E-Paper

ভিত গড়েছিলেন, সেই শিক্ষককে শ্রদ্ধার্ঘ্য 

এমন আয়োজনে চোখে জল এল শিক্ষকেরও। কথা বলতে গিয়ে কখনও হারিয়ে গেলেন স্মৃতির অতলে, কখনও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবেগে চোখ ভরে এল।

সৌরভ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৫ ০৮:১৮
শিক্ষক বারিদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষক বারিদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র Tapas Banerjee

১৯৮২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়েছিল তাঁদের। সিউড়ির সরোজবাসিনী শিশুভবন থেকে নিজের নিজের মতো উচ্চশিক্ষার পথে পা বাড়িয়েছিলেন শুভাশিস ধর, মনোজ আগরওয়াল, পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়, গায়ত্রী রায়, ব্রততী চট্টোপাধ্যায়রা। স্কুল বদলেছে, কারও কারও শহরও বদলে গিয়েছে, কিন্তু মনের কোণে কোথাও একটা থেকে গিয়েছিলেন প্রথম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বারিদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই, সকলে একত্রিত হয়ে স্কুল ছাড়ার ৪৩ বছর পর অশীতিপর সেই প্রধান শিক্ষককে সংবর্ধনা জানালেন তাঁরা।

এমন আয়োজনে চোখে জল এল শিক্ষকেরও। কথা বলতে গিয়ে কখনও হারিয়ে গেলেন স্মৃতির অতলে, কখনও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবেগে চোখ ভরে এল। কখনও আবার হতাশা প্রকাশিত হল এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও। আয়োজকদের তরফে শুভাশিস ধর বললেন, “আজকে জীবনে যা করেছি, যেটুকু করেছি, তার ভিত তৈরি করে দিয়েছেন আমাদের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আমার মতো আরও অনেকেই এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। মাস্টারমশাইয়ের প্রতি সেই কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকেই আমরা এই আয়োজন করেছিলাম। তাঁর প্রতি এটা আমাদের একটা ছোট্ট শ্রদ্ধার্ঘ্য।”

সিউড়ির সরোজবাসিনী শিশুভবনে দীর্ঘকাল প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন বারিদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বহু কৃতি ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশোনার ভিত তৈরি হয়েছে তাঁর হাত ধরেই৷ তবে এখন বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। শিক্ষা ও শিক্ষকদের নিয়ে নানা ভাবনা থাকলেও, তা আর খুব একটা প্রকাশ করেন না। তবে নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে তাঁর গর্বের অন্ত নেই। সেই ছাত্র-ছাত্রীদেরই একাংশ রবিবার সন্ধ্যায় এক অভিনব সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন শিক্ষককে নিয়ে। সিউড়ির একটি বেসরকারি হোটেলে কনফারেন্স হল বুক করে চলল স্মৃতিচারণা ও খাওয়া দাওয়ার পালা। প্রিয় শিক্ষকের হাতে ছবি, ছাতা, ছড়ি ও নানান উপহার তুলে দিলেন এক সময়ের খুদে শিক্ষার্থীরা। ৪৩ বছর আগের সেই ছাত্র-ছাত্রীদের অনেককে এখন আর চিনতেও পারলেন না ৮৩ বছরের এই শিক্ষক। কিন্তু তাঁদের এই আয়োজনে এক অমলিন আনন্দের হাসি লেগেছিল তাঁর মুখে। বললেন, “ওদের এই আয়োজন আমার কাছেও এক বিরাট উপহার। একসময়ের ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েগুলো এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।”

এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষা নিয়ে বিতর্কের বিষয়েও মুখ খোলেন বারিদবরণ। তিনি বলেন, “এখন বেশি বেশি নম্বরের লক্ষ্যে সবাই দৌড়চ্ছে। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে এখন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এত কমে যাচ্ছে, এর দায় প্রত্যেককেই নিতে হবে।’’ তাঁর অনুভব, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষকের দায় তো আছেই, অভিভাবকেরাও এখন ইঁদুর দৌড়ে শামিল হয়ে প্রকৃত শিক্ষা থেকে শিশুকে বঞ্চিত করছেন।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা ও শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছে। এমন আলোচনা একজন শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত পীড়া দেয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দেখে নয়, শিশুদের সঙ্গে মিশে যাওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা থাকলে, তবেই তাঁর শিক্ষক হওয়া উচিত। এই যোগ্যতার মধ্যেই এক ধরনের সততা ও নিষ্ঠা আছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy