Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Anubrata Mondal

শিবঠাকুরের আপন দেশে…

আপাতত রাজনীতি থেকে খানিকটা দূরে শিবঠাকুর। এখন কাজ বলতে বিভিন্ন জায়গায় বরাত পেয়ে কীর্তন গাওয়া। নিজের একটি কীর্তনের দলও রয়েছে শিবঠাকুরের।

শিবঠাকুর মণ্ডল।

শিবঠাকুর মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:২৩
Share: Save:

মঙ্গলবার থেকে তিনি শিরোনামে। মঙ্গলবার থেকে তিনি বাংলা জুড়ে আলোচিত। অনুব্রত মণ্ডলকে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। কিন্তু তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে। আইন সম্পর্কে যে জ্ঞান তিনি দেখিয়েছেন, তাতে চমৎকৃত রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা! অনেকের তাই সুকুমার রায়ের কবিতার কথা মনে পড়ছে— ‘শিবঠাকুরের আপন দেশে...’।

তিনি— শিবঠাকুর মণ্ডল।

তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রতের দিল্লিযাত্রা থমকে গিয়েছে শিবঠাকুরের করা অভিযোগের জেরে। অনেকে বলছেন, শিবঠাকুরই কেষ্টঠাকুরের ‘ত্রাতা’ হয়ে দেখা দিলেন। কারণ, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই অনুব্রতকে নিজেদের হেফাজতে পেল জেলাপুলিশ। অর্থাৎ, হাতে পেল না ইডি। যারা অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে চেয়েছিল।

বীরভূমের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মেজে গ্রামের বাসিন্দা শিবঠাকুর গত সোমবার রাতে পুলিশে অভিযোগ করেন, অনুব্রত ২০২১ সালে তাঁকে গলা টিপে খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। খুনের চেষ্টার অভিযোগে মঙ্গলবার সকালেই কারাবন্দি অনুব্রতকে নিয়ে আদালতে দৌড়য় পুলিশ। তাঁকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানায় তারা। বিচারক সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। অনুব্রতের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেননি আদালতে। দিনের শেষে অনুব্রতকে হেফাজতে পেয়েছে জেলাপুলিশ। হাতে পায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

কেন শিবঠাকুর ঘটনার এক বছর পরে অভিযোগ করলেন? তিনি জবাব দিয়েছেন, অনুব্রত জেলে আছেন বলে। বাইরে থাকার সময় ভয়ে অভিযোগ করতে পারেননি। ঠিকই। আইনের দিক দিয়ে কোনও সমস্যা নেই। রাষ্ট্রের কোনও নাগরিক যে কোনও সময়ে যে কোনও অভিযোগ আনতে পারেন। শিবঠাকুরও এনেছেন। সে বিরোধীরা যতই বলুন, ‘সাজানো মামলা’ করা হয়েছে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া আটকাতে। বিরোধীরা বলছেন, তৃণমূল শিবঠাকুরকে দিয়ে ওই অভিযোগ করিয়েছে! শাসকদল তা মানছে না। বরং তারা উল্টে দলের ওজনদার নেতার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করার জন্য শিবঠাকুরকে সাসপেন্ড করেছে। নিখুঁত। শিবঠাকুরের আপন দেশে...।

চল্লিশোর্ধ্ব শিবঠাকুর বীরভূম জেলার রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন সিপিএমের হাত ধরে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দুবরাজপুরের ‘দাপুটে’ সিপিএম নেতা সাধন ঘোষের সঙ্গে দেখা যেত শিবঠাকুর। তখন সাধনের ‘সারথি’ হিসাবে কাজ করতেন শিবঠাকুর। তাঁকে বাইকে চড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই ছিল শিবঠাকুরের দায়িত্ব।

শিবঠাকুরের স্ত্রী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁদের দুই সন্তান। এক জন পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। অন্য জন শিশুশ্রেণির পড়ুয়া। বাবা তুলসীদাস দিনমজুর। চাষ-আবাদের কাজ করতেন। ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘শিবঠাকুর’। বালিজুড়ি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা। কয়েক বারের চেষ্টায় মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে ভর্তি হয়েছিলেন গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। কিন্তু পাশ করতে পারেননি। শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা জানতে চাইলে সামান্য কুণ্ঠাবোধ করেন। কিন্তু রাজনীতির কথা উঠলে তিনি অনর্গল।

২০১১ সালে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শিবঠাকুর। ২০১১ সালে ‘পরিবর্তনের সরকার’ ক্ষমতায় আসার সঙ্গেই শিবঠাকুরেরও রাজনৈতিক ঠিকানা ‘পরিবর্তন’ হয়েছিল। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন। কিন্তু তাঁর দাবি, আড়াই বছর প্রধান থাকার পর অনুব্রতের নির্দেশেই তাঁকে প্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ছ’মাস পর আবার ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হন শিবঠাকুর। যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন, তাঁরাই আবার ‘আস্থা’ দেখান।

কিন্তু জেলা তৃণমূলের বড় অংশের সঙ্গে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আবার শিবঠাকুরের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শিবঠাকুরের দাবি, তিনি দলের কাছে পাঁচটি টিকিট চেয়েছিলেন। কিন্তু জেলার নেতারা সেই আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান।

এখনও তিনি আপাতদৃষ্টিতে রাজনীতি থেকে খানিকটা দূরেই। কাজ বলতে নিজের কীর্তনের দল নিয়ে বরাত পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় কীর্তন গেয়ে বেড়ানো। শিবঠাকুরের কথায়, ‘‘আমি এখন এমনই একটা জমি, যেখানে ধান তৈরি হয় না। ফলে সাধারণ মানুষের পাশে আমি দাঁড়াতে পারি না। তবে এর মধ্যেও আমি সকলের পাশে থাকার চেষ্টা করি।’’

বিরোধীরা বলছেন, আপাতত কেষ্টর পাশে রয়েছেন শিবঠাকুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mondal ED police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE