Advertisement
০২ মে ২০২৪
Green Crackers

সবুজ বাজিতে ঝোঁক বেশি, কিন্তু জোগান কম

পুরুলিয়া শহরের এক বাজি বিক্রেতা মহম্মদ সাত্তার বলেন, ”নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করলেই পুলিশ ধরপাকড় করছে। মামলা দিচ্ছে। কিছু টাকা রোজগারের জন্য নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রির ঝুঁকি নেননি অনেকেই।

বিষ্ণুপুরে বোলতলায়। নিজস্ব চিত্র

বিষ্ণুপুরে বোলতলায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৪১
Share: Save:

এক দিকে, নিষিদ্ধ বাজি রুখতে পুলিশের ধরপাকড়। সঙ্গে ধীরে হলেও তৈরি হওয়া সচেতনতা। দুয়ের জেরে পুরুলিয়ায় এ বছরে পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজির বিক্রি বেড়েছে, জানাচ্ছেন বাজি বিক্রেতাদের বড় অংশই। তবে বিক্রেতা থেকে ক্রেতা, সব তরফেই দাবি, দাম খানিক আয়ত্তের মধ্যে এলে এবং জোগান বাড়লে সবুজ বাজির দিকে আরও বেশি করে ঝুঁকবেন মানুষ।

জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেল, গত বছর পর্যন্ত সবুজ বাজির বিষয়ে বিশেষ জানা ছিল না বিক্রেতাদের। বেশির ভাগ জায়গায় প্রচলিত বাজিই বিকিয়েছিল। তবে এ বারে পুজোর অনেক আগে থেকে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি বন্ধে তৎপর ছিল পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয় নিষিদ্ধ শব্দবাজি। পাশাপাশি, সবুজ বাজি ছাড়া অন্য বাজি বিক্রি করা যাবে না বলে প্রচারও চলেছে। পুলিশের একাংশের দাবি, সে কারণে বিক্রেতারা মূলত সবুজ বাজি বিক্রির দিকেই ঝুঁকেছেন।

পুরুলিয়া শহরের এক বাজি বিক্রেতা মহম্মদ সাত্তার বলেন, ”নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করলেই পুলিশ ধরপাকড় করছে। মামলা দিচ্ছে। কিছু টাকা রোজগারের জন্য নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রির ঝুঁকি নেননি অনেকেই। দাম বেশি হলেও সবুজ বাজিই বিক্রি করছি।” রঘুনাথপুর শহরের বাজি বিক্রেতা দেবরঞ্জন হালদারেরও দাবি, সবুজ বাজিই বেচছেন। তাঁর কথায়, ”সবুজ ও প্রচলিত বাজির মধ্যে দামের তফাত অনেকটা। সাধারণ চরকির দাম যেখানে আশি-একশো টাকা, সেখানে সবুজ চরকির দাম পড়ছে ২৮০-২৯০ টাকা। নামী সংস্থার তৈরি হলে দাম পৌঁছচ্ছে পাঁচশোর কাছে। দাম বেশি হলেও সবুজ বাজিই কিনছেন সচেতন ক্রেতারা।”

বাজি বিক্রেতারা জানাচ্ছিলেন, সবুজ বাজিতে ধোঁয়া কম হয়। বাজির প্যাকেটের উপরে উল্লেখ থাকে লাইসেন্স নম্বর, ‘কিউআর কোড’-এর। রকেট থেকে তুবড়ি, স্কাই শট, শেল, ডবল সাউন্ড, চরকি, কালি পটকা—সবই আছে। তবে এখনও অনেকের সবুজ বাজি নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। রঘুনাথপুরের বাজি বিক্রেতা কাঞ্চন নাগ, গৌতম দাসেরা বলেন, ‘‘পুলিশ প্রচার করছে সবুজ বাজি ছাড়া অন্য বাজি বিক্রি করা যাবে না। তবে সবুজ বাজি কোথায় মিলবে, জানা নেই। তাই এ বছরে বাজিই বিক্রি করিনি।” একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন ঝালদার বাজি বিক্রেতা দিলীপ চৌরাশিয়াও।

এ দিকে, দাম বেশি হলেও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে সবুজ বাজিই কিনছেন বলে জানান পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা রাজ লিলহা, ননেগ ওঝারা। রাজের কথায়, ”ফি বছর হাজার দশেক টাকার বাজি কেনা হয়। ওই টাকায় আগে যা বাজি হত, সবুজ বাজি মিলছে তার অর্ধেক। তবে বাজি পোড়াতে গিয়ে পরিবেশ দূষণ হোক, এটা কাম্য নয়। তাই সবুজ বাজিই পোড়াব।” নগেনও জানান, পরিবেশের কথা সকলকেই মাথায় রেখে চলতে হবে। চড়া দাম হওয়ায় তাই সামর্থ্য অনুযায়ী সবুজ বাজিই কিনেছেন।

তবে এর মধ্যেও লুকিয়ে চুরিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়ার সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, যে সব জেলায় বাজি তৈরির কারখানা আছে, সেখানে নিষিদ্ধ বাজি দেদার তৈরি হয়ে বাজারে আসছে। পরে, তা-ই লুকিয়ে চুরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে অন্য জেলাতেও। তিনি বলেন, ”শুধু সচেতনতা প্রচারে কাজ হবে না। যেখানে নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি হচ্ছে, সেই কারখানাগুলি বন্ধ না করলে আখেরে লাভ হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Green Crackers kali Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE