Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সারা রাত লিপিকায় ‘আটক’ উপাচার্য

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে উপাচার্য রজতকান্ত রায়ের সঙ্গে কর্মিসভার দ্বন্দ্বে বেশ কিছুদিন বিশ্বভারতীতে অচলাবস্থা জারি ছিল।

‘আটক’ উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সবুজকলি সেনেরা। নিজস্ব চিত্র

‘আটক’ উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সবুজকলি সেনেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০০:৪০
Share: Save:

নাছোড় ছিল দু’পক্ষই। বিশ্বভারতীতে ভর্তির আবেদন ও ভর্তির ক্ষেত্রে ফি-বৃদ্ধি নিয়ে শুরু হওয়া অচলাবস্থা কাটাতে মঙ্গলবার দুপুর তিনটে থেকে যে বৈঠকের সূত্রপাত হয়, বুধবার বেলা চারটে নাগাদ প্রায় ২৫ ঘণ্টা পেরিয়ে তার সমাধান সূত্র মিলল।

তার আগে অবশ্য আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের বেনজির বিক্ষোভ দেখল বিশ্বভারতী। সারা রাত লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে আটকে রাখা হল উপাচার্য-সহ বিশ্বভারতীর অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং আধিকারিকদের। রাতভর লিপিকার গেটের বাইরে অবস্থান-বিক্ষোভ বসে থাকলেন আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা। তুললেন স্লোগান। সকালে অধ্যাপকেরা বেরোতে চাইলে পড়ুয়াদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি বাধল। একাধিক অধ্যাপক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে দু’জনকে নিয়ে যেতে হল। কিছু ছাত্রীও আঘাত পেলেন। পরিস্থিতি বুঝে বন্ধ হয়ে গেল বুধবারের নির্ধারিত সেমেস্টারের পরীক্ষা।

পড়ুয়াদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের দিন দশেকের টানাপড়েনের শেষে এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ ঘেরাও মুক্ত হয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, এ বারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন-ফি একই থাকছে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে কোনও পরিবর্তন করা হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, যে কোনও কোর্সেরই প্রথম বর্ষে এ বার যাঁরা ভর্তি হবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মোট ফি থেকে ১০০০ টাকা করে কম নেওয়া হবে। তৃতীয়ত, সার্ক এবং নন-সার্কভুক্ত দেশের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে আবেদন-ফি কী হবে, তা নিয়ে আগামী ২৫ মে রিভিউ কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত জানার পর বিশ্বভারতী ছাত্র-ছাত্রী ঐক্যের পক্ষে ফাল্গুনী পানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের আন্দোলন যে সম্পূর্ণ সফল তা বলব না, আংশিক সফল হয়েছি। তবে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র ও নিরাপত্তার অভাব দিন দিন বাড়ছে। তা নিয়েও আগামী দিনে বড় আন্দোলনে নামব।’’

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে উপাচার্য রজতকান্ত রায়ের সঙ্গে কর্মিসভার দ্বন্দ্বে বেশ কিছুদিন বিশ্বভারতীতে অচলাবস্থা জারি ছিল। আবার সুশান্ত দত্তগুপ্ত উপাচার্য থাকাকালীন একটানা কয়েক ঘণ্টা ঘেরাও করা হয়েছিল সুশান্তবাবু-সহ বিশ্বভারতীর একাধিক আধিকারিককে। তবে পড়ুয়াদের আন্দোলনে উপাচার্য-সহ শতাধিক আধিকারিক এবং অধ্যাপককে প্রায় ২৫ ঘণ্টা এক জায়গায় আটকে রাখার নজির প্রথম তৈরি হল বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

গত ৮ মে এ বছর বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ভারতীয় আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে আবেদন-ফি দ্বিগুণ এবং সার্ক ও নন-সার্কভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে তা দশগুণ হওয়ার বিষয়টি তখনই নজরে আসে। পড়ুয়ারা জানতে পারেন, নতুনদের ক্ষেত্রে ভর্তি-ফিও বাড়বে। এর পরেই তৈরি হয় ‘বিশ্বভারতী ছাত্র-ছাত্রী ঐক্য’। ফি-বৃদ্ধি নিয়ে এ যাবৎ যতগুলি আন্দোলন হয়েছে, সব ওই মঞ্চের ব্যানারেই হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা পথে নেমেছেন, পোস্টার সাঁটিয়েছেন, দেওয়াল লিখেছেন, গলা উঁচিয়ে স্লোগানও তুলেছেন বারবার। কিন্তু, সমাধানসূত্র বেরোয়নি। কর্তৃপক্ষ এবং আন্দোলনকারীরা—দু’পক্ষই ছিলেন নিজের নিজের অবস্থানে অনড়।

শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার দুপুরে লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে আলোচনায় বসেন কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য, কর্মসচিব, বিশ্বভারতীর অন্যান্য আধিকারিক, কর্মসমিতির প্রবীণ সদস্য, প্রতিটি ভবনের অধ্যক্ষ, বিভাগীয় প্রধান, সেন্ট্রাল অ্যাডমিশন কমিটির সদস্য, অ্যাডমিশন কো-অর্ডিনেশন সেলের সদস্য সকলেই উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও প্রত্যেকটি ভবন থেকে একজন করে পড়ুয়া প্রতিনিধি হিসেবে এবং আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মধ্যে থেকে ৮০ জন বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে কোনও নির্দিষ্ট সমাধান সূত্র না মেলায় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে শুরু হয় ঘেরাও।

সব শেষে দু’পক্ষই মানছেন আংশিক হলেও জয় হয়েছে তাঁদের। সবচেয়ে বড় বিষয়, অচলাবস্থা কাটায় স্বস্তি ফিরেছে আশ্রমে। ২৫ তারিখ কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE