Advertisement
০৯ মে ২০২৪
tourism

Matir Srishti: মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের সঙ্গে জুড়ছে পর্যটনও

বদড়া গ্রামে ১২ একর খাস জমির সঙ্গে কিছু রায়তি জমি জুড়ে গড়ে উঠছে একের পরে এক এমনই প্রকল্প।

পুঞ্চার বদড়ায়।

পুঞ্চার বদড়ায়। নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল ও সমীর দত্ত
পুরুলিয়া ও পুঞ্চা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৯
Share: Save:

গাছে গাছে উড়ছে প্রজাপতি। ঘুরে দেখাতে দেখাতে মানিক দাস, বুদ্ধদেব দাস গড়গড় করে বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘প্লেন টাইগার প্রজাপতি আকন্দ গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার কমন লাইম প্রজাপতি কী খায় বলুন তো? লেবু পাতা ছাড়া, কিছুই ওদের মুখে রোচেনা।’’ প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ নন, তাঁরা পুরুলিয়ার পুঞ্চার লাখরা পঞ্চায়েতের বদড়া গ্রামের স্বনির্ভর দলের সদস্য। মাস তিনেকের প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরাই এখন সেখানে প্রজাপতি বাগানের ‘গাইড’।

বদড়া গ্রামে ১২ একর খাস জমির সঙ্গে কিছু রায়তি জমি জুড়ে গড়ে উঠছে একের পরে এক এমনই প্রকল্প। সেখানে প্রজাপতি-বাগান, শিশুদের পার্ক, খালের জলে মাছ চাষ ও নৌকাবিহার, খামারে হাঁস প্রতিপালন, ভেষজগাছের বাগান থেকে আনাজের চাষ শুরু হয়েছে। অথচ, এক বছর আগে এই জায়গা ছিল অনুর্বর, কাঁকুরে জমি। ভোলবদলের নেপথ্যে ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্প। কাজ করছে পড়াশিগোড়া, চিটাগোড়া, বদড়া, ধাদকিগোড়া গ্রামের সাতটি স্বনির্ভর দলের ৮৪টি পরিবার। গত এক বছরে একশো দিনের প্রকল্পে এই সব স্থায়ী সম্পদ তৈরি হয়ে চলেছে। আয়ও হচ্ছে, জানান পড়াশিগোড়ার উর্মিলা সরেন, চিটাগোড়ার সত্যবতী সরেনরা।

লাখরা পঞ্চায়েতের এগজ়িকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট গৌতম দাস বলেন, ‘‘খবর পেয়ে গত শীতেই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। শুধু নৌকা চালিয়েই পঞ্চায়েতের ঘরে ১৮ হাজার টাকা এসেছে। হাজার ছয়েক গাছে আনারস ধরেছে। বিক্রির টাকার অধিকাংশ স্বনির্ভর দল পাবে।’’ ‘বদড়া মা কালী মহিলা সমিতি’র নেত্রী চন্দনা সিং জানান, সম্প্রতি কুমড়ো বিক্রি করে ৫,৯০০ টাকা আয় হয়েছে। এ বার ওই জমিতে আদা, ওল, হলুদ বুনেছেন। ডিমের জন্য আনা হয়েছে প্রায় তিনশো ‘ইন্ডিয়ান রানার’ প্রজাতির হাঁস। ভেষজ বাগানের জমিতে সুগন্ধির কাজে ব্যবহৃত সিট্রোনেলা ঘাসের চাষ হচ্ছে। দ্রুত কাঠ পেতে সোনাঝুরির পরিবর্তে পরীক্ষামূলক ভাবে মেলিয়াডুবিয়া গাছ লাগানো হয়েছে।

বদড়া গ্রামের আজাদ আনসারি ও সফিক আনসারি ভিন্‌ রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। লকডাউনের পরে, আর ফিরে যেতে হয়নি। দু’জনে বলেন, ‘‘সেখানে দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরি পেতাম। পরিশ্রমও ছিল। এখানে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে কাজ করে মাসে হাজার ছয়েক টাকা রোজগার হচ্ছে। মজুরি কম হলেও পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছি, এটাও কম নয়।’’

বিডিও (পুঞ্চা) অনিন্দ্য ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘লাখরা পঞ্চায়েতের মাটির সৃষ্টি প্রকল্প এবং মানবাজারের দোলাডাঙা, বান্দোয়ানের দুয়ারসিনি, বরাবাজারের ঝর্নাকোচা— সব মিলিয়ে ট্যুরিস্ট সার্কিট গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলাস্তরে এ নিয়ে কথা হয়েছে।’’ জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে কাজ হওয়া কিছু জায়গায় আপাতত আমরা ‘ডে স্টে’-র ভাবনা নিয়েছি। সেখানে দিনের বেলা কাটিয়ে ঘোরাঘুরি করে খাওয়া করে পর্যটকেরা ফিরতে পারবেন। তা থেকে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদজস্যেরা আর্থিক ভাবে উপকৃত হবেন।’’

এর সুফল নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে দ্বিমত তৈরি হয়েছে। পুঞ্চার সিপিএম নেতা বিপত্তারণ শেখরবাবু ও বিজেপি নেতা জনপ্রিয় ঘোষদের দাবি, ‘‘এ সবই গিমিক। লাখরা পঞ্চায়েতের ওই কাজ আসলে সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের পকেট ভরানোর ফাঁদ।’’ অভিযোগ উড়িয়ে সুজয়বাবুর দাবি, ‘‘এলাকা ঘুরে কাজ দেখুন। তার পরে মন্তব্য করবেন।’’

কাশীপুরের বিজেপি বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদাও বলেন, ‘‘যে লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ হচ্ছে, তা যদি বাস্তবায়িত হয়, মানুষ যদি কাজ পান, আয়ের পথ যদি খোলে, তা হলে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব।’’ সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, পাহাড়পুরে মানুষকে বঞ্চিত করে যন্ত্র নিয়ে মাটি কাটার অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। তবে জেলাশাসকের দাবি, ‘‘পাথর থাকলে কোদাল, গাঁইতিতে কাটা যাবে না। নিয়ম মেনে সেখানে যন্ত্র দিয়ে দিঘি কাটছে ওয়াটার রিসোর্স ইনভেস্টিগেশন ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট। আবার সেখানে তিনটি পুকুর মানুষই খুঁড়েছেন।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় অবশ্য মানছেন, ‘‘পাহাড়পুরের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে প্রশাসন যে কাজ করছে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এ কাজ যেন থমকে না যায়। যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই মানুষকে কাজ দিতে এ ধরনের প্রকল্প নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE