Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Visva Bharati University Plaque Controversy

শান্তিনিকেতনে বিদ্যুতের বসানো সেই ফলক সরাতে বলল কেন্দ্র, কী কী রয়েছে নির্দেশিকায়

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আগের ফলক সরিয়ে নতুন একটি ফলক বসাতে বলা হয়েছে। তাতে কী লেখা হবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। নতুন ফলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কিংবা উপাচার্যের নাম থাকবে না।

Union Education ministry has asked Visva Bharati University to remove controversial plaque

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কি ফলক। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১৬
Share: Save:

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত ফলক সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তার পরিবর্তে নতুন ফলক বসাতে বলা হয়েছে। তাতে কী লেখা হবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। নতুন ফলকে আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নাম থাকবে না।

নতুন ফলকে লেখার জন্য একটি ছোটখাটো অনুচ্ছেদ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই ইংরাজি অনুচ্ছেদটিকে বাংলা এবং হিন্দিতে অনুবাদ করা হবে। ইংরাজি, বাংলা এবং হিন্দি— তিন ভাষাতেই ওই অনুচ্ছেদ বিশ্বভারতীর নতুন ফলকে লেখা থাকবে। তেমন ভাবেই নতুন ফলক প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।

ইংরাজি অনুচ্ছেদটিকে বাকি দুই ভাষায় অনুবাদ এবং ফলক তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। ছয় সদস্যের ওই কমিটিতে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন বিভাগীয় প্রধান এবং দু’জন ইসির সদস্য।

নতুন ফলকের জন্য কেন্দ্রের পাঠানো অনুচ্ছেদে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ছোটখাটো বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে। বলা হয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯০১ সালের গ্রামীণ বাংলায় স্থাপিত হয়েছিল। ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি অনুযায়ী সর্বজনীন মানবতার পাঠ পড়ানো হত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এখানে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের ভাবধারার বিনিময় হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বশান্তির ভাবনাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য এবং জ্ঞানের সাধনায় সারা বিশ্বকে এক ছাতার তলায় ধরে আনা হয়েছে বিশ্বভারতীতে।

সম্প্রতি বিশ্বভারতীকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। সেই স্বীকৃতির একটি ফলক নির্মাণ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যাতে প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথের নাম কোথাও ছিল না। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের নেতানেত্রীরা বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে ফলক প্রসঙ্গে আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কড়া সমালোচনা করেন। তাঁর নির্দেশে বীরভূম জেলা তৃণমূলের তরফে ফলক সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয় শান্তিনিকেতনে। পরে বিজেপি নেতৃত্বও রবীন্দ্রনাথের নাম বাদ দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। এর মাঝে উপাচার্য হিসাবের বিদ্যুতের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন অন্তর্বর্তী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। ফলক বিতর্কে এ বার হস্তক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার।

এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নিজের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ফলক তৈরি করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে তৈলমর্দন করে মেয়াদবৃদ্ধির চেষ্টায় ছিলেন তিনি। ফলক তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও জানানো হয়নি। সেই ফলক বিতর্কের অবসান হল। আশা করি আগামী দিনে যে ফলক তৈরি হবে, তাতে বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী, আবাসিক, শান্তিনিকেতনবাসীর আবেগকে সম্মান জানানো হবে।’’

বিশ্বভারতীর কর্মীসভার প্রাক্তন নেতা তৃণমূলের গগন সরকার বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটাই চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৪ দিন আন্দোলন করতে হল, এটা লজ্জার। দেরিতে হলেও যে কেন্দ্রের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, এতে আমরা খুশি।’’

বিশ্বভারতীয় আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শান্তিনিকেতন ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নন, এমন দু’জন ব্যক্তির নাম ফলকে ছিল। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আশা করব নতুন ফলকে রবি ঠাকুরের নামটা থাকবে।’’

বিশ্বভারতী ট্রাস্টের সভাপতি অনিল কোনার বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের জন্যই তো ইউনেসকো স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্য কারও জন্য নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের নির্দেশিকায় আমরা সকলে খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE