Advertisement
E-Paper

ওষুধ খেতে বলে জাঁতার বাড়িতে খুন

আশুরালি গ্রামের দীনবন্ধু দে এবং ছায়ারানি দে-র এক ছেলে এক মেয়ে। দীনবন্ধু পেশায় চাষি। সম্বল দেড় বিঘা জমি। বছর দুয়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৯
নিহত: ছায়ারানি দে। নিজস্ব চিত্র

নিহত: ছায়ারানি দে। নিজস্ব চিত্র

ওষুধ খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিলেন। অভিযোগ, তার জেরেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের হাতে খুন হলেন প্রৌঢ়া। মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার আশুরআলি গ্রামের পূর্ব পাড়ার ঘটনা। নিহতের নাম ছায়ারানি দে (৪৫)। তাঁর স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলে শ্রীমন্ত দে-কে গ্রেফতার করছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের কথা স্বীকারও করেছে বলে দাবি পুলিশের। বুধবার বিষ্ণুপুর আদালতে ধৃতের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।

আশুরালি গ্রামের দীনবন্ধু দে এবং ছায়ারানি দে-র এক ছেলে এক মেয়ে। দীনবন্ধু পেশায় চাষি। সম্বল দেড় বিঘা জমি। বছর দুয়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। পড়শিরা জানান, ছেলে শ্রীমন্ত দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় থেকে তার সমস্যার শুরু। সেই সময়ে পড়াশোনা নিয়ে বাবা বকাবকি করায় সে একবার কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিল বলে পড়শিদের দাবি।

বুধবার সকালে আশুরালি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছেন ছায়ারানির মেয়ে। বাড়ির সামনে ভিড় করেছিলেন পড়শিরা। তাঁদের মধ্যে আবুল মণ্ডল, তরুণ দে, শৈলেন চৌধুরীরা জানান, পড়াশোনা ছেড়ে শ্রীমন্ত বাড়িতেই থাকত। মাঝে মধ্যে বাবার সঙ্গে মাঠে যেত। কারও সঙ্গে বিশেষ মিশত না। তবে খারাপ ব্যবহারও করত না। শ্রীমন্তর পিসি সত্যবালা নন্দী বলেন, ‘‘দূর দূরান্তে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে বসেছিল দীনবন্ধু। কয়েক মাস হল বর্ধমানের এক ডাক্তার ছেলেটাকে দেখছিলেন। চট করে কাউকে কিছু বলত না শ্রীমন্ত। তবে দিন পনেরো আগে এক পড়শিকে মারতে গিয়েছিল। বড্ড একগুঁয়ে স্বভাব ওর। কোনও বন্ধু নেই।’’

জেলা এই ধরনে ঘটনা প্রথম নয়। বছরখানেক আগে বাঁকুড়া শহরের পাঁচবাগা এলাকায় নিজের বৃদ্ধ মাকে খুন করে বাড়ির উঠোনে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ছেলের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছিল, ছেলেটির মানসিক সমস্যা ছিল।

কী হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে?

সত্যবালা জানান, শ্রীমন্ত ওষুধ খাবে না বলে রোজই গোঁ ধরত। তা নিয়ে মায়ের সঙ্গে ঝামেলা হত। ওই দিন সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে গোয়ালে গিয়ে গরুর দুধ দুইয়ে এনে ঘরেই বসেছিল শ্রীমন্ত। দীনবন্ধু বাড়িতে ছিলেন না। শ্রীমন্তের দুঃসম্পর্কের ভাই অরূপ দে জানান, হঠাৎ দূর থেকে চিৎকার শুনতে পেয়ে তাঁরা শ্রীমন্তদের বাড়িতে ছুটে যান। দেখেন, ছায়ারানি পড়ে রয়েছেন। মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পাশে পড়ে কলাই পেষার পাথরের জাঁতা। ঠিক পাশে বসে বিড়বিড় করছে শ্রীমন্ত। জিজ্ঞাসা করায় সে জানান, ওষুধ খাওয়া নিয়ে জোর করছিল বলে সে এমনটা করে ফেলেছে। পুলিশের দাবি, জেরাতেও ধৃত এই কথাই জানিয়েছে।

খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় জাঁতাটিও। দীনবন্ধুর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় শ্রীমন্তকে। রুজু হয়েছে খুনের মামলা। পুলিশ জানিয়েছে, ছায়ারানির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে দীনবন্ধু বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় কী কুক্ষণে যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। থাকলে হয়তো এমনটা হতো না।’’

Woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy