ডিজিটাল রেশন কার্ড নিয়ে টুকরো টুকরো কিছু সমস্যা মেটেনি দু’বছর পরেও! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূম জেলা সফরের আগে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ব্লক প্রশাসনের সমন্বয় বৈঠকে সেই সমস্যার কথাই ঘুরে ফিরে উঠে এল সোমবারের বৈঠকে। উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা সুযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জানিয়ে দিলেন, এখনও অনেকে ডিজিটাল রেশন-কার্ড পাননি। কোথাও আগে বিপিএল তালিকায় নাম থাকা পরিবার নতুন পাওয়া কার্ডে এপিএল তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়েছেন! পরিবারের পাঁচ সদস্যের তিন জনের রেশন কার্ড এসেছে, বাকি দু’জনের আসেনি এমনও হয়েছে। ডিলার মাল দিয়ে রসিদ দেন না এমন অভিযোগও তুললেন কেউ কেউ।
গত বছরের গোড়া থেকে ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প’ এবং ‘রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা’র আওতায় এসেছেন মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। তাঁদের ডিজিটাল রেশন কার্ড রয়েছে। বীরভূমও এর ব্যতিক্রম নয়। এত দিন কেটে যাওয়ার পরেও ডিজিটাল রেশন কার্ডে ভুল-ত্রুটি ও গণবণ্টন ব্যবস্থার সুবিধে-অসুবিধে নিয়ে এখনও নানা অভিযোগ রয়েছে দেখে গুরুত্ব দিয়ে শুনে জেলা প্রশাসন বুঝিয়ে দিল তাঁরা সমস্যা মেটাতে আন্তরিক। সোমবার সিউড়ি ২ ব্লকে ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের বৈঠকে রেশন সংক্রান্ত এমন নানা অভিযোগ মন দিয়ে শোনেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী নিজেও। শেষে তিনি জানান, ডিজিটাল রেশন কার্ড যাঁদের পাওয়ার কথা তাঁদের দেওয়া হয়েছে। কিছু কার্ড গ্রাম পঞ্চায়েত মারফত বিলি হয়নি। কারণ, যাঁদের কার্ড তাঁরা উপযুক্ত প্রমাণ দেখিয়ে সেই কার্ড নেননি। তাই ফেরত গিয়েছে। আর কার্ডে যে ক্রটি বিচ্যুতি রয়েছে, সেটা সংশোধন করা চলমান একটি প্রক্রিয়া। এটা বন্ধ হবে না।
জেলাশাসককে হাতের নাগালে পেয়ে রেশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিচ্যুতি তুলে ধরেন পঞ্চায়েত প্রধান ও জন প্রতিনিধিরা। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষায় পরে কার্ড এলেও সে কার্ড বিলি করতে না পারার প্রসঙ্গ। এ প্রসঙ্গে আরও একটি অভিযোগের সুরাহা করতে জেলাশাসককে অনুরোধ করেন জনপ্রতিনিধিরা। সেটা হল, সিউড়ি ২ ব্লকের কেন্দুয়া পঞ্চায়েতের বহু মানুষকে রেশন নিতে অনেকটা পথ উজিয়ে সিউড়ি পুর এলাকার হাটজনবাজারে এক রেশন ডিলারের কাছে আসতে হয়। গ্রামবাসীর সেই হয়রানি রুখতে একটি কার্যকরি পদক্ষেপ করার আর্জি রাখেন।
জেলা খাদ্য দফতরের কর্তাদের কথায়, প্রথমেই যা মনে রাখা উচিত তা হল রেশন কার্ড সকলের জন্য নয়। ২০১১ সালে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এবং পুরসভাগুলি থেকে আর্থ-সামাজিক ও বর্ণ সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করে খাদ্য দফতর। সেখানে যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা প্রত্যেকেই জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। বাকি যাঁদের নাম বাদ গিয়েছিল, সেখানে এমন কিছু মানুষের ছিলেন বা পড়েছিলেন যাঁরা সত্যিই খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আসতে পারেন। তাঁদের সকলকে প্রকল্পের সুবিধার মধ্যে নিয়ে আসতে রাজ্য সরকার রাজ্য খাদ্য প্রকল্প, খাদ্যসাথী নিয়ে আসে। সেখানে তাঁদেরকেও অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপরেও অনেকে মনে করছেন তাঁদের নাম রেশন প্রাপকদের তালিকায় অন্তর্ভূক্তির প্রয়োজন ছিল, অথচ হয়নি। দুটি প্রকল্প মিলিয়ে মোট ডিডিটাল রেশন কার্ড প্রাপকদের সংখ্যা বীরভূমে ৩৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ১৫৬টি। ২০১৬ জানুয়ারি মাসের আগে জেলায় মোট রেশন কার্ডের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৭ লক্ষ।
কিন্তু সমস্যা হল, এত সংখ্যক কার্ডে নানা ধরণের ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। সেগুলি সংশোধন এবং নতুনদের নাম রেশন-কার্ডে তোলার জন্য রেশন কার্ড ‘লাইফ সাইকেল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু রয়েছে। কেউ রেশন কার্ড নাম তোলাতে, নামের বানান ভূল ঠিক করাতে, ডিলার পাল্টাতে, রেশন কার্ড সারেন্ডর বা ক্যাটাগরি চেঞ্জ এর জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করবেন ব্লকে। সেখান থেকে ডেটা পাঠানো হবে কলকাতায়। কার্ড কলকাতা থেকে প্রিন্ট হয়ে এলে পঞ্চায়েত বা পুরসভা থেকে বিলি করা হয়। তবে গ্রাহকদের প্রত্যেককে রেশনের জিনিস নিলে রসিদ দেওয়া বাধ্যতামূলক রেশন ডিলারদের। জানাচ্ছেন দফতরের আধিকারিকরা।
পুর এলাকা বাদ দিয়ে পঞ্চায়েত এলাকায় রেশন পাওয়া, কেন্দুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের আবেদনের কী হবে? জেলাশাসক সেটা দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা খাদ্য নিয়ামক দীপেন্দু বড়ুয়া বলছেন, ‘‘জেনেছি। বিষয়টি দেখছি।’’