Advertisement
১৭ মে ২০২৪
ক্ষোভে অবরোধ খয়রাশোলে

একই মন্দিরে ফের চুরি

জনবসতিপূর্ণ এলাকা। থানা থেকে দূরত্ব মেরেকেটে ছ’শো মিটার। রাতে টহলে ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ারও। তার পরেও ফের চুরির ঘটনা ঘটল খয়রাশোলের ঐতিহ্যবাহী শতাব্দী প্রাচীন বলরাম জীউ মন্দিরে। সোমবার গভীর রাতের ঘটনা হলেও মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। সেবাইতদের দাবি, চুরি গিয়েছে মন্দিরের দুই বিগ্রহ বলরাম ও রেবতীর কয়েক ভরি সোনার অলঙ্কার ও পুজোর বাসন।

এই তালা ভেঙেই মন্দিরে ঢুকেছে চোর। মঙ্গলবার খয়রাশোলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

এই তালা ভেঙেই মন্দিরে ঢুকেছে চোর। মঙ্গলবার খয়রাশোলে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০১:০৯
Share: Save:

জনবসতিপূর্ণ এলাকা। থানা থেকে দূরত্ব মেরেকেটে ছ’শো মিটার। রাতে টহলে ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ারও। তার পরেও ফের চুরির ঘটনা ঘটল খয়রাশোলের ঐতিহ্যবাহী শতাব্দী প্রাচীন বলরাম জীউ মন্দিরে।

সোমবার গভীর রাতের ঘটনা হলেও মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। সেবাইতদের দাবি, চুরি গিয়েছে মন্দিরের দুই বিগ্রহ বলরাম ও রেবতীর কয়েক ভরি সোনার অলঙ্কার ও পুজোর বাসন।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বার খয়রাশোলের ওই মন্দিরে চুরির ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অবিলম্বে চুরির কিনারা চেয়ে মঙ্গলবার সকালে তাঁরা খয়রাশোল থানার সামনে পথ অবরোধও করেন। সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে এবং পুলিশের থেকে আশ্বাস পেয়ে ঘণ্টা দেড়েক পরে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা। তবে, সাত দিনের মধ্যে ঘটনার কিনারা না হলে ভিন্ন পথে আন্দলোন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সেবাইতরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলডিহি থেকে বলরাম বিগ্রহ নিয়ে আনুমানিক সাড়ে চারশো বছর আগে খয়রাশোলে আসেন মন্দিরের সেবাইতদের পূর্ব পুরুষেরা। এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত বলরাম ও রেবতীর দু’টি পাথরের মূর্তি ছাড়াও অনেকগুলি শালগ্রাম শিলা ও গোপাল মূর্তি এবং অন্যান্য মূর্তি রয়েছে। পালা করে এই মন্দিরে নিত্য পুজোর দায়িত্ব সামলান খয়রাশোলে বসবাসকারী ৪৫টি সেবাইত পরিবার। যদিও বর্তমানে সেবাইতদের শরিক বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬৫টি পরিবার। যে পরিবারের উপরে দায়িত্বে থাকে, সেই পরিবারের সদস্যেরা ভোরে মন্দির পরিষ্কার করেন। দিনে ও রাতে ভোগ রান্নাও করেন। মন্দিরের জন্য এক জন পূর্ণ সময়ের পুরোহিতও রয়েছেন।

এ দিন সকালে ভোগমন্দিরের দিকে থেকে মন্দিরে ঢোকার দরজা খোলার বিষয়টি প্রথম চোখে পড়ে মন্দির পরিষ্কারের দায়িত্বে থাকা মানবী ঘোষের। মানবীদেবী বলেন, ‘‘সবে ভোর ৫টা নাগাদ ভোগমন্দিরের সামনে এসেছি। তখনই দেখি দরজা খোলা। তার পরেই হাঁকডাক করি।’’ বর্তমানে সেবার দায়িত্বে রয়েছেন চায়না বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি গত ১৪ বছর ধরে ঠাকুরের ভোগ রান্না করি। এই সময় সেবা চালানোর দায়িত্বে থাকা শরিকের কথায় এখন সেবা চালাচ্ছি। রাতে পাশে একটি বাড়িতে ছিলাম। মানবীর হাঁক শুনে এসে দেখি, দু’টি দরজার তালা ভাঙা। বুঝে যাই ফের চুরি হয়েছে।’’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি খবর দেন পুরোহিত ও অন্যান্য সেবাইতদের।

এ দিন সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ খয়রাশোলের ওই মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের সামনে ভিড়। মূল দরজা বন্ধ রয়েছে। মন্দিরের বাঁ দিকের রাস্তা দিয়ে এগোলেই একটা উঠোন। প্রচুর লোকজন সেখানেও। প্রত্যেকেই উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। বাঁ দিকে ভোগ মন্দির, ডান দিকে মন্দির। সে দিকের দু’টি দরজা ভেঙেই চুরি হয়েছে বলে জানালেন সেবাইতরা। জানা গেল, কিছুক্ষণ আগেই মন্দিরের পুরোহিত রামকানাই হাজরা এবং অন্য সেবাইতরা ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন পুলিশকে। রামকানাইবাবু বলেন, “৪০ বছর ধরে এই মন্দিরে পুজো করে আসছি। এমন ঘটনা দ্বিতীয় বার ঘটল। প্রত্যেক দিন রাতে আরতি ও ভোগের পরে বলরাম ও রেবতীকে শয়ন করানো হয়। সোমনারও রাত ৭টা নাগাদ সব কাজ সেরে আমি বাড়ি চলে যাই। মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে ছুটে আসি।’’ তিনি এসে দেখেন, বিগ্রহগুলি এ দিক ও দিক ছড়িয়ে। তছনছ করা হয়েছে বিগ্রহের পালঙ্ক। সমস্ত অলঙ্কার-সহ খোয়া গিয়েছে বলরামের সোনার হাল, বলরাম-রেবতীর মুকুটগুলিও। পুরোহিত ও সেবাইত সুখেন্দ্রনাথ ঠাকুর বললেন, ‘‘২০১২ সালে ১৭ জানুয়ারি রাতে একই ভাবে ভোগ ঘর সংলগ্ন ভোগমন্দিরের দিকে থাকা দরজার তালা ভেঙে চুরি হয়ে গিয়েছিল ৬টি অষ্টধাতুর মূর্তি। তবে, দুষ্কৃতীরা সে বার বলরাম ও রেবতীর মূর্তি, গয়না নিয়ে যায়নি। এ বার সেই কাজটাই করল চোরের দল।’’

বলরাম মন্দিরের সেবাইত কমিটির সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ দিন জানান, এই মন্দিরকে ঘিরে গোটা খয়রাশোল ব্লকের মানুষের ভাবাবেগ জড়িয়ে আছে। সারা বছর নিত্য পুজোর পাশাপাশি বিখ্যাত গোষ্ট মেলা আয়োজিত হয়। সেই মন্দির থেকে পর পর দু’বার চুরি হয়ে যাওয়া তাঁরা কেউ-ই মানতে পারছেন না। এলাকাবাসীর দাবি, শুধু বলরাম মন্দিরই নয়, খয়রাশোলের লোকপুরে ও নাকড়াকোন্দা এলাকাতেও দু’টি মন্দিরের চুরি হয়েছে। চুরির ঘটনা ঘটেছে খয়রাশোলের অপর একটি ঐতিহ্যবাহী মন্দির ময়নাডালের মহাপ্রভু মন্দিরেও। একটি ঘটনারও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তাই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা এ দিন রাস্তা অবরোধে সামিল হন। চুরির কিনার না হলে ফের আন্দোলনের হুমকিও তাঁরা দিয়েছেন।

যদিও ঘটনার কথা শুনে খয়রাশোলে ছুটে এসেছিলেন ডিএসপি ধ্রুব দাস, দুবরাজপুরের সার্কেল ইনস্পেক্টর দেবাশিস ঘোষেরা। তাঁরা সকলেই এ দিন আন্তরিকতার সঙ্গে ওই ঘটনার কিনারা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Theft Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE