Advertisement
E-Paper

শৌচাগার কেন নোংরা, ক্ষুব্ধ ডিএম

অপরিচ্ছন্নতা, উদাসীনতার মতো নানা অভিযোগ এত দিন তুলতেন রোগীর পরিজনেরা। এ বার সে সব চাক্ষুষ করে বাঁকুড়ার নতুন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বিরক্তি প্রকাশ করলেন। শুধু তাই নয়, সমস্যা সমাধানে কিছু কড়া পদক্ষেপও করলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০১:১৫
সরেজমিন: ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে শৌচাগারের হাল দেখতে সটান ঢুকে পড়লেন নতুন জেলাশাসক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

সরেজমিন: ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে শৌচাগারের হাল দেখতে সটান ঢুকে পড়লেন নতুন জেলাশাসক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

অপরিচ্ছন্নতা, উদাসীনতার মতো নানা অভিযোগ এত দিন তুলতেন রোগীর পরিজনেরা। এ বার সে সব চাক্ষুষ করে বাঁকুড়ার নতুন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বিরক্তি প্রকাশ করলেন। শুধু তাই নয়, সমস্যা সমাধানে কিছু কড়া পদক্ষেপও করলেন।

তিনি নিজে একজন ডাক্তার। ফলে নতুন জেলাশাসকের কাছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল যে বিশেষ গুরুত্ব পাবে, তা নিয়ে অনেকেই এক মত ছিলেন। হলও তাই। জেলায় আসার দু’দিনের মধ্যেই শনিবার ঘণ্টা চারেক ধরে বাঁকুড়ার জেলাশাসক মেডিক্যালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে রান্নাঘর সরেজমিন ঘুরে দেখলেন। রোগীদের কাছেও সমস্যার খোঁজ নিলেন। পরে সেই সব সমস্যার কারণ ও সমাধান নিয়ে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশদে কথাও বললেন তিনি। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তার এমন হঠাৎ পরিদর্শনে আশাবাদী ভুক্তভোগী রোগীর পরিজনেরা।

কালো বেড়াল

সকাল ১০টা নগাদ মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালাকে নিয়ে হাসপাতাল সুপার শুভেন্দুবিকাশ সাহার অফিসে ঢুকেই জেলাশাসক ওয়ার্ডের দিকে পা বাড়ান। কিন্তু, গোড়াতেই গলদ। তাল কাটল অস্থিশল্য ওয়ার্ডে। টেবিলের তলায় কালো বেড়াল দেখেই অসন্তুষ্ট হন প্রশাসনের কর্তারা। প্রমাদ গোনেন হাসপাতালের কর্তারাও। সুপারকে জেলাশাসক বলেন, “হাসপাতালে বেড়াল ঢুকছে! এ সব বন্ধ করতে হবে।”

অপরিচ্ছন্নতা

হাসপাতালের পুরুষ শল্য বিভাগের শৌচাগার নিয়মিত সাফ হয় না বলে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। সে দিকেও নজর পড়ে জেলাশাসকের। নিজে সটান বাথরুমের ভিতরে ঢুকে পড়েন। দুর্গন্ধ ও নোংরা দেখে তাঁর প্রশ্ন, “সাফাই কি হয় না?’’ ওই ওয়ার্ডে নার্সদের কাছে জানতে চান, “এই অবস্থা কেন? আপনার বাড়ির লোকজন এমন বাথরুম ব্যবহার করতে পারবেন?” এরপরেই তিনি সাফাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তকে সতর্ক করে শো-কজ করতে নির্দেশ দেন। ততক্ষণে চলে এসেছিলেন ওয়ার্ড মাস্টার। তিনি আদৌ ওয়ার্ডে আসেন কি না জানতে চান জেলাশাসক। পরে সুপার বলেন, ‘‘ওয়ার্ড মাস্টারকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কেমন হচ্ছে, তা নিয়ে রিপোর্টও পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। হাসপাতাল চত্বরে জমা জল দেখেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন জেলা শাসক।’’

ছুটি কেন

সিসিইউ যাওয়ার পথে জেলাশাসকের কাছে হন্তদন্ত হয়ে এলেন হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা এক প্রৌঢ়। তিনি অভিযোগ করেন, হাত ভেঙেছে। ডিজিটাল এক্স-রে করাতে হবে। কিন্তু, টেকনিশিয়ান না থাকায়, তা হচ্ছে না। তা শুনেই মুখ গম্ভীর হয়ে যায় জেলাশাসকের। সুপারের কাছে জানতে চান, “আজ ছুটি নয়, তা হলে টেকনিশিয়ান কেন আসেননি? এক জন টেকনিশিয়ান ছুটি নিলেও তাঁর বদলে অন্য কেউ নেই কেন?’’ পরে সুপার খোঁজ নিয়ে জানান, ‘‘মেশিন খারাপ বলে ডিজিটাল এক্স-রে বন্ধ।’’ তাঁর আশ্বাস, শীঘ্রই চালু করা হবে।

মেঝেয় রোগী

শয্যায় জায়গা না পেয়ে মেঝেতে রোগীদের পড়ে থাকা নিয়ে বেশ কয়েকমাস আগে সরব হয়েছিলেন সাংসদ মুনমুন সেন। কিন্তু, পরিস্থিতি যে বদলায়নি, এ দিন জেলাশাসকের মেডিসিন এবং স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগ পরিদর্শনে ফের সামনে এল। জেলাশাসক হাসপাতালের কর্তাদের নির্দেশ দেন, ওই রোগীদের যতটা সম্ভব শয্যা দেওয়ার যেন চেষ্টা করা হয়। স্থায়ী সমাধানের ভাবনাও তিনি শুরু করে দিয়েছেন। পরে তিনি বলেন, “রোগীদের সব থেকে বেশি ভিড় দেখলাম মেডিসিন বিভাগে। সেখানে কিছুটা জায়গা বাড়িয়ে বাড়তি শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এ জন্য হাসপাতালের কিছু বাড়তি ঘরও ব্যবহারের ভাবনা রয়েছে।’’

ব্লাড ব্যাঙ্কে ঢুঁ

রক্তের জোগান নিয়েও মাঝে মধ্যেই সঙ্কট দেখা দেয়। তাই ওয়ার্ড ঘুরেই জেলাশাসক সেখানে গিয়ে এ দিন কোন গ্রুপের রক্তের মজুত কেমন, তা খোঁজ নেন। দালাল চক্রও রয়েছে কি, না জানতে চান। গ্রীষ্মকালে রক্তের সঙ্কটের কথা জেলাশাসককে জানান ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। ওই সমস্যা মেটাতে নিয়মিত যাতে রক্তদান শিবির করা হয়, তা দেখতে মহকুমাশাসককে নির্দেশ দেন জেলাশাসক। মহকুমাশাসক বলেন, “শিবির যাতে রুটিন মাফিক হয়, সে জন্য রক্তদানকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আমি আলোচনা করব।”

রান্না কেমন

রোগীদের খাবারের মান যাচাই করতে হাসপাতালের ক্যান্টিনে গেলেন জেলাশাসক। কী কী খাবার দেওয়া হয়, তাও জানতে চান। স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের রোগীদের কাছেও খাবারের মান নিয়ে খোঁজ নেন তিনি। রোগীরা অবশ্য তাঁর সামনে খাবার নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি।

ফিরে গিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘শুধু ডাক্তারদের একক প্রচেষ্টায় হাসপাতাল সুন্দর হবে না। সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।” তবে তাঁর নজর জেলার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই বলে জানাচ্ছেন তিনি। জেলাশাসক বলেন, “শুধু বাঁকুড়া মেডিক্যালই নয়, জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পরিদর্শন চলবে সপ্তাহে সপ্তাহে। আমি নিজে যাব। বিডিও বা জয়েন্ট বিডিওরাও যাবেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে।”

Bankura Sammilani Medical College Inspection District Magistrate Toilet Unclean
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy