নানুরের আগোরতোড় প্রাথমিক স্কুলের হাল এমনই। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি
স্কুলের সামনেই পুকুর— অথচ নেই কোনও পাঁচিল। যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। এই অবস্থায় কচিকাঁচাদের নিয়ে সিটিয়ে থাকছেন নানুরের আগোরতোড় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা। প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণের পরেও পাঁচিল তৈরি হয়নি বলেও অভিযোগ। একই অবস্থা নানুরে কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেরও।
তিন দিক ঘেরা আগোরতোড় স্কুলের সামনে রয়েছে একটি পুকুর। সেটিকে আড়াল করতে ২০১১ সাল নাগাদ পাঁচিল তৈরির জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু, সেই টাকায় অর্ধেকের বেশি পাঁচিল দেওয়া যায়নি। তারপর আর টাকা আসেনি! ফল যা হওয়ার তাই—পড়ুয়াদের নিয়ে তটস্থ থাকছেন শিক্ষকেরা।
সেই চিন্তা আরও বাড়িয়েছে পুকুরের পাড়ের ভাঙন। ভাঙতে ভাঙতে পুকুরটি কার্যত স্কুল চত্বরে ঢুকে গিয়েছে। তার কাছেই রয়েছে টিউবওয়েল, শৌচালয়। এমনকি খেলার স্লিপারটি পুকুর লাগোয়া। তাই নানা প্রয়োজনে পড়ুয়াদের পুকুরের কাছে যেতেই হয়। এই অবস্থায় খুদে পড়ুয়াদের দেখভাল করতে এক জন শিক্ষককে পালা করে পাহারা দিতে হয়। তার প্রভাব পড়ে পঠনপাঠনেও। কারণ ১৩৬ জন ছাত্রের জন্য রয়েছেন দু’জন মাত্র শিক্ষক!
সহকারী শিক্ষক বিপ্লব ঘোষ জানান, কখন ছেলেমেয়েরা পুকুরে গিয়ে পড়ে, সেই আশঙ্কায় সব সময় সিঁটিয়ে থাকতে হয়। পড়াশোনার থেকেও নজর যেন বেশি থাকে সে কাজে— মানছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কী আর করব, কখন কী হয় বলা তো যায় না!’’ পড়ুয়ারাও জানাচ্ছে, যে দিন এক জন শিক্ষক আসেন সে দিন পড়াশোনাই হয় না। কারণ, এক জনকে তো পাহারাতেই থাকতে হয়!
ক্ষোভ রয়েছে অভিভাবকদেরও। গোলাম কিবরিয়া, মুজিবুর রহমানরা জানান, স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এত দিকে এত কিছু হচ্ছে, আর সামান্য পাঁচিলটুকু দিতে এত দেরি কেন বোঝা দায়।’’ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উজ্বল গড়াই জানান, পাঁচিল সম্পূর্ণ করার জন্য বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে পরিদর্শনও হয়েছে। ওইটুকুই। তবে শুধু ওই স্কুল নয়, একই পুকুরের এক পাড়ে রয়েছে একটি অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রও। সেখানেও প্রাচীর নেই। ওই কেন্দ্রের কর্মী মীনা মণ্ডল জানান, ৩০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে তাঁকেও দুঃশ্চিন্তায়
কাটাতে হয়। প্রশাসনের কাছে পাঁচিলের দাবি জানিয়েও সাড়া মেলেনি বলে জানান তিনি।
কবে উঠবে পাঁচিল?
নানুর দক্ষিণ চক্রের ভারপ্রাপ্ত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রানা দাস জানান, সাধারণত এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করে। আমরা সুপারিশ করি মাত্র। এক্ষেত্রে কি হয়েছে, খোঁজ না নিয়ে বলতে পারবো না।
ব্লক সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক শৈলেন্দ্রনাথ রায় জানান, শুধু আগরতোড়ই নয়, ব্লকের আরও বেশ কিছু অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের পাঁচিল তৈরি জরুরি। জেলাস্তরে তার
তালিকা পাঠানো হয়েছে। টাকা বরাদ্দ হলেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ শুরু হবে। তাতেই আশা রাখছেন এলাকাব বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy