Advertisement
E-Paper

অরূপের আগে-পিছে ক্ষুব্ধ নেতার ট্যাবলো

অরূপবাবু একাধারে জেলা সভাপতি এবং ওন্দা কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক। যে দিন তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন, তার ঠিক পরের দিনই নির্দল হিসাবে মনোনয়ন দেন ওন্দার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা অশোক চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০২:৩১
হাতবাড়িতে  তৃণমূল জেলা সভাপতি। মানখামারে তাঁরই বিরুদ্ধে ব্লক সভাপতির ট্যাবলো। ছবি:অভিজিৎ সিংহ

হাতবাড়িতে তৃণমূল জেলা সভাপতি। মানখামারে তাঁরই বিরুদ্ধে ব্লক সভাপতির ট্যাবলো। ছবি:অভিজিৎ সিংহ

ভোট যতই এগিয়ে আসছে, অস্বস্তি ততই বাড়ছে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-এর।

অরূপবাবু একাধারে জেলা সভাপতি এবং ওন্দা কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক। যে দিন তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন, তার ঠিক পরের দিনই নির্দল হিসাবে মনোনয়ন দেন ওন্দার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা অশোক চট্টোপাধ্যায়। গোড়ায় দলের অনেকেই ভেবেছিলেন, চাপে পড়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন তিনি। এখনও অবধি তেমন হয়নি। বরং দিন যত গড়াচ্ছে, ততই জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন ওন্দার ব্লক সভাপতি অশোকবাবু!

বৃহস্পতিবার ওন্দার পুনিশোল পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে অরূপবাবুর মিছিল ও অশোকবাবুর ট্যাবলো প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ দিন সকালে পুনিশোল অঞ্চলের আসনাশোল, ভলহীরাপুর, হাতবারি-র মতো বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে অরূপবাবু মিছিল করে প্রচারে নামেন। গলায় ফুলের মালা, সাদা পাঞ্জাবির উপর হাফ জ্যাকেট চড়িয়ে পদব্রজে গ্রামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হেঁটেছেন তিনি। মিছিলের শেষে একটি গাড়িতে মাইক বেঁধে গলা ফাটিয়ে স্লোগানও দিয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। তবে এ দিন প্রথম থেকেই অরূপবাবুর মিছিলের কখনও আগে, কখনও পিছনে ঘুরে বেড়িয়েছে অশোকবাবুর প্রচারের ট্যাবলো। পরিস্থিতি এমনই ছিল, এক দিকে যখন আসনাশোল, হাতবারী, সাহেবগঞ্জে অরূপবাবুর অনুগামীরা তাঁকে ‘উন্নয়নের কাণ্ডারী’ বলে গলা ফাটাচ্ছেন, তখনই ওই সব গ্রামের পাশ দিয়ে অশোকবাবুর প্রচারের ট্যাবলো থেকে জেলা সভাপতি তথা তৃণমূল প্রার্থীর নামে ‘ধাপ্পাবাজ’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’-র মতো বাছা বাছা বিশেষণ-যুক্ত স্লোগানও ভেসে এসেছে! যা মোটেও স্বস্তিতে রাখেনি অরূপবাবুকে।

একই দলের দুই গোষ্ঠীর পরস্পরবিরোধী এই প্রচারে এলাকার হাওয়া এমনিতেই গরম হচ্ছিল। পরিস্থিতি চরম আকার নিল নতুনগ্রাম মোড়ে। সেখানে অশোকবাবুর প্রচারের ট্যাবলো ঢুকতেই অরূপবাবুর অনুগামী তৃণমূল কর্মীরা তেড়ে আসেন বলে অভিযোগ। ওই ট্যাবলোর ভিতরে ছিলেন অশোকবাবুর অনুগামী তথা তৃণমূল কর্মী প্রবীর ঘোষ, অমিত পাত্র ও ভবানীপ্রসাদ নন্দী। প্রবীরবাবুদের অভিযোগ, কিছু তৃণমূল কর্মী তেড়ে এসে তাঁদের গাড়ি থামিয়ে প্রচার বন্ধ করতে বলে এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে অশোকবাবুর প্রচারের অনুমতি রয়েছে কিনা, দেখে চলে যায়। এই ঘটনায় দমে না গিয়ে ওই মোড়েই ভাষণ দেওয়া শুরু করেন প্রবীরবাবু। তিনি বলেন, “এ ভাবে আমাদের থামানো যাবে না। যত আমাদের উপর হামলা হবে, মানুষ ততই আমাদের পক্ষে থাকবেন। সারা বছর আমরা এলাকায় থেকে জনগণের সেবা করি। আর উনি (অরূপবাবু) বাঁকুড়ায় বসে বসে দুর্নীতি করেন।’’ অশোকবাবুর বক্তব্য, “ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার সকলের আছে। কিন্তু পেশিশক্তি দিয়ে আমাদের আটকে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন জেলা সভাপতি।’’ যদিও এ দিনের ঘটনা নিয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে কোনও অভিযোগ জানাননি অশোকবাবু।

অশোকবাবুর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অরূপবাবু বলেন, “উনি ব্লক সভাপতি কিনা, তা আমি জানিনা। তবে রাজ্য নেতৃত্বকে পুরো ঘটনাটি জানানো হয়েছে। দল যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’’

শুধু দলেরই বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীর প্রচার নয়, অরূপবাবুকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে বিরোধীদের তোলা ভোটারদের ভুরিভোজের অভিযোগও। এ দিন সকাল থেকেই অরূপবাবুর প্রচারকে কেন্দ্র করে পুনিশোলের হাতবারি গ্রামে জমা হচ্ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। বিরোধী সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, অরূপবাবু ওই গ্রামের লোকজনের ঢালাও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। অভিযোগ যায় জেলা প্রশাসনের কাছেও। যদিও মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা বলেন, “অভিযোগ পেয়ে আমরা ওই গ্রামে গিয়েছিলাম। তেমন কিছু নজরে আসেনি।’’ বিরোধীদের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে খবর পেয়েই গ্রামে খাওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া তৃণমূল কর্মী ও গ্রামবাসীরা খাবার নিয়ে পালিয়ে যান।

election campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy