Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
চাষে লোকসান, দাবি পরিবারের

মুরারইয়ে অপমৃত্যু ভাগচাষির

অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক ভাগচাষির। পরিবারের দাবি, সাত বিঘে জমিতে বোরো ধান চাষ করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন মুরারইয়ের রুদ্রনগর গ্রামের বুদ্ধদেব ভুঁইমালি (৬০)

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরারই শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ০২:০০
Share: Save:

অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক ভাগচাষির। পরিবারের দাবি, সাত বিঘে জমিতে বোরো ধান চাষ করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন মুরারইয়ের রুদ্রনগর গ্রামের বুদ্ধদেব ভুঁইমালি (৬০)। কালবৈশাখী ঝড়ে বসত বাড়িরও ক্ষতি হয়েছিল। তার জেরেই অবসাদে বুধবার ধানে দেওয়ার কীটনাশক খান ওই বৃদ্ধ। রবিবার সকালে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

রামপুরহাট হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বুদ্ধদেববাবুকে বুধবার সন্ধ্যায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছিল। চিকিৎসা চলাকালীন রবিবার সকালে তিনি মারা যান। মৃতের ছেলে টোটোন ভুঁইমালি জানান, এ বছর গ্রামের এক চাষির সাত বিঘে জমি ভাগে চাষ করেছিলেন বাবা। গত ২৯ এপ্রিল দুপুরের শিলাবৃষ্টিতে মাঠের পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। টোটোনের কথায়, ‘‘মাঠের ধান ঘরে তুলতে না পেরে বাবা মনকষ্টে ভুগছিলেন। তার উপরে বসত বাড়ির ছাউনি কালবৈশাখী ঝড়ে নষ্ট হয়েছিল। সমস্ত কিছু মিলে বাবা চাপা কষ্টে ভুগছিলেন।’’

বুদ্ধদেববাবুর আর এক ছেলে সৌমিত্র ভুঁইমালি জানান, বুধবার বিকালে বাড়ির সবার অলক্ষ্যে বাবা বাড়িতে থাকা ধানে দেওয়া কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে পাইকরে মুরারই ২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রবিবার সকালে মারা যান। মুরারই ২ ব্লকের রুদ্রনগর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা তৃণমূলের মসলিমা বিবির স্বামী খালেক শেখ বলেন, ‘‘চাষ করে ক্ষতির কথা শুনেছিলাম। তা বলে আত্মঘাতী হতে পারেন ভাবিনি।’’ রামপুরহাটের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘এমন খবর জানা নেই। ঠিক কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে জানব।’’ সাম্প্রতিক কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে মুরারই তো বটেই জেলাজুড়ে চাষে ক্ষতি হয়েছে। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে তার রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

গত দু’সপ্তাহে তিন ঠিকা-চাষির অপমৃত্যু হয়েছে পূর্ব বর্ধমানেও। ২৩ এপ্রিল শিলাবৃষ্টি-ঝড় এবং পরে কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতে জেলায় বড়সড় ক্ষতির মুখে বোরো ধান চাষ। আর এই ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে না পেরেই ভাতারে দু’জন চাষি আত্মঘাতী হন বলে দাবি পরিবারের। সেই
তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন: বর্ধমান ২ ব্লকের করুরি গ্রামের কার্তিক মণ্ডল (৭০)। গত মঙ্গলবার বাড়ির কাছেই গাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েন তিনি। উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও শুক্রবার রাতে মারা যান বৃদ্ধ।

প্রশাসন বা পুলিশের কর্তারা তিনটি আত্মহত্যাকেই সরাসরি চাষে ক্ষতির জের বলে মানতে নারাজ। তবে প্রশাসনের অন্দরে আলোচনা হচ্ছে বোরো মরসুমে ঠিকা-চাষিদের ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা নিয়ে। কর্তাদের একাংশের দাবি, বোরো মরসুমে (‌ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস)
ঝড়-জলে চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা মাথায় রেখেও বেশি লাভের আশায় ফাটকা খেলেন অনেক চাষি, যার ফল ভাল হয় না। কার্তিকবাবুর আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে বিডিও-র কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murarai unnatural death sharecropper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE