ্দিনের মাথা ফাটে। তার জেরে গ্রামের কিছুই বাসিন্দা উত্তেজিত হয়ে টিঙ্কুকে আটকে রাখেন। সে রাতেই গ্রামের এক মাত্র ক্লাব সমাজ কল্যাণ সমিতিতে বসে সালিসি সভা। অভিযোগ, সভাপতি কাসাফোদ্দোজা-সহ ক্লাবের কিছু কর্মকর্তার উপস্থিতিতে টিঙ্কুর পরিবারকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। টিঙ্কু ও তাঁর বাবা কাসেম শেখ মুচলেকা দেন, তাঁরা ১৫ হাজার টাকা দেবেন। তার মধ্যে ৫০০০ হাজার টাকা সোমবারের মধ্যে দিতে না পারলে তাঁদের বাড়ি থেকে গরু বা মোটরবাইক তুলে নিয়ে আসবে ক্লাব।
ক্লাবেরই কিছু সদস্য জানিয়েছেন, সোমবার পাঁচ হাজার টাকা না দেওয়ায় ক্লাব থেকে মঙ্গলবার বারবার লোক পাঠানো হয় টিঙ্কুর বাড়িতে তাগাদা দিতে। কিন্তু, টিঙ্কু ও তাঁর বাবা ক্লাবে যাননি। এর পরে গ্রামে মাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ফের ওই ঘটনায় সালিশি সভা বসবে। সভায় ঠিক হয়, টিঙ্কুর বাড়ি থেকে গরু নিয়ে আসা হবে। অভিযোগ, সেই মতো মঙ্গলবার রাতেই ক্লাবের কিছু সদস্য টিঙ্কুর বাড়ি থেকে একটি গরু ও একটি বাছুর তুলে নিয়ে আসেন। টিঙ্কুর মা আয়েজা বিবি-র অভিযোগ, ‘‘ক্লাবের কিছু ছেলে আর একদল গ্রামবাসী রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আচমকা আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে গরু বার করে নিয়ে যায়। সঙ্গে মারধরের হুমকি দেয়। আমরা বাড়ি থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে যাই পাশের গ্রাম দাদাপুরের তৃণমূল নেতা আকবর আলমের বাড়িতে। সেখান থেকেই পুলিশে খবর দিই।’’

পুলিশ গ্রামে গিয়ে কাসাফেদ্দোজাকে তুলে আনে। এর পরেই গ্রামে সিদ্ধান্ত হয়, ক্লাবের সভাপতিকে ছাড়িয়ে আনা হবে। পুলিশের দাবি, সেই মতো তিনটি ট্রাক্টর, একটি মোটরচালিত ভ্যান ও পাঁচটি মোটরবাইকে থানায় হাজির হয় আয়াশ গ্রামের শতাধিক লোক। তখন থানায় ছিলেন দুই মহিলা কর্মী-সহ তিন জন। বুধবার তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘ভাগ্যিস মূল গেটে তালা ছিল। না হলে ওরা আসামি তুলে নিয়ে চলে যেত। কোনও রকমে তা আটকানো গেছে।’’ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে থানার মধ্যে পুলিশ ব্যারাক থেকে পুলিশকর্মীরা যে যেমন অবস্থায় ছিলেন, সেই অবস্থাতেই বেরিয়ে গ্রামবাসীকে তাড়া করেন। তাতে রামপুরহাট স্টেশনের দিকে পালিয়ে যান গ্রামবাসী। সেখান পাকড়াও করা হয় ২১ জনকে। ধৃতদের বেশির ভাগই তৃণমূলের সমর্থক বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। কয়েক জন সিপিএমের লোকও আছেন।

বুধবার টিঙ্কুর পরিবার সমস্ত ঘটনা জানিয়ে ক্লাবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের আয়াশ অঞ্চল সভাপতি আকবর আলম। তিনি অবশ্য ক্লাবের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তাঁর কথায়, ‘‘ওই গ্রামে প্রায়ই বসে এ রকম সালিশি সভা। এটা মাতব্বরি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি বারবার ওই ছেলেদের ক্লাবের নিষেধ করেছি। তবু ওরা শোনেনি। এ বারও আমি বলেছিলাম, ছোট একটা মারামারিকে ঘিরে বেশি জলঘোলা করার দরকার নেই। গ্রাম পঞ্চায়েতে বা থানায় বসেই মীমাংসা করে দেওয়া যাবে। আহত খেলোয়াড়ের চিকিৎসার খরচের ব্যবস্থাও করা হবে। তার পরেও ক্লাবের ছেলেরা সালিশি সভা করে ঠিক করেনি।’’

কাসাফোদ্দাজার সঙ্গে এ দিন অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। বাড়ির লোক জানান, তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই। তবে, সালিশি সভা নিয়ে এখনই পিছু হটছে না ক্লাব। এক সদস্য বলে দিয়েছেন, ‘‘গ্রামের মানুষ চাইলে ফের সালিশি সভা হবে।’’

Rampurhat police station birbhum villagers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy