Advertisement
E-Paper

বারবার হাত এগিয়েছেন, বলছে জেলা

সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে গেলে খালি হাতে ফেরাতেন না কাউকেই। সাংসদ তহবিলের টাকায় শহর, গঞ্জ, গ্রামে একাধিক কাজে তো বটেই, ব্যক্তিগত ভাবেও আম-জনতার কাছের মানুষ হয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।

দয়াল সেনগুপ্ত ও অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:২৮
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে গেলে খালি হাতে ফেরাতেন না কাউকেই। সাংসদ তহবিলের টাকায় শহর, গঞ্জ, গ্রামে একাধিক কাজে তো বটেই, ব্যক্তিগত ভাবেও আম-জনতার কাছের মানুষ হয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।

জেলার অনেকের মুখে আজ ঘুরেছে এমন কথাই। একই কথা শুনিয়েছেন দুবরাজপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান মধুসূদন কুণ্ডু, ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত তরুণের বাবা নিমাই ঘোষ, নামোকোঁন্দার সকলে।

‘‘অত্যন্ত খোলা মনের মানুষ ছিলেন তিনি। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় কখনও তাঁর পদমর্যাদা সামনে আসেনি। ভাল কাজ করলে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই নেতা-কর্মীদের প্রশংসা করেছেন’’— সোমবার এ কথাই বলেন মধুসূদনবাবু। তিনি জানান, ২০০২ সালের শেষ দিক। দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরে পার্ক তৈরির জন্য তৎকালীন সাংসদ সোমনাথবাবুর কাছে ৩২ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন তিনি। তবে এত টাকা তখনই পার্ক গড়তে দিতে চাননি। পরিবেশ দফতর ও পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে পার্ক তৈরির পরে ২০০৩ সালে তার উদ্বোধনে এসেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন সোমনাথবাবু। পার্ক দেখে তিনি এতটাই খুশি হন প্রকাশ্যেই মধুসূদনবাবুর পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন। মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করেন পার্কের উন্নয়নে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা।

ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিলেন দুবরাজপুরের কাজল ঘোষ। ভিনরাজ্যে তাঁর চিকিৎসার খরচের একটা বড় অংশ দিয়েছিলেন সোমনাথবাবু। কাজলের বাবা নিমাইবাবু জানান, সফল অস্ত্রোপচার হলেও, তার ৩২ দিন পরে মারা যান তাঁর ছেলে। কিন্তু ১৯ বছর পরেও সোমনাথবাবুর সাহায্যের কথা ভুলতে পারেননি নিমাইবাবু।

মল্লারপুরের নামোকাঁন্দা। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দাঁড়কা নদী। এক সময় অন্য জায়গার সঙ্গে যোগাযোগের পথে বাধা ছিল সেই নদীই। দুর্ভোগে ছিলেন নামোকাঁন্দা-সহ ১০-১২টি গ্রামের বাসিন্দারা।

সমস্যার কথা শুনে সাহায্যের হাত এগিয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।

দাঁড়কা নদী পেরিয়ে বিলাসপুরে পৌঁছেই স্কুল-কলেজ, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অন্য সরকারি পরিষেবার নাগাল মেলে। আগে সে জন্য ১৫-২০ কিলোমিটার ঘুরপথে সেখানে যাওয়া যেত।

স্থানীয় সূত্রে খবর, নদীতে সেতু না থাকায় সেই দুর্ভোগ পোহাতে হত নামাকোঁন্দাকে। নৌকা, লোহার কড়াই ছিল নদী পারাপারের মাধ্যম। বর্ষায় কার্যত জলবন্দি হত গোটা এলাকা। নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু তা মেটেনি। একে একে সেই গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে শুরু করেছিলেন অনেকেই। তাঁদেরই এক জন স্কুলশিক্ষক সুধাংশুশেখর সরকার। এখন মল্লারপুরের বাসিন্দা। তিনি জানান, এক সময় ওই গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবারের বসবাস ছিল। যোগাযোগের সমস্যায় শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে যান।

সে কথা পৌঁছেছিল সোমনাথবাবুর কাছে। তখন তিনি এলাকার সাংসদ। ২০০৪ সালে তৎকালীন বিধায়ক প্রয়াত বিষ্ণু লেটের সঙ্গে বিলাসপুরে একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ দূর করার আশ্বাস দেন তিনি। নিজের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থবরাদ্দ করেন। বছরখানেকেই ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে নামোকাঁন্দা ও বিলাসপুর গ্রামের মধ্যে যোগসূত্র গড়তে ঘাটকালীতলায় দ্বারকা নদীতে হেঁটে যাতায়াতের উপযোগী সেতু তৈরি করা হয়। ২০০৫ সালে সেতুর উদ্বোধন করতে ওই গ্রামে গিয়েছিলেন সোমনাথবাবু।

সংস্কারের অভাবে সেই সেতু এখন বেহাল। সেতু থেকে খসে পড়েছে উদ্বোধনী ফলক। কিন্তু সেই ফলক সযত্নে তুলে রাখা হয়েছে স্থানীয় আশ্রমে। আশ্রম কমিটির সম্পাদক নিশাকর লেট বলেন, ‘‘ওই ফলকের সঙ্গে আমাদের দুর্ভোগ দূর করার কাণ্ডারি সোমনাথবাবুর স্মৃতি জড়িয়ে। ভাবতেই পারছি না উনি আর নেই।’’

লোকসভার প্রাক্তন স্পিকারের মৃত্যুসংবাদ শুনে এ ভাবেই মুষড়ে পড়েছে নামাকোঁন্দা। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সুনীল সরকার বলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলে যাওয়াটাই দস্তুর রাজনৈতিক অনেক নেতার। উনি কথা রেখেছেন। না হলে হয়তো এত দিনে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হত সবাইকেই।’’

Somnath Chatterjee CPM Lok Sabha Speaker সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy