E-Paper

গ্রীষ্মকাল জুড়েই চলে দামোদরের নৌকোবিহার

সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যাকে ‘মন্দিরের গ্রাম’ বলা হয়। গ্রামের অলি-গলিতে রয়েছে নানা দেবদেবীর মন্দির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৫ ০৯:৩৪
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গরমের প্রকোপ থেকে বাঁচতে গঙ্গাজলে নৌকাবিহার করেন ‘দামোদর’। সোনায় বাঁধানো রুপোর ময়ূরপঙ্খি নৌকয় চেপে দিনভর গঙ্গার হাওয়া খান দামোদর, তারপর ফের সন্ধ্যায় নিজের সিংহাসনে উঠে বসেন তিনি। গ্রীষ্মকালজুড়েই এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। শতাব্দী প্রাচীন এই রীতি আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয় কড়িধ্যার সেন বাড়িতে। সময় বদলেছে, পরিস্থিতিও বদলেছে কিন্তু অন্তত সাড়ে তিনশো বছর আগের এই রীতির কোনও বদল ঘটেনি এখনও।

সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যাকে ‘মন্দিরের গ্রাম’ বলা হয়। গ্রামের অলি-গলিতে রয়েছে নানা দেবদেবীর মন্দির। তার মধ্যে অনেক মন্দিরেরই বয়স শতাধিক। এক সময় এই পুরো এলাকার জমিদারি ছিল সেন বংশের হাতে। তাঁদের পূর্বপুরুষেরাই গ্রাম তৈরি করেছিলেন দামোদরের মন্দির। মন্দিরের নানা আচার-বিচার নিয়ে বহু কিংবদন্তি প্রচলিত। তার মধ্যে গ্রীষ্মকালে দামোদরের নৌকোবিহারের বিষয়টি অন্যতম।

এখন সেন বাড়ির জীবিত সদস্যদের মধ্যে বাড়ির অন্যতম বয়ঃজ্যেষ্ঠ মহিলা ভারতী সেন জানান, এই বংশের এক পূর্বপুরুষ রামসুন্দর সেন মুর্শিদাবাদের নবাবের দেওয়ান ছিলেন। নবাবি ঠাঁটবাটও ছিল পুরোদস্তুর। নিজের কাজ সেরে প্রতিদিন মুর্শিদাবাদের গঙ্গায় নৌকো বিহার করতেন দেওয়ান রামসুন্দর। একদিন হঠাৎই স্বপ্নাদেশ পান তিনি।

সেন বাড়ির সদস্যরা জানান, কুলদেবতা দামোদর রামসুন্দরের স্বপ্নে এসে আক্ষেপ জানান, ‘তুই গঙ্গায় নৌকাবিহার করছিস, আর আমি গরমে খুব কষ্ট পাচ্ছি’। তারপরেই দামোদরের নৌকাবিহারের ব্যবস্থা করেন দেওয়ান। তবে সত্যিই যে দামোদরকে কোনও গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়, এমনটা নয়। মন্দিরের ভিতরেই একটি ৬ ফুট বাই ৪ ফুট তামার পুকুর তৈরি করেছিলেন রামসুন্দর। সেটিকেই গঙ্গাজলে পূর্ণ করে সেখানে একটি সোনায় বাঁধানো রুপোর ময়ূরপঙ্খি সিংহাসনে বসিয়ে নৌকোবিহার করানো শুরু হয় দামোদরকে। সেই প্রথাই আজও বর্তমান।

প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি থেকে রথযাত্রার দিন পর্যন্ত রোজ সকাল ন’টার মধ্যে সোনার সিংহাসন থেকে নামিয়ে নৌকোয় চাপানো হয় দামোদর ও শ্রীধরের শালগ্রাম শিলা। এরপর দিনভর চলে বিহার। বিকেল ৩টে নাগাদ ভোগ নিবেদনের পরে ফের সিংহাসনে ফিরে যান দামোদর শিলা।

ভারতী সেন বলেন, “আগে যখন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না, তখন নৌকোবিহারের সময় পাখার হাওয়া করতে হত। বাড়ির মহিলারাই পালা করে সে কাজ করতেন। এখন মন্দিরে দিনভর পাখা চলে বলে আর হাতপাখার ব্যবহার হয় না। তবে বাকি নিয়ম অপরিবর্তিতই। বৃন্দাবনে দামোদরের সেবায় যে ভোগ নিবেদন করা হয়, সে ভোগই নিবেদিত হয় আমাদের মন্দিরেও। এই তিন মাস প্রচুর ভক্ত দামোদরের নৌকোবিহার দর্শনেও আসেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy