E-Paper

জীর্ণ বাড়ি, ১৪ শিবিরে আশ্রয় ২০০ জনের

রবিবার এই শিউলিপাহাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের হাসাপাহাড়ি গ্রামে কাঁচাবাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় দেওয়াল ধসে মৃত্যু হয় ৬৮ বছরের এক বৃদ্ধার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩০
ছাতনার হাসাপাহাড়ির একটি বাড়িতে ফাটল।

ছাতনার হাসাপাহাড়ির একটি বাড়িতে ফাটল। —নিজস্ব চিত্র।

মাটির বাড়ির একপাশ হেলে গিয়েছে, দেওয়ালের অবস্থাও বিপজ্জনক। প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বামীকে নিয়ে রবিবার থেকে রাত কাটাচ্ছেন ছাতনার ঘোষেরগ্রাম পঞ্চায়েতের শিউলি পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা দত্ত। দিনের বেলা শুধু বাড়িতে রান্না-খাওয়া করতে যাচ্ছেন।

এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন ওই গ্রামেরই বধূ অলকা কুম্ভকারেরাও। মাটির বাড়িতে দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। স্বামী কাজ করেন বাইরে। ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাড়ি যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই রাতে আশ্রয় নিচ্ছেন স্থানীয় কমিউনিটি হলে। একই ভাবে পরিবারের দুই শিশু- সহ সাত সদস্যকে নিয়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত কাটাচ্ছেন গুরুপদ মাল। তৃণমূল পরিচালিত ঘোষেরগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শান্তনু কুন্ডু বলেন, ‘‘প্রতিমা, অলকা, গুরুপদদের নাম কেন্দ্রের আবাস প্লাস তালিকায় রয়েছে। অথচ পাকা বাড়ি না হওয়ায় তাঁদের রাত কাটাতে হচ্ছে বাড়ির বাইরে।’’

রবিবার এই শিউলিপাহাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের হাসাপাহাড়ি গ্রামে কাঁচাবাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় দেওয়াল ধসে মৃত্যু হয় ৬৮ বছরের এক বৃদ্ধার। শনিবার পরিত্যক্ত একটি কাঁচাবাড়ির দেওয়াল ধসে বিষ্ণুপুরে মৃত্যু হয় তিন শিশুর।

এর পরেই রাজ্য সরকারের নির্দেশে প্রশাসন বিপজ্জনক বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছে। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের হিসেব, সোমবার পর্যন্ত বিষ্ণুপুর, সিমলাপাল, ছাতনা-সহ কয়েকটি ব্লকে ১৪টি নিরাপদ স্থানে প্রায় ২০০ জনকে তুলে আনা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত কয়েক দিনের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জেলা জুড়ে ৩৭৫টি কাঁচাবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৩৭২টি কাঁচাবাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের দাবি, খতিয়ে দেখলে হয়তো দেখা যাবে, ক্ষতিগ্রস্ত ও ভেঙে যাওয়া বাড়িগুলির বেশির ভাগ মালিকের নামই আবাস প্লাস প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকায় রয়েছে।

দুর্ঘটনার পর থেকেই রাজ্যে আবাস প্লাস প্রকল্প থমকে থাকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা মুখপাত্র মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কেবল রাজনৈতিক স্বার্থে আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছে, যার ফল ভুগতে হচ্ছে এই সাধারণ গরিব মানুষদের।” ছাতনার বিজেপি বিধায়ক সত্যরানারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা মন্তব্য, “কেন্দ্র বহু আগেই রাজ্যকে আবাস যোজনার আড়াই হাজার কোটি টাকা পাঠিয়ে রেখেছে। সেই টাকা খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই ঘর পাননি এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য মানুষজনগুলি।”

তবে রাজনৈতিক তরজার ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিমা, গুরুপদদের প্রশ্ন, “আর কতদিন এ ভাবে ঝুঁকি নিয়ে বাঁচতে হবে আমাদের?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

bankura

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy