Advertisement
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

রাখি বেঁধে ঘুচে গেল মনখারাপ

আদ্রার মণিপুর গ্রামে অরুণোদয় শিশু নিকেতন হোমে এ দিন গণ-রাখিবন্ধন উৎসব হয়েছে। সেখানে রাখি হাতে ঘুরছিল যমুনাও। যমুনা মাঝি। বাড়ি মণিপুর গ্রামেই। কুষ্ঠরোগাক্রান্ত পরিবারে দিন গুজরান হয় টানাটানিতে।

বন্ধন: উৎসবে শামিল আদ্রার হোমের আবাসিকেরা। নিজস্ব চিত্র

বন্ধন: উৎসবে শামিল আদ্রার হোমের আবাসিকেরা। নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
আদ্রা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

মাসখানেক আগে নিজের বিয়ে রুখে দিয়ে সটান হোমে এসে উঠেছে সাধনা মাহাতো। তার মনের জোরের খবর সবাই জানেন। কিন্তু বরাবর রাখির দিনটা এলেই কেমন যেন কষ্ট হত! সাধনার ভাই ছিল না কোনও। এখন অবশ্য তার অনেক ভাই। এই তো, রবিবার হোমের কত জনের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়ে পুঞ্চার কেন্দাডি গ্রামের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাধনা বলছে, ‘‘আমার আর কোনও মনখারাপ নেই।’’

আদ্রার মণিপুর গ্রামে অরুণোদয় শিশু নিকেতন হোমে এ দিন গণ-রাখিবন্ধন উৎসব হয়েছে। সেখানে রাখি হাতে ঘুরছিল যমুনাও। যমুনা মাঝি। বাড়ি মণিপুর গ্রামেই। কুষ্ঠরোগাক্রান্ত পরিবারে দিন গুজরান হয় টানাটানিতে। যমুনা হোমে থেকে পড়াশোনা করছে। জীবনে ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধতে না পারার দুঃখ ঘুচে তার মুখে ঝলমল করছিল আলো।

কয়েক বছর ধরেই আদ্রার অরুণোদয় শিশু নিকেতনে ভাইফোঁটা আর রাখির দিনে উৎসব হচ্ছে। হোম কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, টাকার টানাটানি আছে বটে, কিন্তু তাঁরা থামেননি। সাধ্যের মধ্যেই যতটা বড় করে সম্ভব অনুষ্ঠান হয়। রবিবার সকাল থেকেই ছিল সাজ সাজ রব। বেলা বাড়তেই গমগম করে ওঠে ঘর।

হোমে এসেই জীবনে প্রথম রাখি পরার আনন্দ পেল সঞ্জয় লোহার আর পলাশ সাউ। অনাথ সঞ্জয়কে আদ্রা স্টেশন থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে আরপিএফ। আর পলাশকে রঘুনাথপুর শহর থেকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর ব্লক প্রশাসন পাঠিয়েছে হোমে। তারা বলে, ‘‘ভীষণ আনন্দ হচ্ছে আজ!’’

আনন্দের সঙ্গে ছিল প্রাপ্তিযোগও। হোমে এসেছিলেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর এবং আড়রা পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান মধুসূদন দাস। সবার জন্য তাঁরা এনেছিলেন চকোলেট। উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা নবকুমার দাস বলেন, ‘‘হোমে যারা থাকে, তাদের অনেকেই অনাথ। কারও পরিবার থাকলেও যোগাযোগ কার্যত নেই বললেই চলে। পরিবারে ভাই-বোনের মধ্যে যে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আমরাও সেটাই ওদের মধ্যে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। এই আয়োজন তারই একটা অঙ্গ।’’

নবকুমার জানান, হোমের আবাসিকদের সঙ্গে রাখি বাঁধায় শামিল হয়েছিলেন গ্রামের দু’শো জন। তাঁদের মধ্যে ষাট জন মেয়ে। অন্যরা ছেলে। ভাইয়েরা সবাই মিলে শপথ নিয়েছে, বিপদে বোনেদের পাশে দাঁড়াতে পিছপা হবে না তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Rakhi Rakshabandhan Mind
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy