এক জন শিশু-অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হোক বা শিশুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া কোনও অন্যায়ের প্রতিবিধান। আইন করে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষ্যই হচ্ছে শিশুর অধিকার সুরক্ষিত করা। সেই কারণেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বদলেছে জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট এবং পক্সো (প্রোটেকশন অফ চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সসুয়াল অফেন্স) আইনগুলি।
সমস্যা হল আইন থাকলেও এ কাজের সঙ্গে যুক্তেরা সেই আইনের অন্তর্নিহিত অর্থ এবং খুঁটিনাটি না জানায়, অথবা অবহেলা করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হয় শিশুর অধিকার। এঁদের মধ্যে রয়েছেন জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড মেম্বার, পুলিশ, চাইল্ডলাইন, শিশু সুরক্ষা কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী— সকলেই। সকলকে নিয়েই মঙ্গলবার থেকে দু’দিনের একটি ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিউড়ি প্রশাসনিক ভবনে।
কেন এই আইনগুলির অনুপুঙ্খ জানা জরুরি, কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে ঠিক কী পদক্ষেপ নিতে হবে, কেন শিশুদের নিয়ে কাজ করার সময় দায়িত্ব সচেতন ও মানবিক হওয়া জরুরি— এমন নানা বিষয় উঠে এসেছে প্রশিক্ষণ শিবিরে। জেলা প্রশাসনিক কার্যালয়ে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরের সূচনা অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত
সুধীর কুমার, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন), সিডব্লউসি-র চেয়ারম্যান নিরুপম সিংহ প্রমুখ। আর ছিলেন রাজ্য চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটির মেম্বার তথা প্রশিক্ষক জয়দেব মজুমদার, জ্যুডিশায়ল সায়েন্সের অধ্যাপক এস এ খান।
প্রশিক্ষকেরা জানালেন, এক জন শিশু বা অপ্রাপ্তবয়ষ্কের বিরুদ্ধে যখন কোনও অপরাধ সংগঠিত করার বা যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠে, সেই দায় একক ভাবে সেই শিশু বা অপ্রাপ্তবয়ষ্কের নয়। দায় তার পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রেরও। কারণ যে যত্ন, দায়িত্ব এবং শিক্ষা শিশুকে বড় করে তোলার কথা, সেখান থেকে কোনও না কোনও ভাবে বিচ্যুত হয়েছে তার পরিবার, সমাজ অথবা রাষ্ট্র। তাই অপরাধ জগতে যুক্ত হলেও মূল উদ্দেশ্য সেই অভিযুক্ত বা যুক্ত শিশুটিকে (১৮ পর্যন্ত) সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া (নির্ভয়া কাণ্ডের পর খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে বয়সটা কিছু কমানো হয়েছে)। এ ছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংবেদশীল ভাবে অভিযুক্তদের নিয়ে এগোতে হবে সব পক্ষকেই।
একই ভাবে কোনও শিশুর সঙ্গে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি বিধান রয়েছে পক্সো অ্যাক্টে। যা সমাজের প্রতি কড়া বার্তা দেয়। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার বলছেন, ‘‘এমন প্রশিক্ষণ শিবির খুব উপযোগী।’’