ফিতে কাটার মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
মন্দির তৈরিতে সম্প্রীতির দেখা মিলেছিল। দ্বারোদঘাটনেও নজির তৈরি হল। ফিতে কেটে নবনির্মিত মন্দিরের উদ্বোধন করলেন মসজিদের মৌলবী। রবিবার নানুরের বাসাপাড়া এমন ঘটনার সাক্ষী রইল।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসাপাড়ায় বছর তিরিশেক আগে একটি সর্বজনীন কালীপুজোর প্রচলন হয়। ওই পুজোর জন্য নানুর-বাসাপাড়া সড়কের পাশে ইটের গাঁথনির কালীমন্দিরও নির্মিত হয়। কিন্তু, বছর দু’য়েক আগে রাস্তা চওড়া করার সময় সেই মন্দির ভাঙা পড়ে। পরের বছর প্যান্ডেল করে কোনও রকমে পুজো হয়। কিন্তু, বছর বছর প্যান্ডেল করে পুজো চালানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তখন উদ্যোক্তারা মন্দির নির্মাণের জন্য নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে নামমাত্র মূল্যে একটি জায়গা কেনেন।
এই এলাকা সংখ্যালঘু প্রধান। কোনও রকমে জমি কেনা সম্ভব হলেও চাঁদা তুলে মন্দির নির্মাণ করা সম্ভব ছিল না। সেই সমস্যার কথা শুনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে আসেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ জন। নিজেরা চাঁদা দেওয়ার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে গিয়ে চাঁদা তুলে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আর্কষণীয় কালীমন্দির নির্মাণে সহায়তা করেন। সেখানেই থেমে থাকেনি উদ্যোগ। বরকা হাঁসদা, ভরত মাঝিদের পাশাপাশি দিনের পর দিন নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে কাজের তদারক করেছেন মীরমাখন আলি, আলম চৌধুরীরাও। বাপ্পা চৌধুরী, বন্যেশ্বর থান্দার, মনিজা বিবিরা বলছেন, ‘‘চোখের সামনে যখন মন্দির তৈরি হচ্ছিল, তখন মনে হত যেন আমাদেরই বাড়ি তৈরি হচ্ছে। প্রতিদিন কম করেও একবার মন্দিরের কাছে যেতাম।’’
রবিবার সেই মন্দিরের ফিতে কেটে দ্বারোদঘাটন করেন বাসাপাড়ার হাফেজ নাসিরুদ্দিন মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাসাপাড়া মাদ্রাসার মৌলানা শেখ মনসুর আলি, তাকোড়ার মৌলানা শেখ আব্দুল্লা, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান প্রমুখ। নাসিরুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘এর আগে মসজিদ কিংবা মাদ্রাসার উদ্বোধন করেছি। হিন্দুভাইদের মন্দির উদ্বোধন এই প্রথম। অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।’’ একই প্রতিক্রিয়া পুজো কমিটির সভাপতি সুনীল সাহা, সম্পাদক কাশীনাথ কুণ্ডুদেরও। তাঁদের কথায়, ‘‘দু’বছর আগে যখন মন্দির ভেঙে যায়, তখন পুজো নিয়ে সংশয়ে পড়েছিলাম। সংখ্যালঘু ভাইরা পাশে দাঁড়িয়ে তা দূর করেছেন। ধন্যবাদ জানিয়ে ওঁদের ছোট করতে চাই না। প্রয়োজনে আমরাও ওঁদের পাশে দাঁড়াব।’’ কর্মকাণ্ডের অন্যতম হোতা আব্দুল কেরিম খান আশাবাদী, ‘‘মন্দির নির্মাণে উভয় সম্প্রদায়ের যোগদান এলাকায় সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়ে তুলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy