বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ করোনা পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিভৃতবাস কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল কোপাইয়ের শ্রমজীবী হাসপাতাল। ফলে বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবা। দীর্ঘ ছয় মাস পরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সেখানে পুনরায় শুরু হয়েছিল বহির্বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবা। কিন্তু, পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাব এবং করোনা পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ করতে অনীহার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেই পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়। শুক্রবার বোলপুর শহরের পদ্মশ্রী প্রাপক চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এল শ্রমজীবী হাসপাতালে।
এ দিন সকাল থেকেই কোপাই ও আশেপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ এসেছিলেন নিজেদের নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে। এ বার থেকে সপ্তাহে দু’দিন করে বহির্বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা চালু থাকবে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালন সমিতির সদস্যেরা। কোপাই ও সংলগ্ন অঞ্চলের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পরা মানুষদের একটি বড় অংশ চিকিৎসা পরিষেবার জন্য এই হাসপাতালের উপরে সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। মাত্র ১১ টাকার বিনিময়ে সপ্তাহে তিনদিন বোলপুর শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা আসতেন এখানে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও দেওয়া হত বিনামূল্যে। স্থানীয়দের কায়িক পরিশ্রমে এবং শুভানুধ্যায়ীদের আর্থিক সহায়তাতেই গত চার বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে এই হাসপাতাল।
কিন্তু হঠাৎই করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফ থেকে নিভৃতবাস কেন্দ্র হিসেবে গোটা হাসপাতাল চত্বরটিকেই অধিগ্রহণ করা হয়। প্রায় দুই মাস পরিযায়ী শ্রমিকেরা এখানে থাকার পরে পঞ্চায়েতের তরফ থেকে গোটা চত্বরটি জীবাণুমুক্ত করা হলেও রোগী দেখতে আসতে চাইছিলেন না চিকিৎসকদের একাংশ। ফলে, প্রবল সমস্যায় পড়েন স্থানীয় মানুষেরা।
সেই পরিস্থিতিতেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এগিয়ে আসেন অশীতিপর চিকিৎসক সুশোভনবাবু। বোলপুর ও শান্তিনিকেতনে ‘১ টাকার ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত সুশোভনবাবু এ দিন নিজে উপস্থিত থেকে পঞ্চাশ জনেরও বেশি রোগী দেখেন। তাঁর কথায়, “শুধু চিকিৎসা পরিষেবায় সুস্থতা আসেনা। সমস্ত পরিষেবার সার্বিক উন্নতি প্রয়োজন। অন্তত চিকিৎসকেরা যাতে হাসপাতালে এসে রোগীদের সেবা করতে পারেন, তার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থার ন্যূনতম উন্নয়নের ব্যবস্থা করা উচিত স্থানীয় প্রশাসনের।’’
একই সুর শোনা গেল কোপাই শ্রমজীবী হাসপাতালের সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্যের গলায়। তিনি বলেন, “বহু প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও স্থানীয় থেকে রাজ্য স্তরে প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও সহযোগিতা পায়নি শ্রমজীবী হাসপাতাল। তবে মানুষ যত দিন চাইবে, পরিষেবা চালু থাকবেই।’’ এই উদ্যোগে বোলপুর ও বিশ্বভারতীর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের স্বেচ্ছাশ্রম দানে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন কিশোরবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy