আড়াই বছর আগে পুরুলিয়ার ঝালদায় পুর-বোর্ড গঠনের মুখে আততায়ীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন কংগ্রেসের পুর-প্রতিনিধি তপন কান্দু। এ বারে তাঁর স্ত্রী তথা দলেরই পুর-প্রতিনিধি পূর্ণিমা কান্দুর (৪২) অপমৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে চর্চা। মৃত্যুর পিছনে কী কারণ, নানা প্রশ্ন ঘুরছে সাধারণ মানুষ থেকে জেলা রাজনীতির অলিন্দে।
২০১৫ সালে পুরভোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে ভোটে লড়ে রাজনীতিতে পদার্পণ পূর্ণিমার। তখন তপন বাম (ফব) শিবিরে। বড় জা তথা কংগ্রেসের বাবি কান্দুর বিরুদ্ধে লড়ে পরাজিত হন পূর্ণিমা। পরে তপন কংগ্রেসে যোগ দিলে পূর্ণিমাও সেই পথ ধরেন। ২০২২-র পুরভোটে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ে জোড়া সাফল্য মেলে দম্পতির।
ঝালদা পুর-শহরের রাজনীতিতে পূর্ণিমার পরিচয় ছিল এক সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে। কিন্তু তপনের হত্যার পরে বদলায় পরিস্থিতি। পুর-শহরের রাজনীতির অলিন্দ থেকে এক প্রতিবাদী নারীকে উঠে আসতে দেখা যায়। হাই কোর্টে তপনের হত্যার বিচার চেয়ে, কখনও মহিলাদের নিয়ে ঝালদার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করা থেকে পুরপ্রধানের কুর্সিতে বসা এবং পরে ‘নৈতিকতা’র জায়গা থেকে ইস্তফা দেওয়া—নানা ভাবে দেখা গিয়েছে পূর্ণিমাকে। বারে বারেই জানিয়েছেন, স্বামী হত্যার বিচার পাবেন। আদালতের প্রতি তাঁর আস্থা রয়েছে।
পূর্ণিমার মৃত্যুতে পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের দাবি, পূর্ণিমা কান্দুর মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঠিক মতো ময়নাতদন্ত হলে হয়তো সত্য সামনে আসবে। তাঁর সংযোজন, ‘‘সিবিআইয়ের কাছে আমাদের আবেদন, তপনের খুনের মূল মামলার সঙ্গে পূর্ণিমার মৃত্যুর ঘটনাও যুক্ত করা হোক।’’ সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোও। তিনি বলেন, “তপন কান্দুর খুনের পিছনে যে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, তা সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পূর্ণিমাদেবীর মৃত্যুর পিছনেও নির্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে।” তাঁর দাবি, “এমনও হতে পারে যে, স্বামীর হত্যার পিছনে কারা রয়েছে, তা জেনে ফেলেছিলেন পূর্ণিমা। আমরা দাবি করছি এই মৃত্যুর ঘটনাটিকেও সিবিআই তদন্তে যুক্ত করা দরকার। রাজ্য সরকারের তদন্তে আমাদের আস্থা নেই। তপনকেও শাসকদলে যোগ দিতে চাপ দেওয়া হয়েছিল। তপনের হত্যার পরে তা সামনে এসেছিল। এখানেও কী ঘটেছে, তার তদন্ত হওয়া দরকার।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, “আগে ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসুক। তার পরে আমরা ঠিক করব এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হব কি না।” একই কথা জানিয়েছেন তপনের ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে আসা ও পরে তৃণমূলে যোগ দেওয়া তাঁর ভাইপো মিঠুন কান্দুও। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। পুলিশ বিষয়টি দেখছে। আমরাও চাই, ঘটনার পিছনে কোনও কারণ থাকলে তা সামনে আসুক।”
এ দিকে, পূর্ণিমার মৃত্যুর পরে তাঁর ওয়ার্ডেও অকাল নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়েও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে সদুত্তর মেলেনি। ঝালদার পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী ছ’মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করতে হয়। তবে পরিস্থিতির বিচারে অনেক সময়ে তার পরেও উপনির্বাচন হয়। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)