Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অবসরে উপহার গ্রামবাসীর

বেঞ্চাবনি গ্রামের বাসিন্দা ছায়া মাঝি, তিতালি মাহাতো, বনানী মাহাতোরা এ দিন বিকেলে অনুষ্ঠান মঞ্চের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শ্রাবণ মাসের চাষের মরসুমে কৃষি শ্রমিকদের কেউই ঘরে বসে থাকেন না। সেই হিসেবে এই দিনটা গ্রামের ইতিহাসে এক প্রকার ব্যতিক্রম।

শ্রদ্ধা: অনুষ্ঠানের পরে স্কুলে সুনীলবাবু। নিজস্ব চিত্র।

শ্রদ্ধা: অনুষ্ঠানের পরে স্কুলে সুনীলবাবু। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০৭:১০
Share: Save:

সকাল থেকে গ্রামে সাজ সাজ রব। মানবাজার থানার বেঞ্চাবনি গ্রামে ১২০টি পরিবারের বাস। বেশির ভাগ বাসিন্দাই কৃষি শ্রমিক। সোমবার গ্রামের কেউ কাজে যাননি। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ দিন অবসর নেবেন। সকাল থেকে গ্রামের বাসিন্দারা তারই তোড়জোড় করতে ব্যস্ত। মঞ্চ, মাইক, চেয়ার, টেবিল, উপহার, চায়ের ব্যবস্থা— কোনও আয়োজনই বাকি নেই। আর সবটাই গ্রামের বাসিন্দারা মজুরির টাকা বাঁচিয়ে করেছেন।

বেঞ্চাবনি গ্রামের বাসিন্দা ছায়া মাঝি, তিতালি মাহাতো, বনানী মাহাতোরা এ দিন বিকেলে অনুষ্ঠান মঞ্চের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শ্রাবণ মাসের চাষের মরসুমে কৃষি শ্রমিকদের কেউই ঘরে বসে থাকেন না। সেই হিসেবে এই দিনটা গ্রামের ইতিহাসে এক প্রকার ব্যতিক্রম। ছায়া, তিতালি, বনানীরা বলেন, ‘‘মাস্টারমশাই আমাদের গ্রামের চেহারাটাই পাল্টে দিয়েছেন। তিনি আজ চলে যাবেন। তার জন্যে আমরা এটুকু করব না?’’

বেঞ্চাবনি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীলবরণ মুখুটি সোমবার অবসর গ্রহণ করেছেন। এলাকার প্রায় সবাই তাঁকে চেনেন এক ডাকে। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন হাইস্কুল শিক্ষক বঙ্কিম মাহাতো, সমাজকর্মী নিমাই হাঁসদা, প্রাক্তন ছাত্র উজ্বল মাহাতোরা বলেন, ‘‘সুনীলবাবু ২০০০ সালে স্কুলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে পঠনপাঠন, খেলাধুলা এবং পরিকাঠামোর অনেক উন্নতি হয়েছে। এই স্কুলে তাঁর অবদান অনেক।’’ স্কুল সুত্রে জানা গিয়েছে, নির্মল বাংলা, শিশু মিত্র-সহ বেশ কিছু পুরস্কার সুনীলবাবুর আমলে এসেছে স্কুলে। এখন সেখানে প্রতিদিন খবরের কাগজের শিরোনাম পাঠ করে পড়ুয়াদের সাম্প্রতিক খবর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাখা হয়। স্কুলে শৌচালয়, বিশুদ্ধ পানীয় জল, আলো, পাখা, খেলার সরঞ্জাম, বই— খুঁটিনাটি অনেক কিছুই নিজে উদ্যোগী হয়ে গড়ে তুলেছেন সুনীলবাবু। তৈরি করেছেন ভেষজ বাগান, খেলার মাঠ। অবসরের দিনও সুনীলবাবু ক্লাস নিয়েছেন বিকেল ৩টে পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘‘বিদায় অনুষ্ঠানের নামে ক্লাস বন্ধ থাকবে এটা আমি চাই না। ক্লাস না হলে ছাত্রদের ক্ষতি হয়ে যাবে।’’

এ দিন কাছের প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন হাইস্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা সুনীলবাবুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বরাবাজারের লাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক শরৎ প্রামাণিক বলেন, ‘‘গ্রামের সবার এই শ্রদ্ধা আর ভালবাসার চেয়ে শিক্ষক জীবনে বড় পুরস্কার কী হতে পারে!’’

সুনীলবাবুর সঙ্গে অনুষ্ঠানে ছিলেন তাঁর স্ত্রী আভাদেবীও। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ ওকে এত ভালবাসেন, সেটা না এলে জানতেই পারতাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manbazar Educationn মানবাজার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE