Advertisement
১০ মে ২০২৪
Bishnupur

‘লকডাউন ডল’ নিয়ে বিষ্ণুপুরে হাজির নৈহাটির শিবুরা

নৈহাটির শিবু হোটেলে কাজ করতে করতে হঠাৎ হয়ে পড়েছিলেন বেকার। বিষ্ণুপুর মেলায় এসেছেন ‘লকডাউন ডল’ নিয়ে।

পসরা: বিষ্ণুপুর মেলায়, রাসমঞ্চের সামনে রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

পসরা: বিষ্ণুপুর মেলায়, রাসমঞ্চের সামনে রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৭
Share: Save:

ছায়াছবির ভানু মেলায় পুতুল বেচতে বেচতে পেয়ে গিয়েছিল লটারি। খুলে গিয়েছিল বরাত। আর নৈহাটির শিবু হোটেলে কাজ করতে করতে হঠাৎ হয়ে পড়েছিলেন বেকার। বিষ্ণুপুর মেলায় এসেছেন ‘লকডাউন ডল’ নিয়ে। বললেন, ‘‘পুতুলের মতোই ঠুটো হয়ে বসেছিলাম। এখন একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’’

উত্তর চব্বিশ পরগনার নৈহাটির সুভাষনগর থেকে বাহারি পুতুল নিয়ে ছ’জন যুবক এসেছেন এ বারের বিষ্ণুপুর মেলায়। তাঁদেরই এক জন শিবু সাহা। জানালেন, কেউ কাজ করতেন হোটেলে, কেউ নাট-বল্টু তৈরির কারখানায়। লকডাউনে সেই কাজ চলে যায়। বেশ কিছু দিন বাড়িতে বসেছিলেন। সঞ্চয় নেমে এসেছিল তলানিতে। সেই সময়ে পাড়ারই এক জন পরামর্শ দেন বাহারি পুতুল বানানোর।

নৈহাটির বাজার থেকে বড় পুতুল, জরি আর রঙিন কাপড় কিনে এনেছিলেন তাঁরা। তালিম ইন্টারনেটে ভিডিয়ো দেখে। আর হাতে-কলমে তৈরি করার ব্যাপারে সাহায্য করেন বাড়ির মেয়েরা। নাম দেওয়া হয়, ‘লকডাউন ডল’। শিবু জানান, এক একটি পুতুল তৈরির খরচ পড়ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। বিক্রি করে পাচ্ছেন ১১০ থেকে ১২০ টাকা।

বিক্রেতা দলটি বসেছে রাসমঞ্চের সামনে। তাঁদের মধ্যে সানু দেব ও কালীরাম মণ্ডল জানান, পুতুল নিয়ে এই প্রথম কোনও মেলায় এলেন। এত দিন বিভিন্ন শহরে গিয়ে ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসছিলেন। ‘‘মানুষ ভালবেসে কিনছেন। আমাদের পরিবারগুলো বেঁচে যাবে’’, বলছিলেন বাবাই সেন। তাঁরা জানান, মেলায় দু’দিন গড়ে হাজার চারেক টাকার বিক্রিবাটা হয়েছে। শিবু বলেন, ‘‘এটাই এখন আমাদের জন্য অনেক। বাড়িতে ফোন করেছিলাম। গিন্নি বলেছে টেরাকোটার গয়না নিতে। দোকান সামলে কিনতে যাওয়ার ফুরসৎ পাচ্ছি না।’’

‘লকডাউন ডল’-এর পসরা ঘিরে ভিড় হচ্ছে ভালই। ছোট মেয়েকে পুতুল কিনে দিচ্ছিলেন বিষ্ণুপুরের রসিকগঞ্জের অর্পণ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ওদেরও তো করোনা-যোদ্ধা বলা উচিত। ওদের ঘরেও তো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে। কোনও দরদাম করিনি।’’ দুর্গাপুর থেকে মেলায় এসেছিলেন সুচেতনা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘দারুন দেখতে পুতুলগুলো। নামটাও অভিনব।’’

শহরের সাংস্কৃতিক কর্মী দুর্গাদাস মুখোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন বিষ্ণুপুর মেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কত পথ, কত গল্প, কত লড়াই মিশে যায় একটা মেলায় এসে। ‘শিল্প, সুর আর জীবনের মেলা’ ট্যাগলাইনটা নৈহাটির ওই যুবকদের দেখে সত্যিই সার্থক মনে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur Lockdown doll West Bengal Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE