Advertisement
E-Paper

দ্বারকেশ্বরের পারে বালি তুলতে গিয়ে মিলল বিষ্ণুমূর্তি! বিশেষজ্ঞের দাবি, তৈরি হয়েছে একাদশ শতকে

বাদামি বেলেপাথর খোদাই করা মূর্তিটি ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার এবং প্রস্থে প্রায় ২ ফুট। প্রত্ন গবেষকরা বলছেন, মূর্তিটি দ্বাদশভূজ লোকেশ্বর বিষ্ণুর। মোট চারটি দেবদেবীর দেহাবয়ব রয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৫ ১২:১২
Vishnu Idol

উদ্ধার হওয়া বিষ্ণুমূর্তিটি একাদশ শতকে তৈরি বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। —নিজস্ব চিত্র।

দ্বারকেশ্বর নদের গর্ভ থেকে বালি তুলতে গিয়ে বেরিয়ে এল একটি বিষ্ণুমূর্তি। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, প্রস্তর মূর্তিটি তৈরি হয়েছিল একাদশ শতকে।

শনিবার বিকেলে বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের ওলা দুবরাজপুরের মন্দিরতলা এলাকায় দ্বারকেশ্বর থেকে মূর্তিটি উদ্ধার হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায়। স্থানীয়েরা মূর্তিটি নিয়ে যান গ্রামের একটি মন্দিরে। খবর পেয়ে কয়েক জন বিশেষজ্ঞ আসেন। প্রত্ন গবেষকদের দাবি, অবিকৃত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া পূর্ণাঙ্গ মূর্তিটি দ্বাদশভূজ লোকেশ্বর বিষ্ণুমূর্তি।

বস্তুত, বাঁকুড়ার দ্বারকেশ্বর ও কংসাবতী নদী উপত্যকার সভ্যতা বহু প্রাচীন। একসময়ে দুই নদী তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছিল উন্নত জৈন সভ্যতা। এখনও দুই নদী তীরবর্তী এলাকায় থাকা বহু প্রাচীন মন্দির ও প্রত্নসামগ্রী অতীতের জৈন সভ্যতার নিদর্শন বয়ে নিয়ে চলেছে। সেই সভ্যতারই প্রমাণ হিসাবে বিভিন্ন সময়ে কংসাবতী ও দ্বারকেশ্বরের গর্ভে মিলেছে জৈন তীর্থঙ্করদের দীগম্বর প্রস্তরমূর্তি। তবে এবার জৈন মূর্তি নয়, মিলল বিষ্ণুমূর্তি। বাদামী বেলেপাথর খোদাই করা মূর্তিটি ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার এবং প্রস্থে প্রায় ২ ফুট। প্রত্ন গবেষকেরা বলছেন, মূর্তিটি দ্বাদশভূজ লোকেশ্বর বিষ্ণুর। মোট চারটি দেবদেবীর দেহাবয়ব রয়েছে। প্রধান দেহাবয়বের ১২টি হাত স্পষ্ট ভাবে খোদিত। ১২টি হাতের মধ্যে ৮টি হাতে বিভিন্ন অস্ত্র ও সামগ্রী থাকলেও দু’দিকে চারটি হাত পৃথক চারটি দেহাবয়বের মাথায় রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি হাত রয়েছে আয়ুধ পুরুষের মাথায়। অপর দু’টি হাত রয়েছে দুই নারী দেহাবয়বের মাথায়। এই দুই নারী মূর্তি ভূদেবী ও শ্রীদেবীর বলে দাবি প্রত্ন গবেষকদের। প্রধান দেহাবয়বটিকে দ্বাদশভূজ লোকেশ্বর বিষ্ণু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা।

বিষ্ণুর মূর্তিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মাথার উপর থাকা কিরীট (শিরস্ত্রাণ), দু’কানে কর্ণকুন্তল, গলায় বরমালা। প্রত্ন গবেষক সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মূর্তিটি সব দিক থেকে ব্যতিক্রমী বলে মনে হয়েছে। আর অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে বলে শিল্পনৈপুণ্যের দিক থেকে এটি যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তেমনই ঐতিহাসিক প্রত্নসামগ্রী হিসাবেও অত্যন্ত মূল্যবান।’’

মূর্তিটি কত দিন ধরে দ্বারকেশ্বর নদের বালির তলায় চাপা পড়েছিল সে সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য মেলেনি। তবে স্থানীয়দের একাংশের দাবি, নদের গর্ভে যে জায়গা থেকে মূর্তিটি উদ্ধার হয়েছে, তার অদূরে একসময় বিষ্ণুমন্দির ছিল। সেই মন্দিরের নামানুসারেই এলাকার নামকরণ হয় মন্দিরতলা। সেই মন্দিরেই রাখা ছিল মূর্তিটি। পরবর্তীতে দ্বারকেশ্বর নদের ভাঙনে মন্দিরটি নদীগর্ভে হারিয়ে গেলে মূর্তিটিও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওলা দুবরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা তরুণ সিদ্ধান্ত বলেন, ‘‘গ্রামের একপ্রান্তে নদীর ধারে ইটের বিষ্ণুমন্দির ছিল। সেই মন্দিরেই এই মূর্তিটি পুজো করা হত। ভাঙনের কবলে পড়ে মন্দির-সহ এলাকার দশ বারো বিঘা জমি নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। মূর্তিটিও হারিয়ে যায়। আবার সেই মূর্তিটি আমরা বালির স্তরে চাপা অবস্থায় খুঁজে পেয়ে গ্রামে নিয়ে এসেছি। মূর্তিটিকে গ্রামের মন্দিরে রেখেই আমরা পুজো করতে চাই।’’

vishnu Idol bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy