Advertisement
০৮ মে ২০২৪
অবসর পিছিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

জন্মের নথিতে কারচুপি, নাম জড়াল শিক্ষকের

জন্ম সার্টিফিকেট অনুয়ায়ী ২৩ মাস আগেই তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। অথচ গত অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের ঘর থেকে দিব্যি বেতন তুলে গিয়েছেন তিনি!

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৩
Share: Save:

জন্ম সার্টিফিকেট অনুয়ায়ী ২৩ মাস আগেই তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। অথচ গত অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের ঘর থেকে দিব্যি বেতন তুলে গিয়েছেন তিনি!

জন্মের নথিতে কারচুপি করে নিজের অবসরের সময়সীমা বাড়িয়ে নেওয়ার এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল রামপুরহাট কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। খোদ রাজ্যের ‘ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ (ডিপিআই) বিভাগের কাছ থেকে ওই অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসল কলেজের পরিচালন সমিতি। বুধবার একটি বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রকৃত জন্ম সার্টিফিকেট অনুযায়ী ৩১ মার্চ ২০১৫-কেই অভিযুক্তের অবসরের দিন হিসেবে ধার্য করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যদিও তিন মাস আগে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠলেও অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পরিচালন সমিতি টালবাহানা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ ঠিক হলে ওই শিক্ষক কী ভাবে কুড়ি মাস ধরে কর্মরত রইলেন? কলেজ বা ডিপিআই-এর ঠিক কোন কর্মীদের গাফিলতিতে সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন আদায় করলেন অভিযুক্ত শিক্ষক, তার অবশ্য সদুত্তর মিলছে না।

কলেজ সূত্রের খবর, গত অগস্ট মাসের শেষের দিকে কলেজের ইতিহাস বিভাগের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডিপিআই দফতরের বেতন বিভাগ থেকে কলেজের কাছে প্রথম অভিযোগ আসে। কলেজ সার্ভিস কমিশনের দফতরে চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়ে ওই শিক্ষকের দেওয়া যে নথি রয়েছে, সেই মোতাবেক ওই শিক্ষকের জন্মের তারিখ— ‘২৩ মার্চ, ১৯৫৫’। ওই বিভাগ জানায়, সেই হিসেবে ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। সেই দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ওই অভিযুক্ত শিক্ষক কলেজে কাজ করে যাচ্ছেন। যথারীতি বেতনও তুলছেন।

কী ভাবে এমনটা ঘটল?

কলেজ থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ডিপিআই-কে প্রতিটি শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর যাবতীয় তথ্য সংক্রান্ত পে-প্যাকেট পাঠাতে হয়। ডিপিআই ও কলেজ কর্তৃপক্ষ, দু’পক্ষেরই তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে কলেজ থেকে যে পে-প্যাকেট পাঠানো হয়েছিল, তাতেই অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁর জন্মের ও উচ্চ মাধ্যমিকের সার্টিফিকেটে কাটাছেঁড়া করে ‘২৩ মে, ১৯৫৭’ করেছেন। তার পরে কলেজ থেকে পাঠানো প্রতিটি পে-প্যাকেটেই ওই শিক্ষক জাল নথিই পাঠিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আগের বারের সঙ্গে সেই তথ্য না মিললেও ডিপিআই দফতর প্রাথমিক ভাবে তা ধরতে ব্যর্থ হয়। ঠিক কুড়ি মাসের মাথায় ওই শিক্ষকের এই জালিয়াতি তাদের নজরে পড়ে। তার পরেই অভিযুক্ত শিক্ষককে শো-কজ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষক তার জবাব দেননি বলে দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের। উত্তরের অপেক্ষা করে শেষমেশ বুধবার পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে ২০১৫ সালের ৩১ মার্চকেই অভিযুক্ত শিক্ষকের অবসরের দিন বলে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি এ বারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? কুড়ি মাস ধরে বেআইনি ভাবে তিনি যে বেতন নিয়েছেন, সেই টাকারই বা কী হবে? ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত ডিপিআই দফতর নেবে। তারা যা নির্দেশ দেবে, তা পালন করা হবে।’’ সিদ্ধান্ত নিয়ে টালবাহানার অভিযোগও তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, বিষটি জানাজানি হতেই কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিল। পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের বৈঠকে যে দিন এই ঘটনাটিকে বিষয় হিসাবে রাখা হয়েছে, সে দিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

পে-প্যাকেটের নথিতে কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষর থাকে। যে মাসের নথি থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক ভুয়ো তথ্য পাঠাতে শুরু করেন, সে সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন জয়দেব পান। বর্তমানে অবসরে চলে যাওয়া জয়দেববাবুর সঙ্গে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এক জন অধ্যক্ষের পক্ষে কলেজের সমস্ত শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীর নথি যাচাই করা সম্ভব নয়। কলেজের অ্যাকাউন্ট বিভাগই তা যাচাই করে। অধ্যক্ষ কেবল স্বাক্ষর করেন। উনি কি জানতেন না ওঁর অবসরের দিন কবে? তা লুকিয়ে কাজ করে গিয়ে উনি ঠিক করেননি।’’ তাই ডিপিআই-এর পাশাপাশি কলেজের অ্যাকাউন্ট বিভাগও কুড়ি মাসেও ওই তথ্য বিকৃতি ধরতে না পারার দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না বলে মত শিক্ষামহলের। তাঁদের অনুমান, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সংশোধিত বেতনক্রমের সুযোগ নিয়ে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধির সুযোগ নেওয়ার লোভ থেকে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন ওই শিক্ষক।

অভিযোগ ঠিক না ভুল? সরাসরি জবাব দিতে রাজি হননি ওই শিক্ষক। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পরিচালন সমিতি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জানি না। তবে, এটুকু বলছি, কলেজের সঙ্গে আমার একটা বোঝাপড়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Wage Birth certificate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE