যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নতুন করে পরীক্ষায় বসার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রতিক্রিয়ায় কেউ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত তাঁদের কাছে ‘মৃত্যুর শামিল’। কেউ বলছেন, এই সিদ্ধান্ত আদতে বিচারব্যবস্থাকে ঢাল করে ‘পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি’কে আড়াল করার চেষ্টা। কারও কারও মতে, তাঁদের অথৈ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হল।
চাকরিহারাদের জন্য নতুন করে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে— মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ‘অযোগ্য’ বা ‘দাগি’ (টেন্টেড) হিসাবে চিহ্নিত নন, বীরভূমের এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ ক্ষুব্ধ। চাকরিহারাদের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর যে প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, সেটাকেও গুরুত্ব দেওয়ার কারণ দেখছেন না তাঁরা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, তাঁদের বয়স বেড়েছে, এই অবস্থায় নতুনদের সঙ্গে পরীক্ষায় বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রস্ততি নেওয়ার সময়টুকুও হাতে নেই।
২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার জেরে চাকরি হারিয়েছেন রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। পরে পর্ষদের আর্জি মেনে ‘দাগি’ হিসাবে চিহ্নিত নন, এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতে। ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল দাবি ছিল, যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে, যে চাকরি তাঁরা পেয়েছেন, তা পেরে আবারও কোনও পরীক্ষায় তাঁরা বসবেন না।
কিন্তু মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই চূড়ান্ত হতাশ চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকারা। যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চের কোর কমিটির সদস্য তথা জেলার এক চাকরিহারা শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস বিজ্ঞপ্তির পরে আমরা চাকরিহারারা ভীষণ ভাবে হতাশ। এর পরে নতুনদের সঙ্গে পরীক্ষায় বসে যোগ্য চাকরিহারারা পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাবেনই, সেই নিশ্চয়তা থাকলে না। শুধু অযোগ্যদের বাঁচাতেই যোগ্যদের অথৈ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হল।’’ নরুলের সংযোজন, ‘‘এটা কি মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর কাজ?’’
ওই মঞ্চেরই কোর কমিটির সদস্য ও চাকরিহারা শিক্ষক দীনবন্ধু মণ্ডল বলেন, ‘‘৩০ তারিখ গেজেট নোটিফিকেশনে কী নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, দেখতে চাই। আসলে এই মুহূর্তে আমরা আর মানসিক ও শারীরিক ভাবে পরীক্ষায় বসার জায়গায় নেই। ২০১৬ সালের প্রেক্ষিত আর এখনকার প্রেক্ষিত এক নয়। কেউ যদি পাশ করতে না পারেন তাঁর কী হবে, পরিণতির কথা ভেবে শিউরে উঠছি!’’
চাকরিহারা আর এক যোগ্য শিক্ষিকা সৌমিলি দাসের কথায়, ‘‘পরীক্ষা দিতে অসুবিধা নেই। প্রশ্ন হল, একই পরীক্ষা কেন আমরা দ্বিতীয়বার দেব। আমাদের তো কোনও দোষ নেই। আমরা অযোগ্য, সেটাও প্রমাণিত হয়নি।’’ তাঁর মতে, যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁরা শাস্তি পেলেন না। শাস্তি পাচ্ছেন যোগ্যতার পরীক্ষায় সসম্মাে উত্তীর্ণেরা। ওই শিক্ষিকা যোগ করেছেন, ‘‘দুর্নীতি যারা করেছে, পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব ফের তাদের হাতে। সে পরীক্ষার অর্থ কী!’’ চাকরিহারা আর এক যোগ্য শিক্ষিকা বিউটি সাহা বলেন, ‘‘এতগুলো বছর শিক্ষকতা করার পরে নতুনদের সঙ্গে নতুন করে যোগ্যতার পরীক্ষায় বসার যে বার্তা মুখ্যমন্ত্রী দিলেন, তা আমাদের কাছে মৃত্যুর শামিল! কারণ আমাদের যোগ্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ নেই। তাই নতুন করে পরীক্ষা দেওয়া ন্যায় বিচার বলে মনে করছি না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)