E-Paper

কোর্টে শীলার স্বস্তি, শুরু অনাস্থার সলতে পাকানোও

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, শীলা হয়তো অনাস্থা ভোট এড়াতে পারবেন না।কংগ্রেস ও নির্দল জোটের সমর্থনে শীলা পুরপ্রধান হলেও কয়েকমাস আগে তিনি তৃণমূলে যোগ দিতেই সমীকরণ বদলায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৬
ঝালদার পুরপ্রধানের এই চেয়ার নিয়েই টানাটানি।

ঝালদার পুরপ্রধানের এই চেয়ার নিয়েই টানাটানি। ফাইল চিত্র।

হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে শুক্রবারের আস্থা প্রমাণের পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি পেলেন ঝালদার পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু একই সঙ্গে বিরুদ্ধ পক্ষের আস্থা ভোটের মুখে পড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হল।

শীলার অপসারণ চেয়ে হাই কোর্টে পৃথক ভাবে মামলা করেছিলেন কংগ্রেসের দুই এবং তৃণমূলের পাঁচ পুরপ্রতিনিধি। তার প্রেক্ষিতে ৩০ নভেম্বর বিচারপতি অমৃতা সিংহ পুরপ্রধানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে কি না, তা পুরুলিয়ার জেলাশাসককে খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলেন। শুক্রবার সেই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। যদিও তার আগেই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন শীলা। বুধবার সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই নির্দেশকে খারিজ করে দিল ডিভিশন বেঞ্চ।

শীলার আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ পুরোপুরি খারিজ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুরলীধরণের নির্দেশ, পুরপ্রধানের প্রতি আস্থা না থাকলে পুর-আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে হবে।’’ শীলা বলেন, ‘‘ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে স্বাগত জানাই।’’ তবে কংগ্রেসের তরফে আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর দাবি, ‘‘১২টি আসনের পুরসভায় সাতজনই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এতেই স্পষ্ট পুরপ্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। তাই পদ থেকে তাঁর সরে যাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, শীলা হয়তো অনাস্থা ভোট এড়াতে পারবেন না।কংগ্রেস ও নির্দল জোটের সমর্থনে শীলা পুরপ্রধান হলেও কয়েকমাস আগে তিনি তৃণমূলে যোগ দিতেই সমীকরণ বদলায়। কংগ্রেসের দুই পুরপ্রতিনিধি তাঁর বিপক্ষে চলে গিয়েছেন। তৃণমূলের পাঁচ আদি পুরপ্রতিনিধিও শীলাকে পুরপ্রধান হিসেবে মানতে নারাজ। ইতিমধ্যেই তাল ঠুকতে শুরু করেছেন শীলার বিরোধীরা।

মামলাকারীদের অন্যতম ঝালদার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল বলেন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশে শীলার পুরপ্রধানের মেয়াদ ছিল ৩০ নভেম্বর। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পরে এখন পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ডাকার ক্ষেত্রে আইনগত কোনও সমস্যা আর থাকল না।’’

তাহলে কি পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করা পুরপ্রতিনিধিরা এ বার অনাস্থার দিকে পা বাড়াবেন? না ভাঙলেও সুরেশের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য, ‘‘সবটা আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক করা হবে।’’ কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি বিপ্লব কয়াল বলছেন, ‘‘পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে আইনগত কোনও বাধা রইল না। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনাও শুরু করেছি। পুরপ্রধান যে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন, অচিরেই তা প্রমাণিত হবে।’’

শীলা ও কংগ্রেসের চার পুরপ্রতিনিধিকে তৃণমূল শিবিরে আনার নেপথ্যে থাকা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস আইনি জট পাকিয়ে ঝালদার উন্নয়ন পুরো থমকে দিতে চাইছে। তবে লাভ হবে না। এলাকার মানুষ সত্যিটা জেনে গিয়েছেন।’’ সে অভিযোগ উড়িয়ে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘পুরপ্রধানের প্রতি আস্থা নেই বলেই সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরপ্রতিনিধি তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন। তাঁরা যথেষ্ট সচেতন। আস্থা না থাকলে তাঁরা অবশ্যই পুরআইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করবেন।’’

ইতিহাস বলছে, ঝালদা পুরসভার ক্ষমতা হাতবদল করতে বারবার অনাস্থা এসেছে। সেই ইতিহাসেরই কি পুনরাবৃত্তির মুখে ঝালদা?
চর্চা চলছে শহরে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhalda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy