Advertisement
০৩ মে ২০২৪
ইলামবাজারে বধূর রহস্য-মৃত্যু, গ্রেফতার স্বামী এবং ননদ

কন্যা সন্তান হচ্ছে বুঝেই কি খুন অন্তঃসত্ত্বা বধূকে?

বুধবার সকালে ইলামবাজার হাটতলা এলাকায় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ নন্দীর বাড়ি থেকে তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রুমা নন্দীর (১৯) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত: ইলামবাজারের রুমা নন্দী। নিজস্ব চিত্র

নিহত: ইলামবাজারের রুমা নন্দী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইলামবাজার শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৬
Share: Save:

পণের দাবি, নাকি ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণের পরে কন্যা সন্তান হচ্ছে, সেটা বুঝেই কি পরিকল্পিত খুন— ইলামবাজারের অন্তঃসত্ত্বা বধূর মৃত্যুর পরে তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হল। প্রশ্ন উঠছে, ভ্রুণের লিঙ্গ পরীক্ষাই বা হল কোথায়?

বুধবার সকালে ইলামবাজার হাটতলা এলাকায় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ নন্দীর বাড়ি থেকে তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রুমা নন্দীর (১৯) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত বধূর বাবা তপন সেন
ইলামবাজার থানায় মেয়ের স্বামী, ননদ, শ্বশুর, শাশুড়ির বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন ও খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই বধূর বাপের বাড়ির অভিযোগ পেয়েই নিহতের স্বামী ও ননদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন: হেলমেট ছাড়া তেল, বিপাকে পাম্প

বুধবার লিখিত অভিযোগে পণের দাবিতে হত্যা বললেও, পরে মৌখিক ভাবে সংবাদমাধ্যম ও পুলিশের কাছে মেয়েকে মেরে ফেলার কারণ হিসেবে মেয়ের গর্ভে কন্যাসন্তান থাকাকেই দায়ি করেছেন বধূর বাপের বাড়ির লোকজন। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগে পণের দাবিতে অত্যাচার এবং খুনের অভিযোগ থাকলেও কন্যাভ্রুণ সংক্রান্ত কোনও কথাই ছিল না। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা তো অভিযোগ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নিয়েছি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়না-তদন্তও করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া শুধু বাকি। তবে কন্যাভ্রুণ নিয়ে যখন কথা উঠেছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।’’

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অগ্রহায়ণে দুবরাজপুর থানা এলাকার পছিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা তপন সেনের মেয়ে রুমা সেনের সঙ্গে ইলামবাজারের হাটতলার বাসিন্দা নবকুমার নন্দীর ছেলে বিশ্বজিতের বিয়ে হয়। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই নানা বিষয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে বিবাদ চলছিল রুমাদেবীর। লিখিত অভিযোগে তপনবাবু দাবি করেছিলেন, পণ দিয়েই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরও অত্যাচার করত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। মেয়ের গর্ভে সন্তান আসার পরে অত্যাচার আরও বাড়ে। যে দিন মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়, সে দিনও নাকি রুমা ফোনে বাপেরবাড়ির লোকেদের অত্যাচারের কথা জানিয়েছিল। ঘটনার পরই তপনবাবু মেয়ের শ্বশুর নবকুমার নন্দী, শাশুড়ি অপর্ণা নন্দী, জামাই বিশ্বজিৎ নন্দী ও ননদ প্রিয়ঙ্কা সেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নিহতের স্বামী ও ননদকে গ্রেফতারও করে।

শুক্রবার অবশ্য তপনবাবু দাবি করেন, ‘‘মেয়ের মৃত্যুর খবরে দিশেহারা হয়ে ওর গর্ভে সন্তান আসা, ভ্রুণের লিঙ্গ পরীক্ষা করানোয় কথা জানাতে পারিনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রুমার বাপের বাড়ির লোকেরা মেয়ের ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়েই মেয়ের উপরে অত্যাচার চলছিল। দিন কয়েক বাদেই যে মেয়ে মা হত, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার তাকে শেষ করে দিল ওরা।’’

কিন্তু, ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ তো আইনত দণ্ডনীয়। সেই পরীক্ষা হলই বা কোথায়? এ নিয়ে রুমার বাপের বাড়ির লোকেরা কিছুই জানাতে পারেননি। পুলিশ অভিযুক্তদের জেরা করে তার খোঁজ করার চেষ্টা করছে। পুলিশ-কর্তারা জানিয়ে রাখছেন, ল্যাবের নাম জানা গেলে রেয়াত করা হবে না তাদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Ruma Nandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE