Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সৌরশক্তির পাম্পে সজল অনুর্বর জমি

কেন্দা পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থসারথি মাহাতো বলেন, ‘‘সেচের অভাবে অনুর্বর জমিতে চাষবাস বিশেষ হয় না। তাই এলাকার অনেকেই বাইরে কাজ করতে যান।

ভরসা। সৌরাং গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

ভরসা। সৌরাং গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
কেন্দা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৬
Share: Save:

এক দশক আগেও ছবিটা অন্য রকম ছিল। অনুর্বর এবড়ো-খেবড়ো কাঁকুড়ে জমি। সেচের বালাই নেই বললেই চলে। বর্ষায় এলাকার লোকজন কোনও রকমে এক বার ধান তুলতে পারলে, ‘এই যথেষ্ট হয়েছে’ মনে করেন চাষিরা। কেন্দা থানার তেমনই এক গ্রাম সৌরাং এলাকায় ফলের বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাসিন্দারা। কেন্দা পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ১০০ দিনের প্রকল্পে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এলাকার বহু মানুষ এখানে ফল ও ওষধি গাছের চাষ করছেন। সম্প্রতি অনগ্রসর শ্রেণি কল্যান দফতরের কাছ থেকে একটি সৌরশক্তির পাম্প পেয়ে তাঁরা যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার আনন্দ পেয়েছেন। সেচের সমস্যা মিটে যাওয়ায় দ্বিগুণ উৎসাহে তাঁরা মাঠে নেমেছেন।

কেন্দা পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থসারথি মাহাতো বলেন, ‘‘সেচের অভাবে অনুর্বর জমিতে চাষবাস বিশেষ হয় না। তাই এলাকার অনেকেই বাইরে কাজ করতে যান। পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্ব পেয়েই একশো দিনের প্রকল্পে জোর দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে সবাইকে বছরে সব দিন কাজ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে সৌরাং গ্রামে ২৪টি পরিবারের প্রায় ৪০ একর রায়তি জমিতে ফলের গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিই।’’ ওই পরিবারগুলির মধ্যে পাঁচটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। প্রথমে তাঁরাই কাজে নেমেছিলেন। পরে ধীরে ধীরে এলাকার বহু মানুষ সেখানে কাজে নেমেছেন। তাঁরা একশো দিনের প্রকল্পে মজুরি পান। আর ফল বিক্রির লভ্যাংশ পাচ্ছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা।

পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বাগানে আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ইত্যাদি প্রজাতির প্রায় ২২০০ আম গাছ রয়েছে। এ ছাড়া ১৬০০টি কুল গাছ, এক হাজার কাগজি লেবুর গাছ, ৪০০টি পেয়ারা এবং প্রায় ৩০০ সবেদা গাছ রয়েছে। এ বছর গ্রীষ্মে এই বাগানের উৎপাদিত আম পুরুলিয়ার আম্রমেলায় গিয়ে প্রশংসাও কুড়িয়েছে বলে পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি। তিনি জানান, ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে এই বাগানের নার্সারি থেকে অর্জুন, আমলকি, নিম, গামার, বহেড়া, সেগুন ইত্যাদি গাছের এক লক্ষ চারা ব্লকের অন্যান্য পঞ্চায়েতে দেওয়া হয়েছে।

কাছেই কংসাবতী নদী থাকলেও জল বেশি দিন সেখানে থাকে না। তাই প্রখর গ্রীষ্মে এই সব গাছ টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ। তবে উদ্যানপালন দফতরের প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে এখানকার বাগানে মাইক্রোওয়াটার শেডের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাছের গোড়ার কাছে একটি করে ছিদ্রযুক্ত মাটির ভাঁড় রয়েছে। নলকূপ থেকে জল বয়ে এনে শ্রমিকেরা ওই ভাঁড় ভর্তি করেন। ছিদ্র দিয়ে জল গাছের গোড়া ভিজিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। শেষে সৌরশক্তি চালিত পাম্প পেয়ে স্বস্তি পেয়েছেন বাগানের চাষিরা।

তাঁদের মধ্যে পদ্মলোচন মুদি, মথুর মুদি, আহ্লাদ মুদি বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও এই জায়গা পতিত কাঁকুড়ে জমি হিসেবে পড়েছিল। কোনও ফসল ফলাতে পারতাম না। এখন সবুজ বাগান হয়েছে। প্রতি দিন কাজ পাচ্ছি। ফল বিক্রির লাভের একটা অংশও পাচ্ছি। পাম্পের জল এসে যাওয়ায় সেচের চিন্তাও কাটল।’’

বিডিও (পুঞ্চার) অজয় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কেন্দার সৌরাং গ্রামের ফলের বাগানের সৌজন্যে ওই এলাকায় কর্মদিবসের সংখ্যা বেড়েছে। সেখানকার উৎকৃষ্ট মানের আম জেলা ও রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় সকলের নজর কেড়েছে। এই ফলের বাগান কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, তার পরিকল্পনা চলছে।’’ পাশে রয়েছে উদ্যানপালন দফতরও। ওই দফতরের ব্লকের আধিকারিক অসীম মিশ্রের আশ্বাস, ‘‘সব ভাবে ওই বাগানের কর্মীদের সহায়তা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Solar pump Barren land
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE