Advertisement
E-Paper

নিজের জেলায় সব মতকে মেলালেন সোমনাথ

সোমনাথবাবু যখন বোলপুরের সাংসদ, রামচন্দ্রবাবু তখন বীরভূমের। দু’দশক সোমনাথবাবুকে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি।

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:২২
কলকাতায় এসে প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানালেন সুমিত্রা মহাজন। —নিজস্ব চিত্র

কলকাতায় এসে প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানালেন সুমিত্রা মহাজন। —নিজস্ব চিত্র

সাধের ‘খেয়া’য় আর আসবেন না সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় (১৯২৯-২০১৮)।

তাঁর প্রিয় জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল শান্তিনিকেতন। আট বছর আগে শান্তিনিকেতন লাগোয়া সোনাঝুরি পল্লিতে ‘খেয়া’ আবাসনে ফ্ল্যাটও কিনেছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য নিজের ঘরেই শেষ দেড় বছর আসতে পারেননি তিনি। ঘনিষ্ঠমহলে সে জন্য আক্ষেপ করতেন বারেবারেই। সোমবার সাত-সকালে তাঁর মৃত্যুসংবাদ যখন পৌঁছল, তখনও ঘুম ভাঙেনি বোলপুরের।

প্রায় পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনের শেষ চার বার নির্বাচিত হয়েছিলেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকেই। অনেকের কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। সোমনাথবাবুর ফ্ল্যাটের চাবি থাকত অধ্যাপক স্বপন মুখোপাধ্যায়ের কাছে। এ দিন সকালে প্রিয় দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন। ফ্ল্যাটের চাবি খুলতে খুলতেই স্বপনবাবু বললেন, ‘‘যখন বোলপুরে আসতেন ডেকে নিতেন। ফিরে যাওয়ার আগে চাবি দিয়ে বলেছিলেন, আবার আসবেন। কিন্তু, আর তো আসবেন না!’’

২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লোকসভার স্পিকার থাকার পরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। এ বার বিদায় নিলেন জীবন থেকেও। ৮৯ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় সোমবার সকালে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় সোমনাথবাবুর। সেই খবর পাওয়া মাত্রই নানা চর্চা চলছে বোলপুরে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রামচন্দ্র ডোম সোমনাথবাবুর কথা তুলতেই ফিরে গিয়েছেন স্মৃতিতে। সোমনাথবাবু যখন বোলপুরের সাংসদ, রামচন্দ্রবাবু তখন বীরভূমের। দু’দশক সোমনাথবাবুকে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি।

একটা ঘটনার কথা জানালেন রামচন্দ্রবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৯৫-৯৬ সাল হবে। সোমনাথদা তখন বোলপুরের সাংসদ। নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখতে বেরিয়েছেন। তখন বোলপুর লোকসভার মধ্যেই কেতুগ্রাম এলাকা পড়ত। ওই এলাকার একটা মেয়ে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে এসেছে। সোমনাথদাও সবার সঙ্গে কথা বলছেন। সোমনাথদাকে সামনে পেয়ে মেয়েটা হঠাৎ বলল, ‘জেঠু, আমি অন্ধকারে কী করে পড়ব?’ তা শুনে সোমনাথদাও বললেন, ‘ঠিক আছে তুমি যাও। দেখি কী করা যায়’। পরে জেনেছিলাম, গ্রামের বিদ্যুদয়নের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। সংসদ উন্নয়ন তহবিল থেকে নয়। সরকারি ভাবে দিতে গেলে দেরি হবে, এই ভেবেই হয়তো তড়িঘড়ি টাকা দিয়েছিলেন। এমনটা বহুবার করেছেন।’’

জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। রাজনীতির বিভিন্ন খবরাখবর আর বই-পড়া হয়েছিল সঙ্গী। শেষ দিকে শ্বাসকষ্ট বাড়ছিল। বারে বারে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তবুও পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সব খবর রাখতেন। বীরভূম নিয়ে আলাদা আগ্রহ ছিল তাঁর। বিশিষ্ট সমাজসেবী ও চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সোমনাথদা দীর্ঘ দিনের পরিচিত শুধু নন, অভিভাবকের মতো ছিলেন। বোলপুরের বাইপাস রাস্তা, বোলপুর-বর্ধমান রাস্তা, প্রান্তিক উপনগরী, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, জলনিকাশি ব্যবস্থা সব করেছিলেন।’’

বিরোধী রাজনৈতিক দলের হলেও সোমনাথবাবুর প্রশংসা শোনা গিয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গলায়। অনুব্রতর কথায়, ‘‘সোমনাথবাবু লোক হিসেবে খুব ভাল ছিলেন। বোলপুরের উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। এটা অস্বীকার করব না। আমার সঙ্গে দলগত অমিল থাকতে পারে, কিন্তু কাজের দিক থেকে উনি খুব ভাল ছিলেন। আমরা এক জন ভাল মানুষকে হারালাম।’’ সোমনাথবাবুর প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও।

Death Somnath Chatterjee সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy