Advertisement
২১ মে ২০২৪
Tushar Kanti Bhattyacharya

তুষার ফের তৃণমূলেই

২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি লড়েছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। কয়েকমাস পরেই যোগ দেন তৃণমূলে। লোকসভা ভোটের পরে, যান বিজেপিতে। এ বার  ফের তৃণমূলে।

তৃণমূলেই ফিরলেন তুষার

তৃণমূলেই ফিরলেন তুষার

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২০ ০২:৪৮
Share: Save:

দলবদলে ‘নজির গড়ে’ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য তৃণমূলে ফিরলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি লড়েছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। কয়েকমাস পরেই যোগ দেন তৃণমূলে। লোকসভা ভোটের পরে, যান বিজেপিতে। এ বার ফের তৃণমূলে।

শুক্রবার বাঁকুড়ার তৃণমূল ভবনে ঘাসফুলের পতাকা হাতে নিয়ে তুষারবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমার কোনও রাগ ছিল না। কিছু অভিমান ছিল, যা সমাধান হয়ে গিয়েছে।’’ বিজেপি কেন ছাড়লেন? তুষারকান্তিবাবুর জবাব, “ওই দলে কাজ করার কোনও সুযোগই পাচ্ছিলাম না।” তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘উনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, বিজেপিতেই আছেন। দল ছেড়েছেন বলে জানি না।’’

এ দিন জনা ত্রিশ অনুগামীকে নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, দলের চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যালের উপস্থিতিতে তৃণমূলের ঝান্ডা ফের হাতে তুলে নেন তুষারবাবু। বলেন, ‘‘নিজের পুরনো দলে ফিরে ভাল লাগছে।” বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হরকালী প্রতিহারের অবশ্য অভিযোগ, “বিধায়ক হিসেবে বিষ্ণুপুরবাসীর কোনও উপকারই উনি করেননি। দীর্ঘ লকডাউনে বিজেপি কর্মীরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের এই কর্মসূচিতে বিধায়ক কোনও রকম সহযোগিতা করেননি। বিশেষ উদ্দেশ্যে বিজেপিতে এসেছিলেন, তা না মেটায় তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন তিনি।’’

তুষারবাবুকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল শিবির। শ্যামলবাবু বলেন, “তুষারদা অভিজ্ঞ মানুষ। দলকে তাঁর এখনও অনেক কিছুই দেওয়ার রয়েছে।” শুভাশিসবাবুও বলেন, “তুষারবাবুর ভাবমূর্তি বিষ্ণুপুরের মানুষের কাছে খুবই ভাল। তাই তাঁকে আবার আমরা ফিরে পাওয়ায় বিষ্ণুপুরে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে সুবিধা হবে।”

তৃণমূলের প্রতি এক সময়ে অভিমান জমে থাকার কথা দাবি করলেও , কী নিয়ে সে অভিমান, তা অবশ্য খোলসা করেননি তুষারবাবু। তবে দলের একাংশের মতে, তুষারবাবু বিষ্ণুপুরের কিছু তৃণমূল নেতাকে উদ্দেশ্য করেই সেই অভিমান বোঝাতে চেয়েছেন।

জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিষ্ণুপুরের রাজনীতিতে তুষারবাবু ও শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের ‘বিরোধ’ সুবিদিত। এক সময় এই দুই নেতা কংগ্রেস পরিচালিত বিষ্ণুপুর পুরসভায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে তুষারবাবু সরে যান, উঠে আসেন শ্যামবাবু। তবে দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা তুষারবাবু ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামবাবুকে পরাজিত করে সবাইকে চমকে দেন। তাতে দু’জনের যে ‘দ্বন্দ্ব’ ছিল, তা বাড়ে। বিধায়ক হওয়ায় মাসখানেকের মধ্যেই তুষারবাবু তৃণমূল শিবিরে আসায় ‘দ্বন্দ্ব’ বড় আকার নেয়। যার প্রভাব পড়ে দলের সাংগঠনিক কাজেও। রাজনৈতিক খুনোখুনির ঘটনাতেও নেতাদের দুই গোষ্ঠীর নাম জড়িয়ে যায়। দলের রাজ্য নেতারা বার বার ‘দ্বন্দ্ব’ মেটাতে উদ্যোগী হলেও তাঁদের দূরত্ব ঘোচেনি।

লোকসভা ভোটের পরে, তুষারবাবু দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে গেরুয়া পতাকা হাতে নিলেও, বিষ্ণুপুরে দলের স্থানীয় নেতৃত্ব তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ ছিলেন। পরবর্তীতেও বিষ্ণুপুরে বিজেপির কর্মসূচিতে তাঁকে বিশেষ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ফের বিষ্ণুপুরর তৃণমূলের রাশ চলে আসে শ্যামবাবুর হাতে। তুষারপন্থী তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরও ফের শ্যামবাবুর আশপাশে দেখা যেতে শুরু করে। শ্যামবাবু হন তৃণমূলের বিষ্ণুপুর ব্লক সভাপতি।

কিন্তু ইদানীং তাঁর কিছু কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন জেলা নেতৃত্বের একাংশ। তাই তুষারবাবুর তৃণমূলের ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

শ্যামবাবু এ দিন বলেন, “তুষারবাবুর তৃণমূল ফিরছেন বলে খবর আমার কাছে ছিল না। পরে অন্য সূত্র মারফত জেনেছি। রাজ্য নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবেন, সে ভাবেই চলব। আমার কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই।” তুষারবাবুও বলেন, “জনসংযোগ গড়ে তুলে বিষ্ণুপুরে তৃণমূলের সংগঠন মজবুত করতে চাই। দলের নির্দেশ মতো কাজ করব।”

বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ তথা বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁয়ের কটাক্ষ, ‘‘তুষারবাবু গিয়েছেন, শ্যামবাবু চলে আসবেন। কে এল, কে গেল— তা নিয়ে আমরা ভাবিত নই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tushar Kanti Bhattayacharya TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE