বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা ছিল। প্রস্তুতি নিয়েছিল পুলিশও। তবে যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে এসএফআই ও ডিএসও-র ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের তেমন প্রভাব দেখা গেল না পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। অতীতের মতো ধর্মঘট সফল করাতে পিকেটিং করতেও দেখা যায়নি বাম ছাত্র সংগঠনগুলিকে। যদিও তাঁদের দাবি, এ দিন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। তবে সেই দাবি উড়িয়ে তৃণমূল বলছে, এ দিনের ধর্মঘট পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
আগেই দুই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছিল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ও পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিকে ছাত্র ধর্মঘটের বাইরে রাখা হয়েছে। তাই এ দিনের ধর্মঘট সফল করাতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ডিএসও, এসএফআই কী কী পদক্ষেপ করে সে দিকে নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দীর্ঘ দিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সব দলের ছাত্র সংগঠনেরই অবস্থা ঢিলেঢালা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় রাজ্যের ছাত্র রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠায় নিজেদের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা ঝালিয়ে নিতে পারত বাম ছাত্র সংগঠনগুলি। তবে এ দিন দেখা গেল কর্মী-সমর্থকদের সক্রিয় ভাবে ময়দানে নামাতেই পারেনি তারা।
তবে ডিএসও-র রাজ্য কমিটির সদস্য বিকাশ কুমারের দাবি, পুরুলিয়া শহরের জে কে কলেজ ও নিস্তারিণী কলেজে তাঁরা পিকেটিং করেন। ধর্মঘটও হয়েছে ওই কলেজগুলিতে। তিনি বলেন, “ওই কলেজ দু’টিতে বৃত্তিমূলক পরীক্ষা চলছিল। পরিক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা করা হয়নি। বাকিরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন।”
অন্য দিকে এসএফআইয়ের পুরুলিয়ার সম্পাদক সুব্রত মাহাতো বলেন, “সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষায় কোনও বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। অন্য ছাত্রছাত্রীরা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ধর্মঘটে শামিল হন।”
যদিও এই ধর্মঘটকে ব্যর্থই বলছে তৃণমূল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পুরুলিয়ার সভাপতি কিরিটী আচার্য দাবি করেন, “ডিএসও এবং এসএফআই কলেজগুলিতে জোর করে ধর্মঘট করানোর চেষ্টা করলে প্রস্তুত ছিলেন আমাদের কর্মীরাও। কিন্তু ধর্মঘট ডাকা দুই ছাত্র সংগঠনের লোকজনদের কলেজে এ দিন দেখাই যায়নি।” পাল্টা এসএফআইয়ের সুব্রত বলেন, “ক্ষমতা থাকলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করাক টিএমসিপি। তাহলেই আমাদের ক্ষমতাও টের পাবে।” ডিএসও-র বিকাশও বলছেন, “ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন।”
অন্য দিকে, এ দিন ডিএসও-র প্রতিনিধিরা বাঁকুড়ার খ্রিস্টান কলেজ, সম্মিলনী কলেজ, সারদামণি বালিকা মহাবিদ্যালয়, ইঁদপুরের শালডিহা কলেজ ও বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজে গিয়ে স্লোগান তোলেন। ডিএসও-র জেলা সম্পাদক তন্ময় মণ্ডলের অভিযোগ, খ্রিস্টান কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছেলেরা তাঁদের জোর করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তীর্থঙ্কর কুন্ডুর দাবি, কিছু ক্ষণ স্লোগান দেওয়ার পরেই চলে যান বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যেরা। কেউ তাঁদের বাধা দেয়নি।
এ দিন বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা ছিল। সেখানেও বড় কোনও আন্দোলন হতে দেখা যায়নি। এসএফআইয়ের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অনির্বাণ গোস্বামী বলেন, “প্রতিটি ছাত্র সংগঠন নিজের মতো করে ধর্মঘট পালন করছে। পরীক্ষার জন্য আমরা বৃহত্তর ভাবে আন্দোলন করিনি।” তবে এসএফআইয়ের দাবি, রবিবার দুপুরে ও সোমবার সকালে সংগঠনের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দরজার বাইরে পতাকা বাঁধা হয়েছিল। সঙ্গে কিছু দাবি-দাওয়া লেখা পোস্টার দেওয়া হয়। সে সবই খুলে, ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। পাল্টা তৃণমূলের দাবি, বামেদের সঙ্গে আন্দোলন করার মতো কোনও ছাত্রছাত্রী নেই।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, সামগ্রিক ভাবে ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনের জেরে কোথাও কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)