তিথি দাস। নিজস্ব চিত্র
বাবার তেলেভাজার দোকান। মা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকার কাজ করেন। দু’কামরার টিনের ছাউনির মাটির ঘর। মল্লারপুর থানার প্রত্যন্ত গ্রাম তালোয়া-র এই পরিবার থেকে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেলেন তিথি দাস। সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় (নিট) তিথি ওবিসি শ্রেণিতে ১২ হাজার স্থান পেয়েছেন। তিথির এই সাফল্যে খুশি গ্রামবাসী ও আত্মীয়েরা।
তিথি বর্তমানে বিএসসি নার্সিংয়ের পড়ুয়া। তবে নিটে সুযোগ পাওয়ায় নার্সিং কোর্সটি ছেড়ে দেবেন। এই সাফল্যের পিছনে কঠোর পরিশ্রম এবং লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে চলার জন্য বাবা-মায়ের অবদানই প্রধান বলে জানিয়েছেন তিথি।
দ্বারকা নদের ধারে মল্লারপুর থানার তালোয়া গ্রাম। গ্রামের প্রায় মাঝে তিথিদের বাড়ি। বাড়ির বারান্দায় ২৫ বছর ধরে তেলেভাজার দোকান চালাচ্ছেন তাঁর বাবা অমল দাস। বিকেল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত দোকান চলে। এক সময়ে ভাল আয় হলেও, লকডাউন পর্বে গ্রামে আরও কয়েকটি দোকান চালু হওয়ায়, আয় অনেকটা কমে গিয়েছে বলে জানান তিনি। ওই আয় থেকেই দু’ছেলে-মেয়ের জন্য পড়াশোনার খরচ চালিয়ে গিয়েছেন। দশ বছর আগে দুর্ঘটনায় অমলের বাঁ পা ভাঙে। চলাফেরার ক্ষমতা কমে যায়। বেশি ক্ষণ বসে থাকতেও সমস্যা হয় বলে জানান অমল। তাই তেলেভাজার দোকানে বসতে হত তিথিকেও। পড়ার ফাঁকে সময় পেলেই বাবাকে সাহায্য করতেন।
গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পরে রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবন থেকে ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিথি। ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে থাকলেও ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারেননি তিনি। তবে বাড়িতে বসেই আড়াই বছরের প্যারা-মেডিক্যাল কোর্স শেষ করেন। ডাক্তারি পড়ার জন্য নিটে বসার প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেন।
তিথি জানান, এক বছর আগেআট হাজার টাকা খরচ করে মুম্বইয়ের একটি সংস্থার অনলাইনে কোচিংয়ে ভর্তি হন। অনলাইনে সকাল ছ’টা থেকে আট ঘণ্টা পড়তে হত। শনি এবং রবিবার পরীক্ষা হত। এই কোচিং তাঁকে বেশ সাহায্য করেছে বলেজানান তিথি।
গ্রামবাসী শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিথির লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ এই সাফল্য এনে দিয়েছে। আমরা খুবই খুশি এবং গর্ব অনুভব করছি।’’ তবে অমল বলেন, ‘‘অভাবের সংসারে মেয়ে নিজের পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় সফল হয়েছে। এখন ডাক্তারি পড়ার খরচ কী ভাবে জোগাড় করব সেই চিন্তায় আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy