Advertisement
E-Paper

দরজায় খটখট, উদ্ধার বন্ধ ক্লাসে আটক ছাত্রী

ক্লাস ঘরে আটকে পড়া ছাত্রীর কান্না কানে গিয়েছিল  স্কুলে জল নিতে আসা চায়ের দোকানির।  তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ক্লাস ঘর থেকে বের করে আনেন তিনিই। সোমবার পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার রুদড়া প্রাইমারি স্কুলের ঘটনা। জানাজানি হতেই ক্ষিপ্ত জনতা মঙ্গলবার স্কুলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৭
মৌপ্রিয়া মান্ডি। নিজস্ব চিত্র

মৌপ্রিয়া মান্ডি। নিজস্ব চিত্র

ক্লাস ঘরে আটকে পড়া ছাত্রীর কান্না কানে গিয়েছিল স্কুলে জল নিতে আসা চায়ের দোকানির। তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ক্লাস ঘর থেকে বের করে আনেন তিনিই। সোমবার পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার রুদড়া প্রাইমারি স্কুলের ঘটনা। জানাজানি হতেই ক্ষিপ্ত জনতা মঙ্গলবার স্কুলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। নিজেদের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানশিক্ষিকা।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ ওই স্কুলে ছুটি দিয়ে ক্লাস ঘরে তালা পড়ে। সেই সময়ে গ্রামেরই বাসিন্দা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মৌপ্রিয়া মান্ডি ক্লাস ঘরের মধ্যে ছিল। কিন্তু তা খেয়ালই করেননি শিক্ষিকা। ওই স্কুলের কাছেই চায়ের দোকান চালান আনন্দ রায়। তিনি দুপুর প্রায় ৪টে নাগাদ স্কুল চত্বরে জল ভরতে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন্ধ স্কুলের একটা ঘর থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে চমকে যাই। ভিতরে কেউ আটকে রয়েছে ভেবে কয়েক বার হাঁক দিই। কিন্তু তখন কান্না থেমে যায়। সাড়া না পেয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখন দরজায় খটখট শব্দ শুনে বুঝতে পারি, কেউ ভিতরে রয়েছে। চায়ের দোকানে বসে থাকা লোকজনকে ডেকে আনি।’’

তিনি জানান, ওই ক্লাস ঘরের একটি দরজায় তালা দেওয়া থাকলেও অন্য দরজা ভিতর থেকে খিল দেওয়া ছিল। সবাই মিলে মেয়েটিকে বাইরে থেকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা চালান। তাঁদের কথা মতো মেয়েটি দরজার খিল খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।

ছাত্রীর মা শকুন্তলা পান্ডে বলেন, ‘‘স্কুল ছুটির পরে মেয়ে মাঝে মধ্যেই সহপাঠীদের বাড়ি ঘুরে আসত। সে আসছে না দেখে, কোনও বন্ধুর বাড়ি গিয়েছে ভেবেছিলাম। পরে স্কুলে এক ছাত্রী আটকে রয়েছে শুনে সেখানে যাই। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি, আমার মেয়েই সেখানে আটকে রয়েছে। স্কুলের সামনে ভিড় ঠেলে গিয়ে গিয়ে দেখি, মেয়েটা কাঁদছে। ভয়ে মুখ এতটুকু হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে এসেও কান্নাকাটি করছিল।’’

স্থানীয় বাসিন্দা শিবরাম মাহাতো, গৌরব পান্ডে, ঠাকুরদাস মাহাতো প্রমুখেরা জানান, তাঁরাই আটকে পড়া ওই ছাত্রীটিকে উদ্ধার করেন। তাঁদের অভিযোগ, শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে সময়মতো আসা-যাওয়া করেন না। এ নিয়ে বাসিন্দারা আপত্তি তোলায় কিছু দিন ঠিক মতো স্কুল চলেছে। ফের আগের অবস্থা ফিরে এসেছে।

এ দিন স্কুল তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে শুনে সেখানে যান পঞ্চায়েত প্রধান কমলকান্ত মাহাতো। তিনিই বাসিন্দাদের বুঝিয়ে শান্ত করেন। প্রধান বলেন, ‘‘ছাত্রীটি কপাল জোরে বন্ধ স্কুল থেকে উদ্ধার পেয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এ ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হতে বলেছি। এ ছাড়া স্কুল নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও কিছু অসন্তোষ রয়েছে। তাও স্কুল কর্তৃপক্ষকে দেখতে বলেছি।’’

প্রধানশিক্ষিকা বীণা পুনুরিয়া দাবি করেছেন, ‘‘সোমবার ছুটির সময়ে আমি স্কুলে ছিলাম না। যে শিক্ষিকা তালা বন্ধ করেছিলেন, তিনি জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীকে ক্লাস ঘর থেকে বের করে তালা দিয়েছিলেন। কিন্তু কী ভাবে যে সে ক্লাস ঘরে ঢুকে গেল, বোঝা যাচ্ছে না। এই রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে, আমরা সতর্ক থাকব।’’ ওই শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘আমি মোটেই ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই ছাত্রীকে ক্লাস ঘরে রেখে দরজায় তালা দিইনি। কখন সে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।’’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হেমন্ত রজক বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। ওই চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি।’’

Student Classroom School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy