—প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল ইলামবাজারের কাঁসা, পিতল শিল্পীদের। জেলা শিল্পকেন্দ্রের তরফে জানা গিয়েছে, ইলামবাজারের টিকরবেতা গ্রামের শতাধিক কাঁসা পিতল শিল্পীদের জন্য তৈরি হতে চলেছে ‘কমন ফেসিলিটেড সেন্টার’।
২৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভবন তৈরির কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার তন্ময় ব্রহ্ম। তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘দফতর টাকা বরাদ্দ করেছে। দ্রুত ভবন গড়ে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। আমরা খয়রাশোল ব্লক অফিসের সহায়তায় ওই গ্রামে সেন্টারটি গড়ে তুলব।’’
ইলামবাজারের টিকবেতা গ্রামে কাঁসা পিতল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শতাধিক কারিগরদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল তাঁদের জন্য গড়ে উঠুক একটি কমন ফেসিলিটেড সেন্টার। যেখানে উন্নত যন্ত্রপাতি থাকবে, প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। যেখানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি করতে পারবেন তাঁরা। ভবন তৈরির টাকা বরাদ্দ হওয়ায় বেজায় খুশি তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলামবাজারের টিকবেতা গ্রামের ১৮৫টি পরিবার কাঁসা-পিতল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ওই এলাকায় ঢুকলেই দিনভর শোনা যায় ঠুং-ঠাং ধাতব শব্দ। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সারা বছর ধরে শিল্পীরা কাঁসা ও পিতলের কলসি, ঘট নানা সরঞ্জাম তৈরি করেন। কিন্তু কাঁসা-পিতলের বাসনের চাহিদা মধ্যবিত্ত পরিবারে এখন বিয়েবাড়ি ও পুজো পার্বনেই সীমাবদ্ধ। তাই বংশ পরম্পরায় চলতে থাকা এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত পরিবারগুলি। সরকারি উদ্যোগে এবার হয়তো চিন্তার মেঘ কিছুটা সরবে বলে আশা এই পেশায় যুক্তদের।
শিল্পীরা জানান, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারাই প্রধান সমস্যা। এলাকার শিল্পী স্বরাজ দাস, হারাধন মেহতরী, জীতেন সালুই, চতুরা সালুইদের কথায়, ‘‘আমরা বংশানুক্রমিকভাবে গত বাঁধা কতগুলো সরঞ্জাম তৈরির মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। কিন্তু এখন কাঁসা-পিতলের যে সব জিনিসের বাজার রয়েছে, যেমন ঢালাই ও মিনা করা বিভিন্ন শৌখিন জিনিস, সে সব বানাতে যে প্রযুক্তির প্রয়োজন তা নেই আমাদের।’’ কাঁসা-পিতল শিল্পীদের দাবি, পুঁজির অভাবও
অন্তরায়ের অন্যতম একটি কারণ। এতদিন এই সমস্যা সমাধানের পথ পাচ্ছিলেন না তাঁরা।
প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে নিজেরা সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন সেই ভাবনাটা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ইলামবাজারের টিকরবেতা গ্রামে তৈরি হয়েছিল ‘বীরভূম ব্রাস অ্যাণ্ড বেলমেটাল ক্লাস্টার ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো-অপারেটিভ সোসাইটি’। তবে শুধু নিজেদের গ্রামের কারিগরদের জন্যই নয়, জেলায় যে সব পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রথমত তাঁদের প্রত্যেককে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসাই উদ্দেশ্য ছিল ওই সমবায়ের। সেই মতো টিকরবেতার ছোট শিমুলিয়া এবং খয়রাশোলের পাথরকুচি, লাউবেড়িয়া ও হজরতপুরের কাঁসা–পিতল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মোট ১৮৫ জন কারিগর এই সমবায়ে যুক্ত হন। সেই সমবায়ের সম্পাদক প্রবীর সালুই, সদস্য নবদ্বীপ কর্মকারেরা বলেন, ‘‘আমরা সমবায় গড়েছিলাম কমন ফেসিলিটেড সেন্টার করব বলে। সেখানে যেমন উপযুক্ত যন্ত্রপাতি থাকবে, তেমনই প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া কারিগরদের তৈরি করা সামগ্রী বিক্রি করারও বন্দোবস্ত করা হবে। উদ্দেশ্য সফল করতে জেলা শিল্প দফতরের ব্যবস্থাপনায় অন্য় রাজ্য থেকে ২০ জনের প্রশিক্ষক এসেছিলেন। কিন্তু এর ভূমিকা বাস্তবে এতদিন ছিল শুধু টিকে থাকা এবার হয়তো উদ্দেশ্য সফল হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে জেলা পরিষদের অর্থ সাহায্যে একটি জায়গাও কেনা হয়। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছিল সমবায়ের নামে। প্রকল্পের লোট অর্থের ১০ শতাংশ শিল্পীদের দেওয়ার কথা জানিয়েছিল শিল্প দফতর। কিন্তু প্রান্তিক শিল্পীরা তা জোগাড় করতে না পারায় ভবন তৈরির কাজ থমকে গিয়েছিল। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য শিল্প দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেনি সমবায়। ফের নতুন করে প্রকল্প তৈরি হওয়ায় এবং টাকাও বরাদ্দ হওয়ায় এবার অনেকটা নিশ্চিন্ত সমবায়ের সদস্য়রা। শিল্পীরা বলছেন, ‘‘এই শিল্প ভীষণ পরিশ্রমের। আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও শিল্পটাকে ধরে রেখেছি। কমন ফেসিলিটেড সেন্টার গড়া হলে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy