এ বার একটা এসপার কি ওসপার হয়ে যাক। পাকিস্তান কখনও নিজেকে শোধরাবে না। ভারতীয় সেনার পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়ার খবরে এমনই প্রতিক্রিয়া জানালেন কার্গিল যুদ্ধের দুই প্রাক্তন সেনা মানবাজারের ইন্দকুড়ির বাসিন্দা নিতাইচন্দ্র রায় ও বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র লো।
প্রাক্তন নায়েক নিতাইচন্দ্র রায় ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের আর্মাড ট্যাঙ্কের গানার ছিলেন। ২০০০ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে তিনি অবসর নেন। কিন্তু এখনও দেশের জন্য তাঁর রক্ত টগবগ করে ফোটে। পাকিস্তানকে জবাব দিতে ফের তাঁরা প্রস্তুত বলে জানাচ্ছেন বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সেনা কৃষ্ণচন্দ্র লো। তিনিও কার্গিল যুদ্ধে বাটালিক সেক্টরে থেকে লড়াই করেছিলেন। প্রাক্তন সেনা কর্মীদের কথায়, ‘‘পাকিস্তানে গণতন্ত্র নেই। সরকার নামে মাত্র। জঙ্গিরাই দেশ চালায়। তারাই পাকিস্তানের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে।’’
কার্গিল ছাড়াও পঞ্জাবের স্বর্ণ মন্দিরে ১৯৮৪ সালে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ এবং ১৯৮৯ সালে পঞ্চাবেরই রাজপুরা জেলায় উগ্রপন্থী বনাম শিখদের ‘অপারেশন রক্ষক’-এও শামিল ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। রাজপুরায় একটি ভোটে ভোটারদের উপরে উগ্রপন্থীদের গুলি চালানো চোখের সামনে দেখেছেন।
বিষ্ণুপুরের কৃষ্ণচন্দ্র কার্গিল যুদ্ধে ওয়্যারলেস অপারেটারের কাজ করতেন। স্মৃতি থেকে তিনি বলেন, ‘‘কার্গিল যুদ্ধের পুরো সময়টাই যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলাম। এক দিন রাত ১২টায় এলাকা পর্যবেক্ষণে গিয়ে শুনি ছ’জন ভারতীয় সেনাকে পাকিস্তানিরা বন্দি করেছে। কী করা উচিত না বুঝে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে সঙ্গে জানাই। তাঁদের নির্দেশ অনুযায়ী কামানের সাহায্যে শত্রু পক্ষকে পর্যুদস্ত করে আমাদের জওয়ানদের মুক্ত করি। সে দিনের কথা ভুলব না কোনও দিন।’’
তবে হিমাঙ্কের অনেক নীচে কনকনে ঠান্ডায় কষ্ট সহ্য করে যুদ্ধ করেছেন। থার্মোকল ও টিন দিয়ে ঘেরা বাঙ্কারে থাকতে হত। অক্সিজেন অত্যন্ত কম ছিল। কিন্তু দেশ রক্ষার শপথ নিয়ে এসেছিলেন, তাই কষ্ট সহ্য করেছেন। সেই শপথ এখনকার জওয়ানদের মধ্যেও তিনি দেখতে পান।
তবে যুদ্ধ হলে আমজনতার জীবনে যে নানা সমস্যা নেমে আসে, দু’জনেই তা মানেন। জানান, যুদ্ধ হলেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। প্রাক্তন সেনাদের কথায়, ‘‘যুদ্ধ কখনই সমস্যা মেটায় না। কিন্তু কখনও কখনও পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় তখন যুদ্ধকে এড়ানো যায় না। এই প্রতিবেশী দেশ স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। পহেলগাম কাণ্ডের পরে জবাব দিতে দেরি হচ্ছে ভেবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু একজন সৈনিক হিসাবে আমরা জানি, প্রত্যাঘাত করতে হলে তার প্রস্তুতি দরকার। আমরা জানতাম, ভারতীয় সেনা জবাব দেবে।’’
তাঁরা জানান, ডাক পড়লে তাঁরা এখনও ফ্রন্টে যেতে রাজি। ওদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া দরকার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)