Advertisement
E-Paper

যুবক খুনে ধৃত তিন

যুবকের চোখ থেকে রক্ত গড়াচ্ছিল, চোট ছিল মাথার পিছনের দিকেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩১
গণরোষ: অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর। সোনাতোড়পাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

গণরোষ: অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর। সোনাতোড়পাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

রাতের অন্ধকারে ভ্যান রিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি দেহ। রিকশা টানছেন এক যুবক আর পিছন থেকে ঠেলা দিচ্ছেন দুই মহিলা। জনমানবহীন পথে একমাত্র সজাগ ছিল পড়শির বাড়ির সিসি ক্যামেরা। আর সেই সেই ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে থাকা ফুটেজই ধরিয়ে দিল সিউড়িতে যুবক হত্যায় জড়িতদের।

সোমবার রাতেই শেখ শমিম ওরফে গুড্ডু নামে বছর বাইশের যুবক খুনের ঘটনায় সিউড়ি সোনাতোড় পাড়া থেকে শেখ লালন ও তাঁর বিধবা বোন বেবি বিবি নামে এবং তাঁদের মা তসলিমা বিবিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, পুরো পরিবারই যুক্ত। লালনের বাবা শেখ আজু ভ্যানে করে ফল ফেরি করেন। দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য সেই ভ্যানটিই ব্যবহার করা হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, লালনের আরেক বোন ঝুমা বিবিও রাতে রাস্তা খালি আছে কি না সে দিকে লক্ষ্য রেখেছিলেন। পরিবারের বাকি সদস্যদেরও গ্রেফতার করা হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে সিউড়ি পুর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়ায় একটি বাড়ির সামনে শহরের ফকিরপাড়ার বাসিন্দা শেখ শমিমের রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায়। যুবকের চোখ থেকে রক্ত গড়াচ্ছিল, চোট ছিল মাথার পিছনের দিকেও। সাতসকালে জনবহুল এলাকায় ওই যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। নিহতের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল, শমিমকে খুন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে একই ধারণা ছিল পুলিশেরও। এটাও বোঝা যাচ্ছিল অন্য কোথাও খুন করে দেহটি পাইকপাড়ায় এনে ফেলা হয়েছে।

কিন্তু কী কারণে পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে ওই যুবককে কারা খুন করল তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। ধন্দও তৈরি হয় পরিবারের সদস্যদের দু’রকম দাবিকে ঘিরে। শমিমের কাকা মহম্মদ হামিদ তদন্তকারীদের জানান, মা, বাবা নেই ওই যুবকের। সম্প্রতি বিয়ে হয়েছিল তাঁর। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও বেশিরভাগ সময়েই তিনি থাকতেন সিউড়ি লাগোয়া বাঁশজোড়ের শ্বশুরবাড়িতে। অন্যদিকে, ওই যুবকের দিদি রেজিনা খাতুনের দাবি, ‘‘ভাই বিয়েই করেনি।’’

পুলিশ জানায়, রেজিনা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তাঁরা তিন বোন দুই ভাই। তিনি, তাঁর বড় বোন, বা ভাইরা কেউ ফকিরপাড়ার বাড়িতে থাকেন না। ছোট বোন সাবিনার পরিবার সেখানে থাকেন। ভাই শমিম ফকিরপাড়ার বাড়িতে মাঝেমধ্যে যাতায়াত করতেন। পেশায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী রেজিনার আরও দাবি, ‘‘মায়ের মতো ভাইকে কোলে-পিঠে মানুষ করেছি। তাই ভাইয়ের বিষয়ে সব থেকে বেশি জানি। ভাইয়ের সঙ্গে গত বছর সোনাতোড় পাড়ায় একটি পরিবারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ের ঠিক হয়েছিল। কিন্তু সেই মেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। শমিমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ওই মেয়েটির দিদি বেবি বিবির সঙ্গে। মাঝেমধ্যে ওদের বাড়িতেই থাকত ভাই। সম্পর্কের কোনও টানাপোড়েনের জন্য ভাইকে মরতে হয়েছে। বেবি ও তার পরিবারের লোকেরাই খুন করেছে ভাইকে।’’

কিন্তু পুলিশ অভিযুক্ত তরুণীকে থানায় ডেকে কথা বললেও খুনের কোনও সূত্র বের করতে পারেনি। অন্যান্য সদস্যকে জেরা করেও যুবক খুনে ওই পরিবারের যোগসূত্রে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তদন্তকারীরা। এলাকার কাউন্সিলর কাজী ফরজুদ্দিনই পুলিশকে ওই এলাকার বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখার কথা জানান। খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায় অভিযুক্তদের পাশের বাড়িতেই সিসি ক্যামেরা আছে। সেই ফুটেজ দেখেই পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। ঘটনা জানাজানি হতেই মঙ্গলবার সকালে অভিযুক্তদের বাড়িতে চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেবি বিবিদের বাড়ির সামনের অংশ ভাঙচুর হয়। বাড়ির কিছু জিনিসপত্রও পাশের পুকুরের জলে ফেলে দেয় উত্তেজিত জনতা।

কাউন্সিলর বলেন, ‘‘আমার সন্দেহ ছিল ওই পরিবারটির প্রতি। কারণ জনবহুল এলাকায় বাইরে থেকে দেহ এনে ফেলা একটু অসুবিধার। শেষ পর্যন্ত সোমবার বেবিদের পাশের বাড়িতে লাগানো সিসি ক্যামেরা চোখে পড়ে। খোঁজ করতেই দেখা যায় সে দিন রাতে ওই ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে, ভ্যান রিকশায় চাপিয়ে এক যুবকের দেহ বের করে নিয়ে যাচ্ছে বেবি, তাঁর ভাই ও মা। তবে অভিযুক্তেরা ধরা পড়লেও কী কারণে এবং কী ভাবে খুন হলেন ওই যুবক সেটা এখনও অজানা।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সেটা জানার জন্যই ধৃতদের মঙ্গলবার সিউড়ি আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’’ সরকারি আইনজীবী কেশব দেওয়াসী বলেন, ‘‘ধৃতদের সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়ে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আর্জি জানিয়েছিল পুলিশ। বিচারক ধৃতদের তিন দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।’’

Crime Murder Police Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy